আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্রষ্টা কোন ধর্মের ??? আলোচনা বিতর্ক ; কেন্দ্র Queens Library, NEWYORK

আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । যেটা আমার কাছে ভুল মনে হয় , তার তাত্ক্ষণিক যুক্তিসম্মত প্রতিবাদ করতে আমার ব সেদিন কি বার ছিল, নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে সেদিন ও সামনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চলছিল লাইব্রেরীতে।

সারা সকাল, দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হয়ে আসল, তখন লাইব্রেরীর ঐ টেবিল এ বসা জনা কয়েক মানুষ ক্লান্তি দূর করতেই হোক, বা পরীক্ষার দুশ্চিন্তা ঢাকতেই হোক স্রষ্টা কে নিয়ে হালকা আলোচনা শুরু করে দিলাম। শুরুটা হালকা ভাবে হলেও তাতে কিছুটা উত্তেজনা যোগ হতে সময় বেশি নেয় নাই । আলোচনার শুরুটা হয় আসলে খুব ই হঠাত করে। টেবিল এ বসা একজন বলে উঠেন, “আমাকে এ পরীক্ষায় পাশ করাতে পারে একমাত্র আমার সৃষ্টিকর্তা ই। “ তার উত্তরে কলাম্বিয়ান কোঁকড়াচুলো কৃষ্ণবর্ণ মধ্যবয়স্কা রমণী, যিনি ৩৫-৩৮ বছর বয়সী এবং কলাম্বিয়া থেকে মাইগ্রেট করে আসছেন আমেরিকায়, Social care giver বা Social worker এ ধরণের একটা কাজ এর জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তিনি বলে উঠলেন, “সৃষ্টিকর্তা বলে মানুষ যাদের উপাসনা পৃথিবীতে করে, আসলে তারা কেউ বাস্তবে নেই” ।

টেবিল এ বসা আর ২ জন ব্যক্তি। একজন অত্যন্ত শক্তিশালী গড়নের বাদামী বর্ণের মেক্সিকান খ্রিস্টান ডাক্তার তরুণী আর আরেকজন আমি, বাংলাদেশি মুসলিম ডাক্তার । আমরা পরের ২ জন ব্যাপক ভাবে অসম্মতি জানালাম। মধ্যবয়স্কা আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন মুচকি হেসে, কেন আমাদের এই অসম্মতি ! আমরা ২ জন ই তাকে বুঝালাম, আমাদের ২ জন কেই পেশাগত কারণেই এমন বিষয়ের উপর পড়াশুনা করতে হয়েছে, যে স্রষ্টার মহিমা আর কেউ আমাদের চেয়ে বেশি বুঝতে পারবেন না। মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকে শুরু হয় স্রষ্টার মহিমা , যা সারা জীবন ব্যাপী চলতে থাকে।

যারা এটা বিশ্বাস করে না,তারা যে চরম বোকা। কারণ সত্য কে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই ! মায়ের পেটে প্রতি ঘন্টায়, প্রতি দিন, প্রতি সপ্তাহে, একটা শিশু যেভাবে একটা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু সিস্টেমিক উপায়ে বেড়ে উঠে, যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিটা অংগ, ব্রেইন ম্যাচিউর হয়, পেট থেকে বের হওয়ার পরেও এই যে আমরা বসে আছে, শ্বাস নিচ্ছি, অক্সিজেন টাকে ব্যবহার করে যেভাবে শক্তি আমরা উতপাদন করে যাচ্ছি, এবং সবার জন্য যে নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই, তার পেছনে রয়েছে এক অসম্ভব সায়েন্স। যে সায়েন্স হঠাত করে আসতে পারে না, বা কাকতালীয় হতে ই পারে না। অবশ্য ই একজন অনেক জ্ঞানী, অনেক ক্ষমতাধর এই পুরা বিশ্বজগত নিয়ন্ত্রণ করছেন এটা মিথ্যা হতে পারেনা। তাঁর উপর বিশ্বাস রাখা উচিত।

এবার ও কলাম্বিয়ান ভদ্রমহিলা বললেন, “তোমরা যা যা বললে, তা কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু কোন ধর্ম অনুযায়ী তাকে ডাকলে আসলেই পাওয়া যাবে তা কি তোমরা বলতে পারবে ? তোমরা যে যেই ধর্মের সেই ধর্ম ই সত্য এটাই বলবে , এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি যে নিশ্চিত নই !” এবার আমার আর মেক্সিকান ডাক্তারের পালা । আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম, আর একটা বিষয়ে মত প্রকাশ করলাম, সৃষ্টির আদিযুগ থেকে মানুষ বুঝতে পারছে যে, স্রষ্টা আছে, না হলে এ বিশ্বজগত তৈরি হয় না। কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু এক সাথে এত কিছু কাকতালীয় হতে পারেনা। স্রষ্টা কে পাওয়ার অনেক চেষ্টা মানুষ করে আসছে।

বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়েছেন। স্রষ্টা কে পাওয়ার জন্য কোন ধর্ম টা সঠিক, সেটা বুঝতে হলে সম্ভবত মৃত্যুর পরেও আরো অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে স্রষ্টা উপর ভরসা রাখলে ভেতর থেকে একটা ভরসা, একটা শক্তি পাওয়া যায় যেটা খুব ই দরকার। আর সম্ভবত যে যেভাবে স্রষ্টাকে ডাকে, তার সেই বিশ্বাস কে নিয়ে অন্য কোন ধর্মের মানুষদের উপহাস , ঠাট্টা করা উচিত না। কারণ অমোঘ নিয়মে আমরা তৈরি হয়েছি, এটা সত্য।

যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের এই জগত সৃষ্টি করেছেন, তিনি কোন ধর্মের তা জানি না, তবে তিনি আছেন। তার অসম্ভব জ্ঞানের খুব সামান্য নজির আমরা আমাদের চারপাশে দেখতে পাই, যা দেখি , যা বুঝতে পারি, তা থেকে ধারণা করা ও কষ্টকত তিনি কতটা জ্ঞানী ! আমার এই লেখাটা কি ছোটগল্প বলা যায় কিনা জানি না, তবে এটা একটা আলোচনার সারসংক্ষেপ। যে ধরণের আলোচনা হোস্টেল এ , আড্ডায় , বিভিন্ন সময় হয়। আমার নিজের বিশ্বাস , স্রষ্টা আছেন, তাকে থাকতেই হবে। তবে আমি যে নিয়মে তাকে ডাকি, তার প্রতি কারো অশ্রদ্ধা যেমন আমি চাই না, তেমনি অন্যেরা যেভাবে তাকে পেতে চান, তার প্রতি কোন উপহাস ঠাট্টা আমি করতে চাই না।

এই পৃথিবী তে আসছি মাত্র অল্প কিছুদিনের জন্য। এ কয়টা দিন একটু ভালভাবে, হিংসা বিদ্বেষ দূরে সরিয়ে রেখে সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্প্রীতি র মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করাটা ই সম্ভবত শ্রেয়। আর হ্যাঁ, অবশ্য ই স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।