এতটুকু বুঝি জীবনের কাছে আবেগ নস্যি।
ঘরের পশ্চিম পাশে একটা ছোট্ট পুকুর তার অন্য পাড়ে কয়েকটা লেবু গাছ গাছগুলো সব ফুলে ফুলে ভরে আছে ওই ফুল থেকে মুহুমুহু ঘ্রান আসছে আর আমি যেন ঘোরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। এইতো উত্তরের বাগানের পাশেই বাঁশ ঝাড় কেমন করে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে আকাশে চাঁদ আছে কি না বুঝতে পারছি না তবে অসংখ্য জোনাকি পোকা তাদের আলো ছড়িয়ে এদিক ওদিক ছুটে চলছে। এর মধ্যেই নিজেকে আবিস্কার করলাম খাটের উপর শুয়ে আছি, বুকের মধ্যে যে ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক গলা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গাল অতিক্রম করে গলায় এসে পড়েছে কিন্তু আমি কাদছি কেন? হাত বাড়িয়ে পাশে রাখা মোবাইলটা নিলাম সময় দেখলাম মাত্র ভোর ৪:৫৫মি. এত সকালে আমার ঘুম ভেংগে গেল তাও আবার বুকভর্তি ব্যথা আর চোখে নিয়ে অশ্রু।
পুরোপুরি ঘুম ভেংগে গেল পুনরায় ঘুমানোর অনর্থক চেষ্টা করে লাভ নেই তাই ঘুমানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে মনে করতে চেষ্টা করলাম আসলে আমি কেন কাঁদছিলাম?
লেবু ফুলের ঘ্রান,
বাঁশ বাগান,
রাতের জোনাকি এগুলোতো একমাত্র আমার কাজলা দিদির জন্য তার মানে আমি সেই ছোট বেলার মতই আমার দিদির জন্য কান্না করতে ছিলাম। আমি বরাবরই শক্ত মনের মানুষ, ছোট বেলায়ও পছন্ড শক্ত ছিলাম দুষ্টমি করতে গিয়ে কতবার হাত-পা কেটে একাকার হয়েছি। আমার শরীরের রক্ত দেখে পাশে থাকা মানুষ ভিমড়ি খেত অথচ আমি থাকতাম নির্বিকার যেন এ আবার এমন কি? একটুইতো কেটেছে। সেই আমি ছোট বেলায় পাঠ্যপুস্তকে থাকা ''কাজলা দিদি'' কবিতাটা পড়তে চাইতাম না এর জন্য অবশ্য আমার সাথে অন্যরাও কারন ছিল ঐ কবিতা পড়তে গেলেই আম্মা চুপি চুপি কান্না করত আমি নিজেও কাঁদতাম আর আমার দাদু এসে আমাদের সান্ত্বনা দিতেন।
আমার একটা কাজলা দিদি ছিল তার নাম মুন্নি ছোট বেলায় মাত্র ২ ক্লাসে থাকার সময় সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে।
ছোট বেলায় আমি যখন পৃথিবীতে পদার্পণ করার অপেক্ষা করছি আর সেই ক্ষনেই মুন্নি সবাইকে ফাঁকি দেয় এমনকি আমাকে দেখার জন্যও আরো একটু সময় সে অপেক্ষা করেনি এ জন্যে খুব রাগ হত দিদির উপর। অথচ আমার দিদি নাকি সবাইকে বলত ওর একটা ভাই হবে, আর দিদি তাকে নিয়ে ওর স্কুলে যাবে ওদের স্কুল থেকে আসার পথে হিন্দু বাড়ীতে যেই শিউলি গাছটার নিচে ফুলের বিচানার মত হয়, দিদি আমাকে সাথে নিয়ে সবগুলো ফুল কুড়িয়ে তবেই বাড়ী ফিরবে।
সবাই তার ছোট বেলায় দাদা-দাদু ও নানা-নানুর কাছে রুপকথার গল্প শুনে আমিও শুনেছিলাম কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় পছন্দের fairytale ছিল আমার দিদিকে নিয়ে স্মৃতি কথা। আমার দিদি নাকি সত্যিই পরী ছিল তাই নাকি বেশী দিন আমাদের সাথে থাকতে পারেনি পরীদের অনেক অনেক কাজ থাকে সে জন্যেই সে চলেগিয়েছিল। আমার দিদি সম্পর্কে পাশের বাড়ীর কাকী-চাচী ও বড় বোনদের কাছে শুনেছি, আবার দিদির সাথে স্কুলে যারা পড়ত তাদের কাছে শুনেছি, দিদি চলে যাওয়ার ১৩/১৪ বছর পর কোন কারনে দিদির স্কুলের এক স্যারের সাথে কথা হয়েছিল ঐ স্যারের কাছে শুনেছিলাম দিদি ছিল তাঁদের খুব আদরের ছাত্রী ও নাকি খুব বুদ্ধিমতি ছিল রোল নং-১ ছিল, ওর চোখ গুলো দিয়ে কেমন যেন দ্যুতি চড়িয়ে পড়ত স্যার আমার সাথে দীদির অনেক স্মৃতিকথা বললেন।
আর অথচ আমার মায়ের কাছে দিদি সম্পর্কে তেমন কথা শুনতে পাইনি, নিজে জোর করে শুনতেও যাই নি কারন দিদির কথা মনে করে দিলেই মা চুপি চুপি কাঁদতে থাকে। ছোট বেলায় দেখতাম মা প্রতিদিন মাগরিবের নামাজ পড়ার পরে নামাজের বিছানায় বসে দিদির জন্য দোয়া করত আর চুপি চুপি কাঁদত। আমার মা এখনও কাঁদে কবে যেন মাকে বলেই ফেললাম দিদি তোমাদের বহুআগেই ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে অথচ তুমি দিদিকেই বেশী ভালবাস, মা উত্তরে বলেছিল তোর সন্তান হলে বুঝবি। দিদি মা-বাবার প্রথম সন্তান ছিল ওনাদের জীবনে আলোর দ্যুতি নিয়ে দিদি এসেছিল আর সবাইকে সারা জীবনের জন্য কাঁদতে দিয়ে চলে গিয়েছে। আমার কেন জানি মনেহয় দিদিটা থাকলে আমার জীবনটা অন্যরকম হত, এখন অনেক মজা হত ওর ছেলে-মেয়ের সাথে কত মজা করতাম ওরা যখন মামা বলে কিছু আব্দার করত সব উজাড় করে হলেও আব্দার রক্ষা করতাম।
আমার দিদি চলে গেছে প্রায় ২যুগ হল অথচ আত্মীয়স্বজন এখনও আমার মা-বাবাকে দিদির নাম দিয়েই ডাকে... বড় খালা যখন আমার আম্মাকে বলে মুন্নির আম্মা, আর বাবাকে বলে মুন্নির বাবা তখন মনের ভেতর কেমন যেন করে উঠে। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকেই দিদির নামে মানে মুন্নি নামের প্রতি আমার এক অসম্ভব দূর্বলতা কাজ করে মুন্নি নামের আড়ালে থাকা মেয়েদের মাঝে দিদিকে খুঁজি। মাঝে মাঝে খুব করে জানতে ইচ্ছে হয়, এমন কেন হল? দিদি তুই এভাবে কেন চলে গেলি???
বিদ্র: এটা গল্প নয় তবে গল্প হলেই ভাল হত! জানি খুব অগোছালো করে লিখেছি, নিজের কথাগুলো কিভাবে গুছিয়ে লিখতে হয় তা আমার জানা নেই। ব্লগে দিব ভাবিনি পরে ভাবলাম দিদি যদি থাকত তাহলে অনেকইতো দিদিকে জানত চলে গেছে তাই বলে জানবে না কেন???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।