এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের ত ই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝিঁ পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ। http://zizipoka.com/ অধিবর্ষ বা লিপইয়ার (Leap year)
২০১২ সালটা হবে লিপইয়ার এটা আমরা সবাই জানি। সাধারণ সৌর বছরগুলি ৩৬৫দিনে হয়ে থাকে কিন্তু লিপইয়ার হয় ৩৬৬দিন। এই অতিরিক্ত ১দিন ফোব্রুয়ারি মাসে যোগ করে ২৯দিনে ফেব্রুয়ারি মাস গোনা হয়। বর্তমানে আমরা যেই ক্যালেন্ডার ব্যবহার কি সেটি হচ্ছে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার।
এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে আমরা তাকে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার বলি।
কিন্তু কেন এই লিপইয়ার?
আমরা হিসাব করি ৩৬৫ দিনে এক বছর অর্থাৎ পৃথিবী সূর্যের চার দিকে একবার ঘুরে আসে ৩৬৫ দিনে। কিন্তু বছরের প্রকৃত দৈর্ঘ্য হলো ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড , অর্থাৎ পৃথিবীর এই সময়টুকু লাগে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর আমরা ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড সময় পিছিয়ে যাচ্ছি হিসেবে না ধরার দরুন। ফলে চার বছর পরে এই বাদ যাওয়া সময়টুকু প্রায় ২৪ ঘণ্টায় পরিণত হয় আর সেই ২৪ ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্যই লিপইয়ারের আবিষ্কার।
লিপইয়ারের প্রচলন।
আগেই বলেছি বছরের প্রকৃত দৈর্ঘ্য হলো ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এবং তার সহকারী জ্যোতির্বিদ সোসিজেনিস ৩৬৫ দিনে এক বছর হবে বলে নতুন গণনা পদ্ধতি শুরু করেন। ৩৬৫দিনে বছর গণনা করার ফলে বাদ যাওয় ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড সময়কে হিসেবে ধরার জন্য ৪ বছর পর পর ৩৬৬ দিনে একটি বছর গণনা করা হবে বলে ঠিক করলেন, সেটাই আজকের এই লিপইয়ার।
বেচারা ফেব্রুয়ারি
তখনকার নিয়মানুযায়ী বছরের ৭টি মাস হত ৩০ দিনে আর বাকি ৫টি মাস হত ৩১ দিনে।
জুলিয়াস সিজার তৎকালীন পঞ্চম মাস কুইন্টালিসকে নিজের নামানুসারে জুলিয়াস নাম দেন, সেইটাই আজকের সপ্তম মাস জুলাই। অর্থাৎ জুলিয়াস সিজার তখনকার প্রচলিত মাসের ক্রম পরিবর্তন করে তৎকালীন একাদশ মাস জানুয়ারিয়াস থেকে বছর গণনা শুরু করে। পরবর্তী রোমান সম্রাট অগাস্টাস পূর্ববর্তী ষষ্ঠ মাস সেক্সটিলিস এর নাম পাল্টে রাখেন অগাস্ট। দুই রোমান সম্রাটই নিজেদের নামের মাস দুটিকে ৩১ দিন করে বরাদ্দ দেন । দুঃখজনক ভাবে এই দুটি দিনই দুই সম্রাট কেটে নেন বেচারা ফেব্রুয়ারির কোঠা থেকে, ফলে ফেব্রুয়ারির ৩০ দিনের দৌড় গিয়ে থেমে যায় ২৮ দিনে।
এই জন্যই বেচারা ফেব্রুয়ারির প্রতি দয়া দেখিয়ে লিপইয়ারের অতিরিক্ত ১টি দিন গিয়ে তার ভাগ্যে জোটে।
আরো কিছু সমস্যা
সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর তৈরি এই লিপইয়ারও কিন্তু দিনক্ষণের সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে পারেনি, কারণ সেখানে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় এক সাধারণ সৌর বছর ধরেছিলেন আর প্রতি চার বছর পরপর ৬×৪ = ২৪ ঘন্টা বাড়িয়ে ৩৬৬ দিনে লিপইয়ার ধরেছিলেন। ফলে প্রতি বছরেই অতিরিক্ত কয়েক মিনিট যোগ হতে থাকে।
পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী দেখেন যে ৩৬৫ দিনে বছর ধরলে চার বছরে ২৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময় অতিরিক্ত থেকে যায়, আবার ১ দিন বাড়ালেও কিছুটা অতিরিক্ত বাড়ানো হয়। তিনি হিসাব করে দেখলেন যে ৪০০ বছরে মোট ৯৬ দিন ২১ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড বাড়ানো দরকার, কিন্তু ৪ দিয়ে বিভাজ্য সাল গুলিকে লিপইয়ার ধরলে দিনের সংখ্যা হয় ১০০টি।
দেখা যাচ্ছে ৪০০ বছরে ১০০টি লিপইয়ার না হয়ে ৯৭টি লিপইয়ার হলেই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠা যায়। তাই তিনি ঠিক করলেন যে সমস্ত সাল গুলি ১০০ দিয়ে বিভাজ্য হবে সেগুলিকে লিপইয়ার হতে হলে অবশ্যই ৪০০ দিয়েও বিভাজ্য হতে হবে। এই হিসাব অনুযায়ী ২১০০, ২২০০, ২৩০০ সাল লিপইয়ার হবে না তবে ২৪০০ সাল লিপইয়ার হবে ।
১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী হিসাব করে দেখলেন যে, সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর ক্যালেন্ডারে চলতে চলতে সূর্যের সাথে সঠিক সময় না মানায় আমরা প্রায় ১০ দিন এগিয়ে আছি। তাই তিনি সূর্যের সাথে প্রকৃত সামঞ্জস্য আনার জন্য ক্যালেন্ডার থেকে ১০ দিন বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন ।
কিন্তু তার সেই প্রস্তাব তখন আমলে আনা হয় না, পরবর্তীতে ১৭৫২ সালে যখন ইংল্যান্ডে ক্যালেন্ডার সংশোধন করা হয় ততদিনে ১০ দিনের জায়গায় ১১ দিন বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ফলে ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ২রা সেপ্টেম্বরের পরে ১১ দিন বাদ দিয়ে সরাসরি ১৪ সেপ্টেম্বরে চলে যেতে হয়। আর রাশিয়াতে এই সংস্কার করা হয় গত শতকে ১৩ দিন বাদ দিয়ে ।
কিন্তু এখানেই হিসাবের শেষ নয়। উপরের হিসাবে ৪০০ বছরে মোট ৯৬ দিন ২১ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড এর বদলে আমরা বাড়িয়েছি ৯৭ দিন।
তাহলে ৪০০ বছরে ২ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড ঘাটতি রয়ে যায় । এই হিসাবে প্রতি ৩৩০৫ বছরে ১ দিন কম পড়ে। গ্রেগরীর সংস্কার ১৬০০ সাল থেকে কার্যকর ধরে ৪৯০৫ সালে ১ দিন পুরো হয়ে যাবে। এই ১দিনকে সমন্বয় করতে ৪৯০৪ অথবা ৪৯০৮ সালকে নন-লিপইয়ার ধরতে হবে । যদি ৪৯০৪ সালের লিপইয়ার বাদ দেওয়া হয় তবে ৪৮৯৬ সালের পর লিপইয়ার হবে ১২ বছর পর ৪৯০৮ সালে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে লিপইয়ারের ২টি সূত্র রয়েছে।
১। যে সালগুলি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে সেগুলি লিপইয়ার।
২। যে সমস্ত সাল গুলি ১০০ দিয়ে বিভাজ্য হবে সেগুলিকে লিপইয়ার হতে হলে অবশ্যই ৪০০ দিয়েও বিভাজ্য হতে হবে।
তথ্য সূত্র :
http://listsoplenty.com/blog/?p=11922
http://en.wikipedia.org/wiki/Leap_year
Click This Link
http://www.infoplease.com/spot/leapyear1.html
এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।