পকৃিতর মােঝ খুিজ কোন একটা কবিতার একটা লাইন পড়ে হঠাৎ একটা গল্প লিখতে ইচ্ছা হল । এটা আমার প্রথম গল্প ।
কালু ও মাছুম দুই বন্ধু আজ থেকে ৪০ বছর আগে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে মুক্তিযুদ্ধে নৃসংশ ভাবে শহীদ হয়েছিল । এই মৃত্যুতে তাদের কোন অনুশোচনা ছিলনা ছিল একরাশ আশা, দেশ স্বাধীন হবে , দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে , সবাই মিলে এ দেশটাকে উন্নতি করবে । তখন এদেশে থাকবেনা কোন জুলুম নির্যাতন, ক্ষুধা দারিদ্র , সবাই স্বাধীন ভাবে নি:শ্বাস নিবে ।
আজ ৪০ বছর পর কালু ও মাছুমের ইচ্ছা হল নিজের দেশটাকে একটু দেখার । তারা কবরের রক্ষীদের অনুমতি চাইলে প্রথমত দিতে চাইনি পরে স্বাধীন বাংলার কথা শুনে অনুমিত দেয় । সে মোতাবেক তারা দুজন ২৬ শে মার্চ খুব সকালে বের হল দেশ ভ্রমনে প্রথমেই দেখল ছোট বড় নারী পুরুষ সকলের কারো হাতে কারো মাথায় শোভা পাচ্ছে লাল সবুজের পতাকা । বড়ই প্রীত হল দুজনে ।
কালু : বড় ভাল লাগছে রে মাছুম এই একটা লাল সবুজ রং খচিত পতাকার জন্যই তো যুদ্ধ করেছিলাম ।
দিলে শান্তি পালাম ।
মাছুম: আমার ও অনেক আনন্দ লাগছে , কিন্ত ওরা যাচ্ছে কোথায় ?
কালু: চল ঐ ছেলেটিকে জিঙ্গাসা করি , তারা পাশেই দাড়ানো একটি ছেলেকে জিঙ্গাসা করল । ছেলেটি জানাল আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস তাই আমরা স্মৃতি শৌধে যাচ্ছি শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ।
মাছুম : দেখ কালু এত হাজার হাজার মানূষ এত এত ফুল দিয়ে আমাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে , যুদ্ধ করে আমাদের জীবন টা স্বার্থকই হয়েছে ।
কালু: সবাই কি সুন্দর ভাবে একে অপরের হাতে হাত ধরে লাইন দিয়ে ফুল দিচ্ছে সত্যিই আমাদের দেশের মানূষ কত ভাল আর শিক্ষিত ।
এর কিছু পর দেখা গেল সম্পূর্ন বিপরিত চিত্র হঠাৎ করে শুরু হল মারা মারি এক দল আরেক দলকে লাঠি সোটা দিয়ে পেটাচ্ছে , দোকান ভাঙ্গচুর করছে ,আর কিছু ছেলে গাড়ী ভাঙ্গচুর করছে এ দেখে কালু বলল এদেশে একনও পাকিস্থানী আছে ? পাশে থেকে একজন বলল আরে না এরা বাংলাদেশীই এটা শুনে মাছুম বলল আশ্চর্য এই ছাত্র ও যুব সমাজ ৭১ সালে দেশকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছিল তারাই আজ নিজেদেরে মধ্যে মারামারি করছে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে ?
মাছুম : চল অন্য দিকে দেখি এই বলে তারা হাটছে আর বিভীন্ন জিনিস দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে ।
কালু : রাস্তায় অনেক সুন্দর সুন্দর রং বে রংয়ের এত এত গাড়ী মনে হয় দেশটা অনেক উন্নতি হয়েছে
কিন্তু এতক্ষন থেকে জ্যাম লেগে আছে কেন ?
মাছুম : দেখ না কেউ ট্রাফিক সিগনাল মানছে না লাল বাতি জলছে অথচ সবাই আগে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে ।
কালু: সিগনালে দাড়িয়ে আনেক মানূষ ভিক্ষা করছে এ গাড়ী থেকে সে গাড়ী ছোট ছোট ছেলে মেয়ে , বৃদ্ধ বৃদ্ধা ।
মাছুম: এদশে মানূষ এখনও ভিক্ষা করে ? কেউ কেউ দামী গাড়ীতে ঘুরছে আর কেউ শেষ বয়সেও ভিক্ষা করছে !
কালু : ঐ দেখ কত বৃদ্ধ এক চাচা রিক্সা চালাচ্ছে আর তার ছেলের বয়সি একটা ছেলে তার রিক্সায় বসে বসে সিগারেট টানছে । হায়রে মানুষের বিবেক !!
মাছুম : চল সামনে যায় ।
এর পর তারা হাটতে হাটতে বিজয় স্বরনীতে আসল । এখানে এসে দেখল অনেক মানূষ কলসি পাতিল নিয়ে মিছিল করছে । এরা আবার আন্দোলরন করছে কেন ? পাশ থেকে একজন বলল পানির জন্য ।
কালু : আমাদের এই নদী মাতৃক দেশে মানূষ কে পানির জন্যও আন্দোলন করতে হয় ? পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল মিরপুর আর পুরান ঢাকার অবস্থা তো আরো খারাপ ।
মাছুম : চল কালু ফিরে যায় এসব দেখে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।
কালু: দাড়া এসেছি যখন আরো কিছুটা সময় দেখি । এর পর তারা গেল মতিঝিলে , দেখে এখানেও অনেক মানূষ মিছিল করছে । জিঙ্গাসা করায় জানতে পারল শেয়ার বাজারে বিনিঢেয়াগ করে স্বর্বস্ব হারিয়ে ৩০ লক্ষ মানূষ রাস্তায় বসেছে । শেয়ার বাজার জিনিস টা তেমন বুঝল না তারা ।
মাছুম : ৩০ লক্ষ মানূষ ক্ষতিগ্রস্থ ! স্বাধীনতা যুদ্ধেও তো এত মানূষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় নি ।
এরপর তারা সামনে হাটতে হাটতে একটি পত্রিকার স্টল দেখতে ফেল ।
কালু : চল একটু পত্রিকা পড়ি । এই বলে তারা উভয়ে পত্রিকা পড়তে লাগল ।
মাছুম: দেখ কালু এই পত্রিকাই লিখেছে , সমুদ্র জয় , বাংলাদেশ ২০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্র জয় করেছে ।
কালু: এটাতো খুব ভাল খবর ।
কিন্তু এই পত্রিকাটাতে লিখেছে বাংলাদেশে আমেরিকান সৈন্যের অবস্থান । বিশেষজ্ঞ মহলের উদ্বেগ প্রকাশ ।
এাছুম : এটা কিভাবে সম্ভব যুদ্ধ করে এক দেশ কে তাড়িয়েছি এখন আবার এদেরকে কে ঢুকতে দিল তাহলে তো আমাদের দেশের স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরুপ । তাহলে যুদ্ধ করলাম কিসের জন্য স্বাধীন দেশে অন্য দেশের সৈন্য থাকার জন্য !!!
কালু: আর দেখ এই পত্রিকাটাতে লিখেছে ফারাক্কার বাধের পর টিপাই মুখ সহ আরো অনেক নদীর উপর বাধ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে । সচেতন মহলের মতে এটা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীই মরুভূমিতে পরিনত হবে ।
সিউরে উঠে মাছুম ।
মাছুম : দেশের মানূষ কি করছে তাহলে ? মুক্তি যোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি করছে ? কোন প্রতিবাদ করছে না । ??
কালু: পত্রিকা পড়তে আর ভাল লাগছে নারে চল একটু নদীর ধার থেকে ঘুরে আসি । এই বলে তারা বুড়িগঙ্গার তীরে যায় ।
মাছুম : নদীর পানি এত কালো কেন আর এত কম পানি ? আমাদের সময় তো নদীর ভরা যৌবন ও স্বচ্ছ পানি ছিল ।
কালু: চল সন্ধ্যা হয়ে আসছে ফিরে যায়।
মাছুম : হ্যা চল ।
সন্ধ্যা নামে তারা হাটছে এমন সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় চারদিক অন্ধকার হয়ে যায় ।
কালু : কি ব্যাপার রে মাছুম সব অন্ধকার হয়ে গেল কারন কি ? পাশ থেকে বলে একজন বলে উঠল বিদ্যুৎ চলে গেছে ।
কালু:আর আসবে না ?
পথিক: আসবে তবে ঘন্টা দেড়েক পর ।
কালু: কেন ?
পথিক : দেশে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম তাই ঘন্টাই ঘন্টাই বিদ্যুৎ যায় । গরম আর বিদ্যুতের জন্ত্রনায় মানূষের বারোটা বেজে যাচ্ছে । দেশের শিল্প খাত তো বন্ধ হবার উপত্রুম ।
কালু: ৪০ বছরেও বিদ্যুতের সমাধান হয় নি !
মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছে ওরা দুজন এমন সময় দেখে ফুটপাতের উপর অনেক মানূষ শুয়ে আছে । কারো বিছানা নাই বালিশ নাই থাকলেও শত ছিন্ন ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ - বৃদ্ধাও এদের কাতারে আছে ।
দুখিনি মা তার সন্তানকে আগলে রাখার মিথ্যা প্রচেষ্টা করছে । পাশ দিয়ে শত মানূষ হেটে যাচ্ছে কিন্তু কেউ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখছে না । অথচ তারা ছোট বেলায় দেখেছে বাবা চাচারা একে অপরের বিপদে আপদে এগিয়ে আসতে । হঠাৎ মনে হল তাহলে কি তাদের বাবা মা , আত্নীয় স্বজন সবার একই অবস্থা? ৪০ বছর আগে তাদের বাবা মায়ের কোল খালি করে কি লাভ হয়েছে ।
এসব দেখে ওদের মন খুব খারাপ হয়ে গেল ।
আত্নীয় স্বজন কে দেখতে যাওয়ার আর সাহস হল না । ৪০ বছর পর কি আশা নিয়ে দেখতে এসেছিলাম আর কি দেখছি । এমন সময় তাদের কানে ভেসে আসে হায়দার আলীর সেই বিখ্যাত গান “ কি দেখার কথা কি দেখছি কি শোনার কথা কি শুনছি ........... ত্রিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুজছি !! ” দুজনের চোখ ভিজে উঠল এই জন্যই কি তারা যুদ্ধ করেছিল দেশ স্বাধীন করেছিল । রাগের চোটে বলল কত কষ্ট করে যুদ্ধ করলাম দেশ স্বাধীন করলাম তার প্রতিদান এই ।
মাছুম : ৯ মাসে দেশ স্বাধীন করে ভুল করেছি যদি ৯ বছরে স্বাধীন হত তবেই এরা বুঝত স্বাধীনতার মর্ম ।
একরাশ কষ্ট নিয়ে ফিরে গেল ওরা ।
আশা করি এই লিখাটা নিয়ে কেউ বিতর্ক করেবেন না । কাউকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য না । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।