সাধারণ মানুষের সাধারণ কথা।
জাতীয় সংসদে অশালীন ভাষা ব্যবহার, হাতাহাতির উপক্রমের ঘটনা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, সংসদে যা ঘটছে, তাতে দেশের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও সাধারণ মানুষের জন্য অধিবেশন দেখা এক রকম নিষেধ।
বিশিষ্টজনরা বলেন, সরকার ও বিরোধী দল দীর্ঘদিন সংসদে একসঙ্গে কাজ করলে দুই দলের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি হবে। সহনশীলতা না থাকলে এ অবস্থার উত্তরণ কখনোই সম্ভব নয়।
তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবাই সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।
সংসদে অশালীন ভাষায় বক্তব্য এবং সরকার ও বিরোধীদলীয় নারী সংসদ সদস্যদের হাতাহাতির উপক্রমের ঘটনায় জানতে চাইলে গতকাল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, 'প্রথমত এটা জাতির জন্য কলঙ্কজনক। দ্বিতীয়ত গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর নয়। ইতিমধ্যে সরকারের তিন বছর পার হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সংসদে গিয়ে জনগণের কথা বলা। সেটা তো করা হলোই না, উল্টো সংসদে গিয়ে অশ্লীল, কটূক্তি, ঝগড়াটে ভাবমূর্তির চিত্র তুলে ধরা হলো। '
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, 'এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সংসদে গিয়ে অশালীন মন্তব্য করা, অন্য সংসদ সদস্যের ওপর হামলার চেষ্টা করা, ভালো লক্ষণ নয়।
' তিনি বলেন, 'সব দেশের সংসদেই তর্ক-বিতর্ক, উত্তেজনা থাকে। এটি থাকবে। আমরা আশা করব, সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ভবিষ্যতে তাদের শালীনতা বজায় রাখবেন। ' তিনি বলেন, 'সংসদে সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করলে হয়তো এ অবস্থা থাকবে না। দুই দলের মধ্যেই আস্তে আস্তে সহনশীলতা তৈরি হবে।
কিন্তু শুধু অজুহাত তৈরি করে বিরোধী দল যদি সংসদ বর্জন করে, তাহলে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। '
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, 'জাতীয় সংসদে এখন যে ধরনের ভাষার ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে দেশের সাধারণ মানুষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও কোমলমতি শিশুরা কোনোমতেই সংসদের অধিবেশন দেখতে পারবে না। এটা শুধু দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরাই দেখবে। ' তার মতে, এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই সংসদ টেলিকাস্টের আগে 'অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও সাধারণ মানুষের জন্য নয়' এমন সতর্কবাণীর দরকার হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, 'সংসদে যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।
সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত নেতিবাচক ও অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। এটি কোনো অবস্থাতেই ভালো লক্ষণ নয়। সংসদ সদস্যরা তাদের ভাষার ব্যবহার ও আচরণে শালীনতা বজায় রাখতে না পারলে অন্যরাও এতে উৎসাহিত হবে। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আরও সতর্ক হতে হবে। নইলে জুনিয়ররা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠবেন।
পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জাতীয় সংসদে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি। '
আবারও উত্তপ্ত সংসদ
সরকার ও বিরোধী দলের একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে জাতীয় সংসদ। এসব ভাষার প্রয়োগ নিয়ে সংসদে হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার, চেঁচামেচির ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার, অসংসদীয় ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রতিবাদে সরকার ও বিরোধীদলীয় মহিলা সংসদ সদস্যরা চিৎকার, চেঁচামেচিতে সংসদের পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলেন।
একপর্যায়ে স্পিকার সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত হাতুড়ি পিটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
গতকাল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা পরস্পরবিরোধী ও অশালীন ভাষায় কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বারবার রুল জারি করতে বাধ্য হন। অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং বেশ কয়েকটি অসংসদীয় শব্দ এঙ্পাঞ্জ করেন। ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, বিএনপির ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রাশেদা বেগম হীরা, সরকারি দলের বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান, নাজমা আক্তার, জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, নাজমা আকতার, শাহরিয়ার আলম, এলডিপির ড. অলি আহমদ প্রমুখ।
বিরোধী দলের সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্যের সময় পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় অধিবেশন কক্ষে তুমুল হৈচৈ শুরু হলে স্পিকারকে হাতুড়ি পিটিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে। পাপিয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি বাস্তবতাবিবর্জিত ভাষণ দিয়েছেন। এ সময় স্পিকার 'মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি' শব্দটি এঙ্পাঞ্জ করার ঘোষণা দেন।
পাপিয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ১৯৮৬ সালে স্বৈরশাসকের সঙ্গে লংড্রাইভে গিয়ে তার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দিয়েছিলেন।
'৯৬ সালে গোলাম আযমের কোলে উঠে ক্ষমতায় এসেছেন। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা তুমুল হৈচৈ শুরু করলে সংসদে চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সরকারি দলের ফজিলাতুননেসা বাপ্পি এবং পিনু খান 'বেয়াদব' বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় স্পিকার বলেন, এসব কুৎসিত বক্তব্য রাখবেন না। এরই মধ্যে সরকারি দলের সদস্য ও বিরোধী দলের সদস্যদের মারমুখো অবস্থানের কারণে সংসদে কিছুই শুনা যাচ্ছিল না।
তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পিকার কয়েকবার হাতুড়ি পিটান।
এর আগে বিরোধীদলীয় এমপি রাশেদা বেগম হীরা বলেন, এখন আর দেশের নদীতে মাছ পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় শুধু লাশ। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ভারত থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা এনে নির্বাচন করেছেন। এ সত্য ঢাকার জন্য খালেদা জিয়ার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
রানুর বিরুদ্ধে স্পিকারকে বাপ্পির চিঠি
বিএনপির রেহানা আক্তার রানুর বিরুদ্ধে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগ এনে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি।
স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে গতকাল তিনি নিজেই এ চিঠি পেঁৗছে দেন। আওয়ামী লীগের আরেক এমপি বেবী মওদুদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
রবিবার সংসদ অধিবেশনে রেহানা আক্তার রানু রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেন। রেহানার পেছনের আসনে বসা বাপ্পি প্রতিবাদ করলে তার দিকে তেড়ে আসেন বিএনপির আরেক এমপি শাম্মী আক্তার। পরে দুই দলের চিফ হুইপ মধ্যস্থতা করে পরিস্থিতি সামাল দেন।
চিঠিতে বাপ্পি বলেন, '১৮ মার্চ সংসদের বৈঠক চলার সময় বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্যের অসংসদীয় আচরণের শিকার হই। রেহানা আক্তার রানুর বক্তব্যের একপর্যায়ে শাম্মী আক্তারসহ বিরোধী দলের কয়েকজন পুরুষ সংসদ সদস্যও আমার দিকে তেড়ে আসেন। তারা তর্জনী উঁচিয়ে গালিগালাজ করেন এবং শাসান। '
::: বাংলাদেশ প্রতিদিন :::
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।