লেখার কপিরাইট স্বত্ব © হতভাগ্য কবি কংবা শুধুই একজন অপদার্থের নিকট সংরক্ষিত। প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি সাইকোসিস জাতীয় মনোরোগ। প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছে এমন ব্যক্তিরা খুব কমই মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। সাইকোসিস বা বড় মাত্রার মানসিক রোগীর সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক থাকে না নানা ধরনের ড্রাগস বা ওষুধ সেবনে প্যারানয়েড টাইপের মনোসমস্যা চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ দেখা দিতে পারে। যেমন-
##কোকেইন
##এমফিটামিন
##মারিজুয়ানা
##এলএসডি ইত্যাদি
যেসব রোগী সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছে তারা যদি এসব ড্রাগস সেবন করে তাদের উপসর্গ বা লক্ষণসমূহ আরো প্রচণ্ড আকার ধারণ করে।
যা মারাত্মক পরিণাম ডেকে নিয়ে আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণাতে এসব ড্রাগস কীভাবে ব্যক্তির আচরণে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক কারণ নির্ধারণ করেছেন। যারা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগছে তাদের সাধারণত খুব বেশি মাত্রায়-
ডেলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস ও হ্যালুসিনেশন বা অমূল প্রত্যক্ষণ হয়ে থাকে।
তারা-গায়েবি আওয়াজে শোনে যে, কেউ তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে
তার মনের কথা কেউ বিশেষ পদ্ধতিতে বা বিশেষ উপায়ে জেনে ফেলছে
রেডিও-টিভি বিশেষ পদ্ধতিতে তার চিন্তা-ভাবনাকে প্রচার করছে
এ রোগীর কর্মক্ষেত্রে তার কর্মদক্ষতা কমে গেছে ও এদের আবেগজনিত প্রকাশ অনেক মাত্রায় কমে যায় যাদের অপেক্ষাকৃত মৃদু মাত্রার প্যারানয়েড ডিসঅর্ডার থাকে তারা সাধারণত ডিলিউশন অব পারসিফিউশনে ভুগে থাকে। যেমন-
##ঈর্ষাজনিত ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভোগে
##ভ্রান্ত বিশ্বাস ব্যতীত এদের চিন্তা-ভাবনার ধরন পরিষ্কার ও স্বাচ্ছন্দ্য থাকে
##তারা কোনোভাবে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে
##এদের আবেগজনিত প্রকাশ ও আচরণ দিয়ে সমাজে কোনোভাবে খাপ খাইয়ে চলতে পারে
##পরিবারে কোনোভাবে খাপ খাইয়ে চলতে পারে
##এরা দ্বিধান্বিত অবস্থায় ভুগে থাকে
##এরা কোনো সমঝোতা বা মীমাংসায় আসে না
##এরা সহজে কারো সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না এছাড়াও যারা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়াতে ভুগছে তাদের বোঝার ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়
প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে যারা ভুগছে তারা সাধারণত অহেতুক যুক্তিহীন কুতর্কে জড়িয়ে যায় অতিরিক্ত আবেগজনিত প্রকাশের জন্য এরা অন্য লোকদের থেকে বা সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।
যারা তাদের অন্তরঙ্গ তাদের এরা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে থাকে,আবার অন্যদিকে এদের দেখা যায় যে, এরা বেশি বাস্তব যুক্তিবাদী এবং উদ্দেশ্যমূলক চিন্তাধারার অধিকারী বলে মনে করে।
যারা প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন তারা অতিমাত্রায় সতর্ক এবং সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। কাউকে কোনো রকম সন্দেহ করলে বা ষড়যন্ত্র করলে ব্যক্তি অত্যন্ত খেপে গিয়ে মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। অথচ প্রকৃত অর্থে তার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা বা ষড়যন্ত্র করা হয়নি।
এরা সামান্যতম সমালোচনা সহ্য করে না,অন্যের ব্যাপারে এরা অনেক বেশি সমালোচনাশীল হয়ে থাকে।
এরা কোনো দোষ করে তা স্বীকার করে নাএ ধরনের রোগীরা সামান্য ব্যাপারকেও বড় আকারে পরিণত করে ফেলতে পারে।
এদের সন্দেহের যে প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ তা সাধারণত অবিরত এবং দীর্ঘমেয়াদি টাইপের হয়। যারা সন্দেহবাতিকতাজনিত ব্যক্তিত্ব জটিলতায় ভুগছেন তারা সর্বদাই আশপাশের লোকজনকে লক্ষ রাখেন এবং তারা পৃথিবীটাকে একটি ভয়ানক স্থান বলে মনে করেন। প্যারানয়েড পার্সোনালিটি সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তি যখন প্রথম চাকরি বা কর্মজীবন শুরু করেন বা কারো সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন তখন তারা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। তাদের সাথে বা আশপাশে যারা রয়েছেন তাদের তিনি যতক্ষণ না বিশ্বাসের সাথে দেখেন ততক্ষণ ভয়ভীতিতে থাকেন এবং সেই ভয়ভীতিকে তারা এড়িয়ে চলতে পারেন না।
এরা প্রায়ই স্ত্রীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে থাকেন।
কিছু ডিলিউশন ও প্যারানয়েড
এক ধরনের ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস দেখা যায় যাকে বলা হয় ইরোটিক ডিলিউশন। এ ধরনের বিশ্বাসের শিকার সাধারণত অল্প বয়সের তরুণ-তরুণী বা যুবক-যুবতীরা হয়ে থাকেন। তারা খুব বিখ্যাত নায়ক-নায়িকা বা বিখ্যাত কোনো পাবলিক ফিগারকে মনে মনে তীব্রভাবে ভালোবাসতে শুরু করে। এসব ভালোবাসার সমর্থনে দেখা যায় তারা তাদের কাছে-
##প্রচুর চিঠি লেখে
##টেলিফোনে কথা বলে
##বারবার দেখা করে ইত্যাদি
কখনো ফুল বা গিফট পাঠিয়ে চমকিয়ে দিতে চায় ইত্যাদি নানা সব কর্মকাণ্ড করে থাকে।
এগুলো এক ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাসজনিত বা ডিলিউশনাল সমস্যা।
যারা গ্রান্ডিউজ ডিলিউশন নামক ভ্রান্ত বিশ্বাসে আক্রান্ত তারা মাঝে মাঝে ধারণা করে যে, তাদের বিশেষ কোনো পাওয়ার বা শক্তি রয়েছে এবং সেই পাওয়ার বা শক্তি দিয়ে সে যে কোনো রোগ নিরাময় করতে পারবে বা যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারবে। তারা ভাবতে পারে যে তারা-
##দারিদ্র্র্য দূর করতে পারে
##পৃথিবীতে শান্তি কায়েম করতে পারে
##অদ্ভুত কিছু করে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে
যেসব ব্যক্তি প্যারানয়েড ডিসঅর্ডারে ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাসে ভুগছে তারা সবাই কী অবিশ্বাস করে বা কী সন্দেহ করে তা নির্ণয় করা কোনো কোনো সময় একটু কঠিন হতে পারে। মনোচিকিৎসকের সাথে কথাবার্তা চলাকালীন এরা খুব বেশি মাত্রায় প্রতিক্রিয়ান্বিত হয় এবং চিকিৎসককেও পর্যন্ত সন্দেহ করা শুরু করে দেয়। তাই অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সাধারণত রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর অতীত মেডিকেল ইতিহাস নিয়ে বিশ্লেষণ করেন।
ফলে রোগীকে তিনি নানা রকমের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। রোগ নির্ণয় হয়ে যাবার পর শুরু হয় রোগীর মনোচিকিৎসা।
প্যারানয়েড পার্সোনালিটি এককভাবে এবং অন্যান্য মানসিক রোগের সাথে প্রকাশ পেতে পারে, তবে যে কারণেই প্রকাশ পাক, আসল কথা হলো মনোচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারণ মনোচিকিৎসার মাধ্যমেই রোগীর সমস্যা দূর করা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই এক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন এবং তিনি যে চিকিৎসাব্যবস্থা দেবেন তা নিয়মিতভাবে ফলো করলে রোগীর প্যারানয়েডজনিত জটিল জটিলতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
তথ্য সুত্র-
ইউ এন্ড পারসনালিটি ডিসঅর্ডার, সাইকোলজিকাল জার্নাল, বারবারা উটান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।