আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্রাংক লুকাস : একজন গ্যাংস্টার এবং রিডলি স্কটের আমেরিকান গ্যাংস্টার

আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । আমি সেইসব মুভি গুলো নিয়ে লিখি, যার পেছনে সত্য ঘটনার ছোয়া রয়েছে. যেই মুভি টি নির্মিত হয়েছে একটি সত্য কে অবলম্বন করে. আমেরিকান গ্যাংস্টার অ্যামেরিকান গ্যাংস্টার, একাডেমি পুরস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব মনোনীত মার্কিন অপরাধ চলচ্চিত্র। স্টিভেন জেইলিয়ানের রচনা ও রিডলি স্কটের পরিচালনায় নির্মীত এই ছবিটি ২০০৭ সালে মুক্তি পায়। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন ও রাসেল ক্রো। সিনেমাটি সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মীত।

ফ্র্যাংক লুকাস (ডেনজেল ওয়াশিংটন) নিউ ইয়র্ক সিটির বিখ্যাত মব বস এল্‌সওয়ার্থ বাম্পি জনসন-এর ড্রাইভার ও ডান হাত ছিল। তার সামনেই বাম্পি মারা যায়। বাম্পির মৃত্যুর পর নিজের পথ তৈরি করা শুরু করে লুকাস। এক্ষেত্রে সে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সুযোগ নেয়। থাইল্যান্ডে অবস্থানকারী এক মার্কিন সৈনিক তার কাজিন।

এই কাজিনের সহায়তায় সে ভিয়েতনাম থেকে বিপুল পরিমাণ হেরোইন থাইল্যান্ড হয়ে সরাসরি আমেরিকায় নিয়ে আসে। মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজে করেই এগুলো আসে, দুর্নীতিগ্রস্ত সৈনিকদের সহায়তায়। এর মাধ্যশে সে নিউ ইয়র্ক সিটির অন্যতম প্রভাবশালী মব বস হয়ে উঠে। এর আগে কোন কৃষ্ণাঙ্গ এতো উপরে উঠতে পারেনি। সে তার মা এবং সব ভাইদের নিউ ইয়র্কে নিয়ে আসে।

নতুন এক কৃষ্ণাঙ্গ মব পরিবারের অভ্যুত্থান ঘটে। অপর দিকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা রিচি রবার্টস (রাসেল ক্রো) শহরের মাদক চক্রকে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। রিচির মূল লক্ষ্য থাকে মাদক পাচার ও সরবরাহের কাজে নিয়োজিত মূল ব্যক্তিদের ধরার। রিচি রবার্টস ও ফ্র্যাংক লুকাসের তৎপরতার মধ্য দিয়েই সিনেমার কাহিনী এগিয়ে যায়। বাস্তব ঘটনা: একজন গ্যাংস্টার এর ইতিহাস ফ্রাংক লুকাস ( ডেনজেল ওয়াশিংটন) , একজন প্রাক্তন ড্রাগ ডিলার , যিনি ১৯৬০ সালে "হারলেম" এর নিয়ন্ত্রন ছিল তার হাতে।

তনি ছিলেন একচ্ছত্র গ্যাংস্টার , একজন আইকন । ফ্রাংক লুকাস , ১৯৬৫ সালে । তার ড্রাগ ডিলিং এর মূল স্ট্রেটেজী ছিল তনি কোন মধ্যস্থতাকারী ব্যাবহার করতেন না । তিনি সরাসরি ভিয়েতনাম থেকে হেরোইন আমেরিকায় নিয়ে আসতেন । এ জন্য তনি ব্যাবহার করতেন ভিয়েতনাম ফেরত নিহত আমেরিকান সোলজার দের কফিন, কফিন এর ভিতর থাকত পাউন্ড এর উপর পাউন্ড হেরোইন , কোকেইন।

ফ্রাংক লুকাসের অপরাধ জীবন এর পেছনে তার শৈশবের একটি কাহিনী উল্লেখ্য । তার যখন ১২ বছর, তার কাজিন কে গুলি করে মেরে ফেলে ফ্রাংকের চোখের সামনে। তার দোষ ছিল সে একজন ককেশিয়ান মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল । হয়তো এই ঘটনা তার শিশু মনে প্রচন্ড ছাপ ফেলে । বাম্পি জনসন : মেন্টর ওফ ফ্রাংক লুকাস বাম্পি ছিল একজন আফ্রিকান আমেরিকান মব বস ।

'বাম্পি ' তার আসল নাম না, নিক নেম। তিনি এটা পেয়েছেন কারন তিনি মাথার পেছনে তার প্রতিপক্ষ কে গুলি করতেন । বাম্পি প্রচন্ড শেতাঙ্গ বিদ্বেষী ছিলেন । বদমেজাজী ও বটে । বাম্পি তার অপরাধ জীবন কে গুছিয়ে নিতে থাকে ।

এবং হয়ে ওঠে নিউইয়র্ক এর আনওফিসিয়াল ক্রাইম বস। তার অনুমতি ছাড়া কোন অপরাধ সংঘটিত হত না । কিন্তু তাকে নিউইয়র্ক পুলিশ ড্রাগস এর জালে আটকে ফেলে । এতে তার কিছু সহযোগী জড়িত ছিল বলে জানা যায় । তার ১৫ বছর জেল হয় ।

কিন্তু তিনি জেলে বসে ছিলেন না, নিয়ন্ত্রন করতে হারলেম এর অধিকাংশ ড্রাগ ডিলিং এবং তিনি ৩ জন সহযোগী যাদের দার সাথে জেল হয়, তাদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন । বাম্পি জনসন ৪০ বার গ্রেফতার হয়েছেন, ৩ বার জেলে গেছেন । বাম্পি জনসন বাম্পি ৬২ বছর বয়সে মারা যায় । তিনি ছিলেন গ্যাংস্টার কিন্তু সবাই তাকে বলতেন , রবিন হুড ওফ দ্যা হারল্যাম । ফ্রাংক লুকাস : আমাদের মূল নায়ক , দ্যা আমেরিকান গ্যাংস্টার।

যার কথা এতক্ষন বললাম , বাম্পি জনসন , ফ্রাংক লুকাস ১৫ বছর বাম্পির ড্রাইভার ছিলেন । বাম্পির ওঠি , বসা, খাওয়া, নিরাপত্তা সব ছিল তার । ফ্রাংক এর শিক্ষক ছিল বাম্পি । বাম্পির মৃত্যুর পর ফ্রাংক পর্যবেক্ষন করলো, তাকে শীর্ষে উঠতে হলে তাকে ইটালিয়ান মাফিয়া কে তছনছ করতে হবে । তাই ফ্রাংক লুকাস ব্যাবহার করলো তার কাজিন কে, যে ভিয়েতনাম এ যুদ্ধরত অবস্থায় ছিল এবং প্রতিটি ব্লাক সৈন্য কে চিনতো সে এমন কি যে রান্না ও করে ।

ফ্রাংক এর কাজিন ছিল প্রচন্ড চালাক একজন সৈন্য । সে ভিয়েতনাম এ যে সকল নিহত সেনা সদস্য দের লাশ দেশে পাঠানো হত, তার ভেতরে হেরোইন ঢুকিয়ে দিত এবং মিনিমাম ২৫ টা পেরেক ঠুকতো কফিনে যা ছিল অতিরিক্ত । এসং সে কখন ও চিকন সৈন্য দের কফিন ব্যাবহার করতো না, এতে চেক করার সম্ভবনা থেকে যেত অতিরিক্ত বার এর কারনে । ফ্রাংক সরাসরি আনতে শুরু করলো শেরোইন এবং যা ছিল ১০০% পিওর । ফ্রাংক বলেন, সে দিনে ১ মিলিয়ন ডলার আয় করতো তার পিওর হেরোইন বিক্রি করে ।

একজন ফেডারাল জাজ বলেন " ফ্রাংক লুকাস সবচেয়ে ভয়ানক আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য চোরাকারবার, একজন সংস্কারক যার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তার নিজস্ব সংযোগ আছে এবং তিনি তারপর তা বিক্রি করতো রাস্তায় " লুকাস শুধুমাত্র নর্থ ক্যারোলিনা থেকে তার আত্মীয় বন্ধ বন্ধুদের তাঁর বিভিন্ন হেরোইন অপারেশন হ্যান্ডেল বিশ্বাস করতো. তিনি বলেন, "ব্লু ম্যাজিক", যা ছিল 98-100% খাঁটি, থাইল্যান্ড থেকে সরাসরি আসতো. লুকাস বলছে যে তার মূল্য ছিল "$ 52 মিলিয়ন মত কিছু" এবং আরও বলেন "হয়ত (2,200 পাউন্ড) আফিম এর কম করে হলে ও কেজি প্রতি $ 300,000 (প্রতি 2.2 পাউণ্ড) সম্ভাব্য মুনাফা হবে । লুকাস সাদাসিধে জামা এবং সাধারন জীবন যাপন করতে পছন্দ করতো, কারন তিনি মনে কতেন দামী কাপড় মানে এমন একটা নেমপ্লেট গায়ে ঝোলানো : "আমাকে গ্রফতার করুন " ছবিতে ডেনজেল ওয়াশিংটন ও এরকম একটি পোশাকে পুলিশের নজরে প্রথম পরেন. ফ্রাংক ১৯৭০ সালে গ্রফতার হন । তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় । ১৯৭৫ সালে ফ্রাংক লুকাস এর বাড়ি তে তল্লাশী চালানো হয় এবং $584,683 ডলার পাওয়া যায় । ক্যাশ ।

অবশেষে লুকাস দোষী সাব্যস্ত হন এবং ৭০ বছরের কারাদন্ড হয় তার । জেলে থাকা অবস্থায় সে ১০০ জনের অধিক মাফিয়া বস, ড্রাগ ডিলার কে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেন এবং এর ফলে তার ৭০ বছরের সাজা কমে যায় এবং প্যারোলে মুক্তি পান । কিন্তু ১৯৮৪ সালে তাকে আবার ১৩,০০০ তলার এর শেরোইন সহ গ্রেফতার করা হয় এবং ৭ বছরের জেল হয় । ফ্রাংক লুকাস ১৯৯১ সালে মুক্তি পান এবং তনি এখন ও বেছে আছেন । তার কোন অপরাধ এর সাথে জড়িত থাকার কথা এখনও জানা যায়নি ।

ফ্রাংক লুকাস , ২০০৮ সালে । হয়তো হয়েছেন অপরাধী, কিন্তু গ্যাংস্টার.. একজন লেজেন্ডারি গ্যাংস্টার ছিলেন । আমেরিকান গ্যাংস্টার । আমেরিকান গ্যাংস্টার : ছবির কিছু কথা পরিচালক ছিলেন রিডলি স্কট । আমার প্রচন্ড প্রিয় পরিচালক ।

ছবিটি "দ্যা রিটার্ন ওফ সুফার ফ্লাই" বইটির উপর নির্ভর করে করা, কাহিনী একই, লুকাস কে নিয়েই । বাজেট : ১০০ মিলিয়ন বক্স অফিস : ২৬৬,৪৬৫,০৩৭ ডলার ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।