আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আধুনিকোত্তর (পোস্ট-মডার্ণ) যুগে ভালবাসা (১৮+)

হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ণ মানব সভ্যতা কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফরাসী বিপ্লব, ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের ধারা ধরে যে মডার্ণ যুগের সুচনা হয়েছিল, তথ্য-প্রযুক্তি সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অভূতপুর্ব উন্নতি সেই আধুনিক যুগ থেকেও এগিয়ে গেছে অনেকখানি। এই সময়ের সমাজ বিজ্ঞানী/তাত্বিকগণ এই যুগ কে বলছেন পোস্ট মডার্ণ (আধুনিকোত্তর) যুগ। আধুনিকায়নের সাথে মানুষের পরিবারিক জীবন, দাম্পত্য সম্পর্ক, নারী-পুরুষের অন্তরংগ সম্পর্ক, ভালবাসা-প্রেম-পরিণয়-ডিভোর্স ইত্যাদি বিষয়ক ধারণা ও আচরনে ক্রমাগত পরিবর্তন এসেছে।

সেই পরিবর্তন ভাল-না মন্দ সেটা আমার আজকের লিখার বিচার্য নয়, আমাদের সবারই সে বিষয়ে নিজস্ব মতামত আছে, যে ধর্ম ও সমাজের সংস্পর্শে আমরা বড় হয়ে উঠেছি, যে ধরনের শিক্ষা আমরা পেয়েছি সেভাবেই আমরা এটাকে মুল্যায়ণ করব। বর্তমান পশ্চিমা সমাজের আধুনিকোত্তর সময়ের ভালোবাসা সম্পর্ককে সমাজবিজ্ঞানীরা কিভাবে ব্যাখা করছেন, সেটি নিয়ে দুটি কথা লিখব। এদের বক্তব্য প্রধানত তাদের সমাজ নিয়েই লিখা। কিন্তু আমরা তো ততটা আধুনিক হইনি কিন্তু পশ্চিমা সমাজের আধুনিকোত্তর ভালবাসার প্রভাব নিশ্চয় আমাদের সমাজেও পড়া শুরু করেছে। এটির স্বরুপ জানবার জন্য ছোট একটা জরীপ করতে চাই, এটা মুলত আমার অধ্যায়নগত (একাডেমিক) উদ্দেশ্যে দরকার।

সে বিষয়ে আপনাদের সাহায্য দরকার, আর সে কারনেই এই লিখাটির অবতারণা। আগে তত্বগুলি দেখে নেইঃ গিডেন্স (Anthony Giddens)নামে একজন সমাজ বিজ্ঞানী বর্তমান সময়ের (পোস্ট-মডার্ণ) ভালবাসাকে বলছেন প্লাস্টিক সেক্সুয়ালিটি। তার মতে এই প্রথম নারীর যৌন-দাসত্বের মুক্তি ঘটে তা উপভোগের বিষয়ে পরিনত হয়েছে। কারণ এখন যৌনতা তাকে গর্ভ ধারন এবং বাচ্চা মানুষ করবার দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে। চাকরি তথা উপার্জন করা, সমাজের বিভিন্ন পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নারীকে ক্ষমতায়ন করেছে।

এর কারনে নারীর আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদাও বেড়ে গেছে। সে যখন একজন সংগী থেকে পরিপুর্ণ সুখ পেতে ব্যর্থ হয় তখন সে সহজেই অন্য সংগীর খোজ করে। এমন কি পুরো পুরুষ জাতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নারী-নারী ইন্টিমেট সম্পর্কের দিকে ঝুকছে। একই রকম প্রবনতা দেখা যায় পুরুষের মধ্যেও। যৌনতা কে নিজের মত করে উপভোগ করার এই ফ্লেক্সিবিলিটি থেকে “প্লাস্টিক সেক্সুয়ালিটি” শব্দটি এসেছে।

এর ফলশ্রুতিতে বেড়েছে বিবাহ-পুর্ব যৌন সম্পর্ক ও পরকীয়ার মত ঘটনা। বাড়ছে ডিভোর্স, স্টেপ প্যারেন্টিং, সিঙ্গেল মাদার পরিবার প্রভৃতি। বেক (ulrich beck)নামের একজন সমাজ বিজ্ঞানী বর্তমান সময়ের (পোস্ট-মডার্ণ) ভালবাসাকে বলছেন “গোলমেলে ভালবাসা” (chaotic love), নারী-পুরুষ দুইজনে ঘরের বাইরে কাজ করেন অথচ বেশীর ভাব ক্ষেত্রে ঘরের কাজগুলো নারীকে একাই সামলাতে হয়। ব্যক্তি সম্পর্কের অধিক গনতান্ত্রিকতার প্রভাব (আমার যা খুশী তাই করব) দুইজনের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ, বাড়ে ডিভোর্সের মত ঘটনা। ডিভোর্সী নারী-পুরুষ উভয়েই এক সময় আবার বিয়ে করেন, আবার হয়ত ডিভোর্স হয়, হয়ত আবার বিয়ে (এখানে বিয়ে আর লিভিং টুগেদার একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে)।

এভাবে শেষ না থাকা এক লুপে পড়ে যায় মানুষের ভালবাসা ও পরিবার জীবন, সুখের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয় মরিচীকার পিছনে, তৈরী হয় স্টেপ প্যারেন্টিং, সিঙ্গেল প্যারেন্ট ফ্যামিলি, অভিভাবকহীন বাচ্চা, তোমার-আমার-আমাদের (এমন পরিবার যেখানে স্ত্রীর আগের ঘরের ১টা, স্বামীর আগের ঘরের ১ টা আর তাদের বর্তমান সংসারের ১ টাঃ এই হচ্ছে “তোমার-আমার-আমাদের”) বাচ্চা সহ পরিবার তৈরী হয়। উনি এটাকেই বলছেন “গোলমেলে ভালবাসা” (chaotic love)। বাউমান (Zygmunt Bauman ) নামের আরেকজন এটা কে ব্যাখা করেছেন “তরল ভালোবাসা”(Liquid love). তার মতে বর্তমান সময়ে মানুষের বন্ধন আলগা হয়ে গেছে (ঠিক যেমন কঠিন পদার্থের অনুগুলির বন্ধন আলগা হয়ে তা তরল পদার্থে পরিণত হয়)। উনি যে শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা হলো semi-detached সম্পর্ক। কাছের মানুষগুলি দূরে চলে গেছে, কাছে থেকেও যেন কাছে নেই, বন্ধন আলগা, যেন অন্য আকর্ষন তাকে টানছে।

তাই এই যুগের ভালোবাসাও হয়ে গেছে তরল। তরল পদার্থ যেমন যে পাত্র রাখা যায় তারই রুপ ধারন করে তেমনি বর্তমান ভালোবাসাও, যেখানে সুখ মনে হচ্ছে সেকাহ্নেই ছুটে যাচ্ছে, সংগীর প্রতি কোন কমিটমেন্ট নাই, কারো জন্য অপেক্ষার সুযোগ নাই। কাছের মানুষের চেয়ে যেন ফেসবুকের অচেনা বন্ধুর টান বেশী। মন খারাপের কথাটি কাছের মানুষের সাথে শেয়ার না করে ফেসবুকে লিখছি, কাছের মানুষের দুঃখে না কেঁদে ফেসবুকের অচেনা বন্ধু বা বান্ধবীর বানানো দুঃখে কেঁদে আকুল হচ্ছি। উনি বর্তমান সময়ের এই ভালবাসার আরো একটি নাম দিয়েছেন তা হলো “উপরের পকেটের ভালবাসা” (Top pocket love). শার্টের উপরের পকেটে আমরা সেই জিনিষই রাখি যা সহজলভ্য, হারিয়ে গেলে অনুতাপ কম হয় কারন সহজেই তার প্রতিস্থাপন পাওয়া যায়।

বর্তমান সময়ের ভালবাসাও তাই, হারিয়ে গেলে কোন সমস্যা নাই, আরেকটি খুজে নাও। আপাতত তত্ব কথা এখানেই শেষ। এ নিয়ে নিশ্চয় আরো তত্ব আছে। আপনারাও নিশ্চয়ই আরো অনেক বেশী জানেন। এই লিখাটা আমার একটা সাহায্য চাওয়ার ভুমিকা মাত্র।

আমার যে সাহায্য দরকারঃ এই আধুনিকোত্তর ভালবাসার ছোয়া আমাদের সমাজেও লেগেছে। পরকীয়ার জন্য স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্যের সাথে চলে যাওয়া, এমন কি সন্তান হত্যার মত ঘটনাও ঘটছে। মোবাইল ফোন, ফেসবুক ও ইন্টারনেটের কল্যাণে এ রকম “তরল ভালবাসার” বিস্তার ঘটছে। এরই একটি রুপ দেখবার জন্য, আমরা এটা কে কিভাবে দেখছি, আমরা এর কতটুকু জানি তা বুঝবার জন্য আমি ছোট একটি জরীপ করতে চাই। আমার আনুমানিক ৫০ জনের একটা স্বেচ্ছাসেবী দল লাগবে যারা এই জরীপে অংশ নিবেন।

বিশেষ করে তরুন সমাজ (বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র) রেসপন্স বেশি প্রত্যাশিত। যেখানে সর্বোচ্চ ১০টি প্রশ্ন থাকবে যার বেশির ভাগের উত্তর আপনার এক-দুই শব্দে দিতে পারবেন। আপনাদের পুর্ণ নাম-ঠিকানা দেবার দরকার নেই, দিলেও তা সম্পুর্ন গোপন থাকবে। যারা জরীপে অংশ নিতে চান মন্তব্যের ঘরে তাদের ই-মেইল দিলে অথবা ঠিকানায় জানালে আমি প্রশ্ন পাঠিয়ে দেব। আশা করি আপনারা আমাকে নিরাশ করবেন না।

আর মোবাইল ফোন বা ফেসবুক কিভাবে আমাদের দেশের সমাজে বিশেষ করে সমাজের ইন্টিমেট রিলাশন কে প্রভাবিত করছে এ সংক্রান্ত খবর বা ব্লগের লিংক থাকলে তা যদি শেয়ার করেন তাও আমার কাজে লাগবে। আপনার সাহায্যের জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।