প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনির হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সরকারের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দানের সক্ষমতা নিয়ে আলোকপাত করেছেন (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। এরপর থেকে বিষয়টি বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে।
নিহত সাংবাদিক দম্পতি একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং সেখানেই ঘাতক বা ঘাতকরা তাদের প্রাণপাত ঘটায়। ঢাকা শহরের ফ্ল্যাট ব্যবস্থা দুই দশক পেরিয়ে এখন অনেকটাই প্রতিষ্ঠানিকতা লাভ করেছে। অপরিচিত লোকের ফ্ল্যাটে এসে হামলে পড়ার সুযোগ সিস্টেমের কারণেই খুব একটা থাকে না।
দারোয়ান ইন্টারকমে না জানালে আগন্তুকের ঘরে ঢোকার সুযোগ নেই। খুনি বা খুনিরা দরজা ভেঙে অনুপ্রবেশ করেছে এমনও নয়। সেই আলোকে অনুমোদিত অভ্যাগতরূপী ঘাতক থেকে নিরাপত্তা দেয়া তো অসম্ভবই। আবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এভাবে বিশ্লিষ্ট বক্তব্য দেয়া তদন্ত নিয়ে অনাহুত প্রাক-অনুমান ও অশেষ জল্পনা-কল্পনাকে অবলীলায় বাড়িয়ে তুলত। যাঁরা টকশোয় আলোচনা বা উপসম্পাদকীয়তে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন তাঁদের বিবেচনায় এ বিষয়টি না থাকায় হেতুহীন ভুলবার্তা ছড়ানোর ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে।
আমাদের দেশেও অপরাধ তদন্তে ইদানীং আধুনিক প্রযুক্তি ও পেশাদারিত্বের প্রয়োগ ব্যাপকতা লাভ করছে। ইতোপূর্বেও বেশকিছু জটিল ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্যোন্মচনের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এ কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সময় বেঁধে অপরাধীকে গ্রেফতার বা মোটিভ উদ্ধারের ঘোষণা অনুচিত হলেও কারও অসম্ভব মনে হয় না। একটি সময়সীমা বেঁধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু আজকালের মধ্যে খুনি বা খুনিরা ধরা পড়লে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অন্ততঃ এ ইস্যুতে যে সমালোচনা সইতে হল তার উপশম করতে একটি বাক্যও কেউ ব্যয় কি করবেন।
আমরা সকলেই প্রচলিত ধারণা ও অভিজ্ঞতায় ঘটনাকে ব্যাখ্যা করি। এক্ষেত্রে উচ্চ প্রাযুক্তিক সুবিধা ব্যবহারে অনায়াসেই হত্যাকারী ধরা পড়বে বলে মনে করেছি। নিহত দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘকে ইন্টারভিউ করে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা থেকে জনমনে এমন ধারণা তৈরি হওয়া খুবই সংগত যে, এ ঘটনা বিরাজমান সামাজিক অস্থিরতাপ্রসূত আর দশটি ঘটনা ভিন্ন কিছুই নয়। বিপর্যস্ত শিশুটিকে এভাবে টানা-হেঁচড়া করা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্যের সমালোচনাকে সার্বিকতা দিতে এ অংশটির আলোকপাত অপরিহার্য ছিল।
যা অনুপস্থিত থেকে গেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ব্যাপারটিতে রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান আগাম অনেক কিছুই জেনে থাকবেন বলাই বাহুল্য। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ব্লগ-অন লাইন মতামত-কলাম কিংবা মুক্ত আলোচনায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁদের অধিকাংশের মন্তব্যে গভীরতা হারিয়ে গেছে প্রগলভ ভাবালুতায়। বহিরাগত দস্যুদল এসে এহেন নৃশংসতা চালানোর কথা জেনেও তিনি আলোচ্য বক্তব্য দিয়েছেন তা কারও ভাবার প্রশ্ন নেই।
তাই এ মন্তব্যে চিন্তার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন বলে-লিখে পর্যাপ্ত দায়িত্ববোধের স্বাক্ষর রাখেননি।
ধারাবাহিক নিবিড় তদন্ত থেকেই মোটিভ উদ্ধার হয়েছে। লক্ষ করি, মোটিভ জানার কথা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দুদিন পরেই গণমাধ্যমে এসেছে। মোটিভ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রদানের আগেই জানা ছিল তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না ।
এ নিয়ে অনেকেই আর দু’বছর পর নির্বাচনঃ একথা পাঠক প্রতিক্রিয়ায় বারংবার ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু এ কথাটি সর্বাত্মক স্মরণ রেখে জনগণকেই সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কৌশলগত কারণে হলেও আওয়ামী লীগের তাগিদ সবচেয়ে বেশি। এত সমালোচনায়ও অবিচল থেকে তদন্তে কোনো হঠকারিতা না করাও একটি ভালো লক্ষণ।
পুলিশ আশ্বস্ত করেছে অচিরেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে। তখন নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্য মন্তব্যের কার্যকারণ জানা যাবে। এ নিয়ে ভুল বোঝায় বিপন্ন বোধকারীরা এ থেকে নির্ভর হবেন।
সেদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে সংবাদ শোঁকার নাক দিয়ে লাইন বিটুইন লাইনসকে এক্সক্লুসিভ সংবাদ হিসেবে ছাপতে না পারায় কোনো কোনো পেশানিষ্ঠ সংবাদকর্মী হয়ত আফসোসও করবেন। আর এর পুনরাবৃত্তি না করায় অবধারিতই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবেন, এই শুভ কামনাই করি।
হুসনা মেহেরুবা টুম্পা ,
লেখক : আইন বিষয়ে স্নাতক ও একটি সান্ধ্যকালীন পত্রিকার সম্পাদক।
সূত্র: আমাদের সময় ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।