আমি পেশায় একজন স্পীচ থেরাপিষ্ট কিন্তু ব্লগ পড়া আমার নেশা। আর একটা নেশা আছে সেটা হল মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস প্রতিটা মানুষের কাছে পৌছে দেয়া। আমি সে চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। আমি কোন ভালো লেখক নই কিন্তু আমি একজন ভালো পাঠক। অকুপেশনাল থেরাপী হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি স্বীকৃত বিভাগ এবং একটি আধুনিক স্বাস্থ্য সেবামূলক পেশা যেখানে শারীরিক বা মানসিক ভাবে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজে যথাসম্ভব সর্বাধিক সাবলম্বী (স্বনির্ভর) করার উদ্দেশ্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
অকুপেশনাল থেরাপী চিকিৎসার মাধ্যমঃ
ডাক্তাররা যেমন চিকিৎসার মাধ্যম হিসাবে ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন, অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা তেমনি বিভিন্ন উদ্দ্যেশমূলক কাজ , শারীরিক ব্যায়াম , বিশেষ সহায়ক সামগ্রির ব্যবহার, নৈপূণ্য প্রশিক্ষন, রোগীর পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নয়ন এবং বিকল্প কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে দৈনন্দিন কাজে সর্বাধিক স্বাবল¤ী^ হতে সাহায্য করে থাকেন।
অকুপেশনাল থেরাপীর ইতিহাসঃ
অতি প্রাচীনকাল থেকেই কাজ’ চিকিৎসার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন মিশর, গ্রিস ও রোম সভ্যতার ইতিহাসে মানসিক রোগীদের জন্য আনন্দদায়ক কাজের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে পেশা হিসাবে অকুপেশনাল থেরাপীর সূচনা হয় উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মানসিক রোগীদের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মানুষের চিকিৎসায় সমগ্র ইউরোপ এবং আমেরিকায় অকুপেশনাল থেরাপীর চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র পৃথিবীতে অকুপেশনাল থেরাপী বিস্তার লাভ করে ।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই যুদ্ধাহত মানষের চিকিৎসার প্রয়োজনে তৎকালীন RIHD (বর্তমান NITOR) এ অকুপেশনাল থেরাপী কোর্স চালু হয়। ১৯৭৬ সালে ৩ জন গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর দূর্ভাগ্যজনকভাবে কোর্সটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাভারস্থ পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পূনর্বাসন কেন্দ্র, সি আর পি’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ্ প্রফেসন্স ইনস্টিটিউট (BHPI)’এ ১৯৯৩ সালে অকুপেশনাল থেরাপী অ্যাসিস্টেন্ট কোর্স, ১৯৯৫ সালে ড়িপ্লোমা কোর্স এবং ১৯৯৯ সালে বি এস সি (অনার্স) ইন অকুপেশনাল থেরাপী কোর্স চালু হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্র সমূহঃ
শারীরিক, মানসিক, চিন্তা বা উপলব্ধিগত, পরিবেশগত কিংবা সামাজিক কারণে দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে নির্ভরশীল, সমস্যাগ্রস্থ কিংবা অক্ষম যে কেউই অকুপেশনাল থেরাপী চিকিৎসা সেবায় উপকৃত হতে পারেন।
অকুপেশনাল থেরাপিস্টগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন এমন কিছু অতি পরিচিত রোগের নাম নিচে উল্লেখ করা হল-
øায়ুরোগ বিষয়ক (ঘবঁৎড়ষড়মরপধষ ঈড়হফরঃরড়হ)- স্ট্রোক, মস্তিস্কে আঘাত, মেরুরজ্জুতে আঘাত, বৃদ্ধদের ক্রমর্ধমান ব্যাধি, øায়ুর আঘাত, প্যারালাইসিস, গুলেন বারি সিন্ড্রোম ইত্যাদি।
শিশুরোগ বিষয়ক - মস্তিস্কে পক্ষাঘাত (Stroke & Paralysis), শিশুদের কঠিন মানসিক পীড়া (Autism), বাকানো পা (Club Feet), ডাউন সিন্ড্রোম, মেরুদন্ডে গর্ত (Spinal Bifida) ইত্যাদি।
পেশী ও হাড় সংক্রান্ত - হাড় ভাঙ্গা, বাত, রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অঙ্গহানি, হাতে আঘাত, আগুনে পোড়া, কোমর ব্যথা ইত্যাদি।
মনোরোগ বিষয়ক- বিষন্নতা, অস্থিরতা, সিজোফ্রেনিয়া, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি, ভগ্ন মনস্কতা ইত্যাদি।
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট হিসাবে কাজের ক্ষেত্র সমূহঃ
উপরিউক্ত রোগসমূহের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করতে পারেন-
সাধারন ও বিশেষায়িত হাসপাতাল
মানসিক হাসপাতাল
মাদকাসক্তি পূনর্বাসন কেন্দ্র
প্রতিবন্ধী পূনর্বাসন কেন্দ্র
বিশেষ শিক্ষা স্কুল
বয়স্কদের পূনর্বাসন কেন্দ্র
প্রাইভেট প্র্যাকটিস
এমনকি আঘাত ও কাজ থেকে সৃষ্ট সমস্যা প্রতিরোধে অকুপেশনাল থেরাপিস্টগণ বড় বড় কল কারখানা ও অফিস সমূহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
১. অকুপেশনাল থেরাপী চিকিৎসার শুরুতেই একজন রোগীর শারীরিক, মানসিক, উপলব্ধি ও চিন্তাগত, তার বাসস্থান ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয় যাকে বলা হয় অ্যাসেসমেন্ট। সংগৃহীত তথ্যের আলোকে তৈরী করা হয় একটি সমস্যা ছক এবং প্রতিটি সমস্যার বিপরীতে নেয়া হয় কিছু স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। দৈনন্দিন কাজে সর্বোচ্চ স্বাবলম্বী করার মূললক্ষ্যকে সামনে রেখে তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়- প্রতিকার মূলক, বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার, সহায়ক সামগ্রী ব্যবহার, শিক্ষা মূলক পদ্ধতির ব্যবহার, রোগ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে প্রতিবন্ধি শিশুর মাকে সচেতন করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্বে অকুপেশনাল থেরাপীঃ
আমাদের দেশে চিকিৎস ক্ষেত্রে শুধু ডাক্তার ও নার্সের উপস্থিতি থাকলেও উন্নত বিশ্বে একজন রোগীকে বিভিন্ন পেশার সমন্বয়ে গঠিত একটি টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। আর অকুপেশনাল থেরাপী বিভিন্ন পেশার এই টিমের একটি স্বীকৃত ও গুরুত্বপূর্ন পেশা।
সমগ্র বিশ্বে এটি একটি জনপ্রিয় এবং চাহিদা সম্পন্ন থেরাপী চিকিৎসা। বিশ্বে প্রায় ৬৫ টি দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট কাজ করছেন এবং এ সংখ্যা চাহিদার সাথে সাথে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় অকুপেশনাল থেরাপী একটি জনপ্রিয় পেশা এবং যুক্তরাজ্যে এটি সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন থেরাপী পেশা।
বাংলাদেশে অকুপেশনাল থেরাপীঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)’র তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ লোক প্রতিবন্ধি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপিস্ট আছেন প্রায় ৫০ জন।
আর তাই বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পাশাপাশি প্রতিবন্ধিদের জন্য নিয়জিত প্রায় শতাধিক বেসরকারী সংস্থায় অকুপেশনাল থেরাপিস্টের রয়েছে ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালেও অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের চাহিদা রয়েছে, এমনকি কিছু হাসপাতালে অকুপেশনাল থেরাপী বিভাগ থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত জনশক্তির অভাবে সরকারী পদ সৃষ্টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।
অকুপেশনাল থেরাপী কোর্স সংক্রান্ত তথ্যাদিঃ
বাংলাদেশে শুধুমাত্র সাভারস্থ সি আর পি’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ্ প্রফেসন্স ইনস্টিটিউট (BHPI)’এ এই কোর্সটি চালু রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।