ভাতের মজা কিছুতেই পাই না। গন্তব্য ২৪ কিলোমিটার। যাত্রাকাল এক ঘন্টা বিশ মিনিট। ক্লাস করতে যাব কলেজে। যাতায়াতের উপায় অনেকগুলো।
বাসে করে, মেক্সি করে, বেবিটেম্পু বা নসিমনে করে। আর বাবার পয়সা থাকলে মোটর সাইকেল কিনে তাতে যাতায়াত। পেছনে জুটে যাবে মাগনা প্যাসেঞ্জার!
তো, যাদের বাবার পয়সা ছিল না তাদের কলেজে যাবার একমাত্র উপায় লোকাল বাস। ভাড়া ছিল আট টাকা। ছাত্রদের জন্য হাফ, অর্থাৎ চার টাকা! স্টুডেন্ট কার্ডের কোন বালাই ছিল না, হাতে বই খাতার একটা কিছু থাকলেই হত।
বাসের কন্ডাক্টারদের অধিকাংশই ছিল কালো অক্ষর মহিষ বরাবর। কোনদিন সেই বই খাতা খুলে দেখার সাহস দেখায় নি।
সেই ২৪ কিলোমিটার রাস্তাটা ছিল না শেষ হওয়ার মতন। উন্নয়নের নামে বেচারা রাস্তার চাঁমড়া ছিলে রাখা হয় প্রায় দুই বছর। বাসের সামনের দিককার সিটগুলো বরাদ্ধ ছিল মহিলা যাত্রীদের জন্য।
তার পরের সারিগুলোয় ছিল প্রেমিক পুরুষ রহিম মিয়াদের দখলে!! মুরব্বিদের কে সম্মান করে বাসের মাঝখানের সিটগুলোতে বসতে দেয়া হত। মফস্বল এলাকার মুরব্বিদের সম্মান অনেক! কারন তাদের ছেলে মেয়েরাই তো ইস্কুল কলেজে পড়তে যেত। পাড়াত মেয়েদের গার্জিয়ানদের ছেলেরা একটু এক্সট্রা কেয়ার করেই থাকে। আর সেসব ইস্কুল কলেজের মাস্টারমশাই, দিদিমনিরা ও সেই সব বাসে করেই যাওয়া আসা করতেন। বাসের পেছনদিকটায় যারা বসত তারাই বুঝত আসল মজা! ব্রিটিশ আমলের লোকাল বাস, সামনের আর জানালার কাঁচ ছাড়া বাকি সব পিওর কাঠের তৈরী।
রোদে পুড়ে, বৃষ্ঠিতে ভিজে সেই পিওর কাঠের প্রান যায়যায় অবস্থা। পুরো বাস জুড়ে সে কি কেতকেতানির আওয়াজ। আর ঝাঁকুনি কাকে বলে। পেছনের কারোর মাথা পর্যন্ত ঠেকে যেত ছাদে গিয়ে। আমি সামনে সিট না পেয়ে অনেকদিন পেছনে বসেছি, তাই হারে হারে টের পেয়ে গেছি মুঁড়ির টিন কি জিনিস!
আমি যেই মুঁড়ির টিনে করে কলেজে যাওয়াটা বেশি পছন্দ করতাম তার নাম ছিল সম্রাট।
আমাদের বাসার সামনেই ছিল সেই বাস মালিকের বাসা। বয়স্ক বৃদ্ধ লোক, ইংল্যান্ডে থাকতেন। বছরে কয়েকবার দেশে বেড়াতে আসতেন। শখের বসে উনি কয়েকটা লোকাল বাস কিনেন। নিজের ছেলেদের নামে নাম রাখেন সব কটি বাসের।
উনার বড় ছেলের নাম ছিল সম্রাট। তাই প্রথম কেনা বাসটির নাম রাখেন সম্রাট। উনার বাসার ভেতর অনেক খালি জায়গা ছিল যেখানে আমরা বিকেলবেলা খেলতে যেতাম। সেই সুবাদে উনার সঙ্গে ভাল ভাব জমে উঠে। ঘটনাক্রমে তিনি জানতে পারেন যে আমি বাসে করে কলেজে পড়তে যাই।
একদিন সম্রাট বাসের চালক আর কন্ডক্টারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাদেরকে বললেন, কলেজে যাওয়ার সময় তারা যেন আমার কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা না নেয়!
তারপর থেকে সম্রাট বাসে বেশি একটা চড়েছি বলে মনে পড়ে না। তবে যতবার চড়েছি ততবার অনেক চেষ্টা করেও ভাড়াটা দিতে পারি নি।
সেই ভদ্রলোক মারা গেছেন দশ বছর আগে। আজকে এই পোস্টটি লিখতে গিয়ে উনার কথা মনে পড়ল।
আসলে সরাসরি উনার কথা মনে পড়েনি। আমার এক বন্ধু আছে যার নাম সম্রাট। গতকাল সম্রাটের সঙ্গে কথা বলার সময় কেন জানি সেই বাসটির কথা মনে পড়ে গেল।
বিঃ দ্রঃ আমার দোস্ত সম্রাটের সঙ্গে মুঁড়ির টিন নামক বাসের কোন মিল নেই। আর যদি সেটা থেকেই থাকে তাহলে সেটা নিছক কাকতাল মাত্র!!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।