গৌহাটি, ২১ মার্চ: বাংলাদেশ সরকার দৃশ্যত খালিজ টাইমস পরিবেশিত ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে ভুলপথে পরিচালিত হয়েছে। ভারতের আসাম রাজ্য থেকে প্রকাশিত ‘টাইমস অব আসাম’-এ বুধবার ‘বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট মিসলেড বাই খালিজ টাইমস’ শিরোনামে পরিবেশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে এটা দাবি করা হয়।
এতে বলা হয়, খালিজ টাইমসের নয়া দিল্লি প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেনস’র (আইএসআই) সাবেক প্রধান আসাদ দুররানীর বক্তব্যের মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করান। আসাদ দুররানী সম্প্রতি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে এক সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি পাকিস্তানের কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের তহবিলে টাকা দিয়েছেন। তিনি তার সাক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বা দলটির কোনো নেতার নাম উল্লেখ করেননি।
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘অথচ খালিজ টাইমস’র এই ভুয়া রিপোর্টটি প্রকাশিত হবার পর থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে এটা বলে বেড়াচ্ছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আইএসআই থেকে টাকা নিয়েছেন। ’’
টাইমস অব আসাম আরো লিখেছে, “পরে এটা জানা গেছে যে, দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে গত ২ মার্চ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) শীর্ষ কর্মকর্তারা দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এসকর্ট দিয়ে নয়া দিল্লিতে র’-এর সদর দফতরে নিয়ে যায়। এটাও জানা গেছে, দুবাইভিত্তিক খালিজ টাইমসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালিক এ ধরনের সংবাদ তৈরি করার জন্য দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়েছেলেন। ’’
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর তৈরি করা জাল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাজানো রিপোর্টটি খালিজ টাইমসে যথারীতি প্রকাশিত হয়।
খালিজ টাইমসে রিপোর্টটি প্রকাশিত হবার পর ভারত সরকারের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশের দুটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককে ফোনের মাধ্যমে খালিজ টাইমসের রিপোর্ট চোখে পড়ার মতো জায়গায় যত্নের সঙ্গে ছাপানোর জন্য অনুরোধ করেন। ’’
টাইমস অব আসাম পত্রিকায় এটাও বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক খালিজ টাইমসের রিপোর্টটি ছাপানোর পাশাপাশি এটাও দাবি করে বসেছে যে, রিপোর্টটি পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ‘দি নিউজ’ ও ‘দি বিজনেস রেকর্ডার’-এ ছাপা হয়েছে। তথ্যের উদ্ধৃতির বেলায় দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী যেমন জালিয়াতি করেছেন, বাংলাদেশের সম্পাদকটিও একই কাজ করেছেন। ’’
পত্রিকাটি আরো লিখেছে,“আইএসআই’র সাবেক প্রধান দুররানী বলেছেন, ‘পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের তিনি টাকা দিয়েছেন। অথচ দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী খালিজ টাইমসে লিখেছেন, আইএসআই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপিকে টাকা দিয়েছে।
দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর এই জাল রিপোর্টটি গত ১৫ মার্চ ভারতের ডেইলি মেইল পত্রিকায়ও ছাপা হয়। ’’
টাইমস অব আসাম আরো লিখেছে, ‘‘চলতি বছরের ১৬ মার্চ একই প্রতিবেদক (দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী) ইন্ডিয়া টুডে সাময়িকীতে লিখেছেন, ‘সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক একটি দৈনিক পত্রিকা এটা লিখেছে যে আইএসআই বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে ৫০ কোটি রুপি দিয়েছে এবং এই নির্বাচনে বিএনপি জিতে সরকার গঠন করে। ’’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘‘ইন্ডিয়া টু-ডেসহ ভারতের যেসব পত্রিকায় প্রতিবেদনটি ছাপিয়েছে, তারা কেউ এটা লিখেননি যে খালিজ টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে এবং তা লিখেছেন দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী এবং দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীও ইন্ডিয়া টু-ডে সাময়িকীতে এটা উল্লেখ করেননি যে, খালিজ টাইমসের রিপোর্টটি তিনি নিজেই লিখেছিলেন। ’’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস তথ্য যাচাই না করে ইন্ডিয়া টু-ডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হুবহু ছাপিয়েছে। ’’
টাইমস অব আসাম আরো লিখেছে, ‘‘সফল গল্প ফাঁদার পর নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছে।
এটাও জানা গেছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ পরিবারের একজন সদস্য খালিজ টাইমসের রিপার্টটির জন্য দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাতে ভারত সফর করেছেন। ’’
টাইমস অব আসাম এটাও লিখেছে, “আইএসআই’র সাবেক প্রধান দুররানী পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টে তার সাক্ষ্য কি বলেছেন, তার কপি পেতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠি ১৯ মার্চ পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসে পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুররানীর সাক্ষ্যে কী ছিল, তা জানাজানি হবার আগেই বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির সমাপ্তি টানতে চাচ্ছে।
থলের বিড়াল কি বেড়িয়ে গেল? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।