মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে শুরু হওয়া গণজাগরণের দুইমাস পূর্তি হলো আজ শুক্রবার। এসময়ের মধ্যে গণজাগরণের লাভ-ক্ষতির হিসেব হয়তো আমরা করবো না। কিন্তু স্পষ্ট একটি সমাপ্তি সুর যে কোনো এক মহল থেকে বাঁজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই দু’মাসে দেশের পরিস্থিতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। গণজাগরণের প্র্রভাব পড়েছে দেশের সর্বস্তরে, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। নানাভাবে নানা মোড় ঘুরেছে এই আন্দোলন। তাকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়েছে যেমন অপরিসীম পরিসরে, তেমনি সমালোচনাও নেহায়েত কম হয়নি। শাহবাগের গণজাগরণের মাধ্যমে দেশের মানুষ অনন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন।
কাদের মোল্লার রায় মেনে না নিতে পেরে শাহবাগে জড়ো হয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন সব বয়েসী মানুষই।
এ ভাবেই শাহবাগের ছোট্ট পরিসরটি ক্রমান্বয়ে একটি বাংলাদেশ হয়ে ওঠে কিছু সময়ের মধ্যে। লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয় শাহবাগে। সবার এক দাবি, এক স্লোগান- ‘ফাঁসি’, ফাঁসি, অনেকেই একে বলেছেন ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’, কেউ বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত’ অধ্যায়ের কাজ শুরু করেছেন তরুণ প্রজন্ম।
এখানে একের পর এক কর্মসূচি এসেছে, তার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। কখনো নীরবতা পালন, কখনো মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে আলোকিত করার চেষ্টা অন্তরাত্মা। এখানে গণস্বাক্ষরে মন খুলে অনেকেই লিখেছেন নিজেদের দাবির কথা।
গণজাগরণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল আলোচনায় সরগরম। কখনো সরকারের ভূমিকা, কখনো বিরোধীদলের ভূমিকা নিয়ে মানুষ কথা বলেছে সব আড্ডায়।
গণমাধ্যমে গণজাগরণের প্রচার হার মানিয়েছে ইতিহাসের অনেক বড় ঘটনাকেও। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, স্লোগানশিল্পী লাকী আক্তার হয়ে ওঠেন দেশের কোটি মানুষের প্রতিনিধি। ইমরান যখন বলেছেন, ‘জয় বাংলা’, প্রবীণরা তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিটি দেখেছেন। আর লাকী যখন স্লোগান দেন, ‘রাজাকারের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’, তখন নতুন প্রজন্ম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন নিজেদের স্বদেশ কলঙ্কমুক্ত করার মানসে।
গণজাগরণের দু’মাস পূর্তিতে এর মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে যে তীব্র গণআন্দোলন সূচিত হয়েছিল পাঁচই ফেব্রুয়ারি, আজ পাঁচই এপ্রিল তার দুইমাস হতে চললো।
এর মধ্যেই আমরা হারিয়েছি আমাদের সহযোদ্ধাদের, আন্দোলন সময়ের প্রয়োজনেই নানা মাত্রায় রূপ লাভ করেছে। এখনও অনেক পথ চলার বাকি, এখনও বিজয়ের সূর্যটা বহুদূর। ’’ তিনি লিখেছেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের শাশ্বত চেতনাকে বুকে নিয়ে এ গণআন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে আমাদের মানবিক যূথবদ্ধতা। আমাদের সংগ্রাম চলছেই, চলবেই। আরও দৃপ্ত, আরও ব্যাপ্ত, আরও উজ্জ্বল কিন্তু লক্ষ্যে স্থির এ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হতেই হবে।
জয় বাংলা। ’’
এদিকে, এই গণজাগরণ নিয়ে তর্কবিতর্ক থাকলেও, ফেব্রুয়ারির ৫ম দিন থেকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব এদেশের নতুন প্রজন্মের অবাক করা ঐক্য জাতি দেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন আশাবাদী প্রবীণেরা। যারা এই প্রজন্ম নিয়ে হতাশ ছিলেন, আক্ষেপ করতেন, ‘‘এরা কোনো কাজের না, সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকে’’- তারা অবাক হয়ে দেখেছেন প্রজন্মের শক্তি। সব বয়েসীরা এক হয়েছেন এই জাগরণে। এক স্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়েছেন সবাই।
ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছে পরিস্থিতিতে। এখন সেই ভিড় নেই শাহবাগে। সেই চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে।
তবে মঞ্চ আছে, রয়েছে নিরাপত্তাও। সঙ্গে রয়ে গেছে আন্দোলনকারীদের একাত্মতা!
এ প্রজন্মের তরুণেরা আশাবাদী।
তাদের বক্তব্য ‘যত যাই হোক, আন্দোলন সফল হবে, রচিত হবে নতুন ইতিহাস, কলঙ্কমুক্ত হবে জাতি ও দেশ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।