আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোম বোম বোমা। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী তিনটি বোমা

সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই পৃথিবীর ধ্বংশের সবধরনের রসদ আমরা মানব জাতি জোগাড় করে রেখেছি। তাই আজও যে আমরা টিকে আছি তা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। সেই বোমাগুলো নিয়ে আসলে আমরা কেমন করে যে বেঁচে আছি তা সত্যিই বিস্ময়। নিউট্রন বোমা(Neutron Bomb) বিজ্ঞানের সর্বশেষ ধ্বংসকারী আবিষ্কার হল এই নিউট্রন বোমা । কে তৈরী করেছে জানেন সেই যুক্তরাষ্ট আর ফ্রান্স।

এটি একটি জটিল রাসায়নিক বোমা। তাই এর একটি বৈজ্ঞানিক নামও আছে আর তা হল enhanced radiation weapon । নিউট্রন রেডিয়েশন অস্ত্র নামেও পরিচিত। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি ঘরবাড়ী গাছপালার কোন ক্ষতি করে না। শুধু প্রানী ধ্বংস করে।

এক থেকে দুই কিলোটনের একটি একটি বোমার সাইজ। প্রচন্ড বিস্ফোরণ আর তাপের সৃষ্টি করে এটি তাই ১৩০-৩৫০ মিটার এলাকার সবকিছু এটি ধ্বংস করে দিতে পারে। আর অন্যকিছু ধ্বংস করে ১-২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে। মূলত পারমানবিক বোমার বিকল্প হিসেবেই একে তৈরী করা হয়েছে তাই এর ধ্বংসলীলা শুধু প্রানীদের উপরই কিন্তু অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন করে না। আসলে নিউট্রন বোমাতে নিউট্রন আর গামা রশ্মি বের হয়ে আসে।

আর গামা রশ্মি বা এক্সরে যে কোন প্রানীর জন্য চরম ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মাত্রায় বের হয়ে আসার কারনে প্রানীর জৈবিক দেহ মৃত্যুবরন করে। নিউট্রন বোমাতে ব্যবহ্রত হয় ইউরেনিয়াম আর লীড আর তার সাথে অল্প পরিমানে ট্রিটটিয়াম। ১৯৫৮ সালে স্যামুয়েল টি কোহেন এই ধরনের বোমার ধারনা প্রথম দেন। ১৯৬৩ সালে নেভাদার মাটির নিচে প্রথম পরীক্ষা করায়।

তবে জিমি কার্টার ১৯৭৮ সালে এর উঃৎপাদন বন্ধ করে দেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ তে এর পুঃনউৎপাদন শুরু করেন। আমেরিকা অবশ্য বলছে এখন তাদের কাছে আর এই ধরনের কোন বোমা নেই। সব বোমারই নাকি তারা নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। পারমাণবিক বোমা আইনস্টাইনে সেই সূএর টির E=mc^2 উপরেই আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে শক্তিশালি বোমা পারমানবিক বোমা।

বলা যায় সেই সূত্রের বাস্তবায়ন যেন হয়ে এটি দ্বারা। আসলে আইনস্টাইন কিন্তু মোটেও এই বোমার সাথে পাছেও নেই। যদি একগ্রাম ভরকে শক্তিতে রুপান্তরিত করা যায় তবে তা ৯০ হাজার বিলিয়ন জুল শক্তি সৃষ্টি করবে। সেই বোমা তৈরীর দ্বায়িত্ব এসে পড়ে অন্যতম প্রতিভাবান বিজ্ঞানী জে আর ওপেনহাইমারের উপর। তিনি এই বিজ্ঞানীকেই এর জনক বলা হয়(যদিও বেচারা পরে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল)।

এবার আসি কিভাবে কি হয়। এই বোমাতে ব্যবহ্রত হয় ইউরেনিয়াম আর প্লুটেনিয়াম। এদের ভারি নিউক্লিয়াসকে আঘাত করা হয় নিউট্রন দ্বারা। ফলে নিউক্লিয়াস দুই ভাগ হয়ে যায়। একেই বলে নিউক্লিয় বিভাজন(Nuclear fission ) ।

ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে তৈরী হয় বেরিয়াম আর ক্রিপ্টনের নিউক্লিয়াস। সাথে সাথে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড তাপশক্তি। এসময় আবার কিছু মুক্ত নিউট্রনের জন্ম হয়। শুরু হয় চেইন রিএকশ্যন। এভাবে বোমাটির অভ্যন্তরে বিষ্ফোরণ চলতে থাকে আর বের হয়ে আসে প্রচন্ড শক্তি।

ঘটে পারমানবিক বিষ্ফোরণ। পারমানবিক বোমার জন্য ব্যবহ্রত হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ বা প্লুটোনিয়াম । ভেতরে তাদের আলাদা আলাদ জারে রাখা হয়। কাজ হল এদের যে কোন ভাবে এক করে দেওয়া। যদি একজন আরেক জনে সংস্পর্শ পায় তবেই শুরু হয়ে যাবে ফিউশন।

ফলে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয়। ঘটে প্রচন্ড বিস্ফোরণ। যুক্তরাষ্টের আলমাসে ১৯৪৫ সালের ১৬জুলাই প্রথম এই বোমা পরিক্ষার করা হয়। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশ এই বোমা তৈরী করতে পারে। তবুও ইতিহাসে মাত্র দুই বার এই বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।

তা হল হিরোসিমা আর নাগাসাকি তে। এদের অবস্থা কি তা আপনার ভাল করেই জানেন। হাইড্রোজনে বোমা নক্ষত্রের যে প্রক্রিয়ার আলোর তৈরী করে। হাইড্রোজেন বোমা ঠিক সেই প্রক্রিয়ায় কাজে করে। বুঝতে পারছেন আমার নিজেদের ধ্বংস কত কাছে।

আমরা নক্ষত্র বানাতে পারি। হ্যা সত্যি। হাইড্রোজেন বোমায় নিউক্লিয়াস একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় চারটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত করে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করা হয়। আর এই একীভূতকরণের সময় সৃষ্টি হয় প্রচন্ড তাপের। হাইড্রোজেন বোমার ভিতরে একটি মিনি সাইজের এটমবোমাও থাকে।

বিস্ফোরণের পূর্ব মুহূর্তে বোমার ভেতরে একীভবনের ক্রিয়াটি শুরু করার জন্যই একে ধরে রাখা হয়। মূল বোমাটি বিস্ফোরণের আগেই এটি বিস্ফোরিত হয়। তখন তাপমাএার লাখো ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে। এই তাপমাএাতেই ডয়টেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম মিলে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস সৃষ্টির কাজ করে। তাতে তাপমাএা বেড়ে যায় আরও বহুগুন।

এই যে কয়েকটি ধাপ হলে তা ঘটে যেতে মাএর এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের একভাগ সময় লাগে। এই প্রক্রিয়ার শুধু হিলিয়ামই উৎপন্ন হয়না সাথে সাথে নিউট্রনও উৎপাদিত হয়। সেই আবার নিউট্রন বোমার মত কাজ করতে থাকে। এবং একীভবন ক্রিয়াকে চালু রাখে। তাই এই বোমা পারমানবিক বোমা থেকে অনেক অনেক শক্তিশালী।

এই বোমার বাইরের আবরণ তৈরী হয় একপ্রকার শংকর ধাতু দ্বারা। এর ভেতরে থাকে হাইড্রোজেনের দুটো আইসোটোপ । ডয়টেরিয়াম এবং ট্রিটিয়াম। আমরা জানি এদের প্রত্যেকের ভর আলাদা। আমেরিকাই এর জন্মদাতা।

১৯৫২ সালে এর পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে আমাদের সোভাগ্য কোন দেশই এই বোমাটি এখন ব্যবহার করে নি। সবশেষে সবার জন্য পরামর্শ Don’t Try this at home.(এগুলো বাসায় বানাইয়েন না)। যুদ্ধ নয় এই জ্ঞান মানব উপকারে কিভাবে লাগানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বিজ্ঞান খারাপ কিছু করে না তাকে দিয়ে আমাদের মত খারাপ মানুষেরাই খারাপ কিছু করিয়ে নেয়।

একটু লক্ষ করলে দেখবেন এই বোমা গুলো তৈরী জন্য আমেরিকা যে পরিমান অর্থ আর মেধা ব্যয় করেছে তা যদি মানবতার কল্যানে ব্যয় করা হয় আজ পৃথিবী অন্যরকম হত। সূত্র: ওইকিপিডিয়া.org ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।