মানুষের সাধ্যেরে বাইরে কিছুই নেই, যদি তার নির্ভেজাল বোধগম্যতা থেকে থাকে। না, কোন সিনেমার গল্প নয়। এক নীরেট বাস্তব জীবন কাহিনী। ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌনপল্লীতে এখন তাদের তিন প্রজন্মের বসবাস। যৌন কর্মী হয়ে বাচঁতে হলো এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে।
এখনো যৌনকর্মী হয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কন্যা এবং নাতনিকে। দু’মুঠো ভাতের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র নুর আলীকে।
১৯৭১ সাল। পিরোজপুর জেলার বাদুরা গ্রামের আমজাদ হোসেন চাকুরী করেন পুলিশ বিভাগে। পোষ্টিং খুলনাতে।
খুলনার বাসায় তার স্ত্রী দু’কন্যা এবং এক পুত্র। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমজাদ হোসেন তার চাকুরীস্থল খুলনা থেকেই যোগদেন যুদ্ধে। যুদ্বের সময় ছিলেন সুন্দরবন এলাকায়। পুরো যুদ্বের সময় বাসায় ফেরা হয়নি তার। বাসায় যোগাযোগের চেয়ে মুক্তযুদ্ধকে বড় করে দেখেছেন তিনি।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমজাদ হোসেন তার সহযোদ্ধাদের বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হবার পর বাসায় ফিরবেন,বিজয়ের বেশে। বিজয় এসেছে কিন্ত বাড়ি ফেরা হয়নি আমজাদ হোসেনের। বিজয়ের একেবারে দ্বার প্রান্তে এসে নভেম্বর মাসে পাকিস্তানী সেনাদের সাথে সম্মুখ সমরে শহীদ হন ওই অকুতোভয় বীর সেনানী।
সে সময়ে বাগেরহাট এবং পিরোজপুর জেলাকে মুক্ত করার প্রাণপন লড়াই চলছিলো। সম্মুখ যুদ্বে পরাজিত খান সেনারা পিছু হটছিলো লঞ্চ যোগে।
খান সেনারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য কমান্ডারের নির্দেশে ছোট নৌকায় সাতজন সঙ্গীকে নিয়ে খান সেনাদের গতিরোধ করে আমজাদ হোসেন। প্রায় দু’ঘন্টার মরনপন লড়াই শেষে গুলি ফুরিয়ে গেলে সাথের মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান তিনি। শেষ গুলিটি ও শেষ হবার পর খান সেনাদের একটি বুলেটের আঘাতে বালেশ্বর নদীতে মাথায় গুলিবিদ্ব হয়ে শহীদ হন ও বীর মুক্তিযোদ্বা।
ওই শহীদ মুক্তিযোদ্বার লাশটি ওখুঁজে পায়নি তার সহযোদ্বারা। দেশমাতৃকার টানে উৎসর্গ করা ওই শহীদের মরদেহ বঙ্গোপসাগরের লোনা জলে লীন হয়ে এনে দিয়েছে আমাদের স্বাধীন মাতৃভুমি আমাদের লালসবুজের জাতীয় পতাকা আর সেই স্বাধীন দেশে কতজনে কতকি হয়েছে সেটা সকলের জানা কিন্ত কি হয়েছে ওই শহীদ মুক্তিযোদ্বার সন্তানদের।
তাদের ঠিকানা হয়েছে যৌন পল্লীতে। দু’মঠো ভাতের জন্য তাদের বাঁচতে হয়েছে পতিতার জীবন নিয়ে। ‘৭১ থেকে ২০১১ সাল মাঝে চল্লিশ বছর। ওই শহীদ মুক্তযোদ্ধার পরিবারের জীবন কাটছে যৌনপল্লীর অন্ধকার গলিতে। পিরোজপুর শহরে প্রেসক্লাবের সামনে টাঙ্গানো খোদাই করা স্মৃতি ফলকের কালো হরফে বড় বড় করে লেখা ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম।
তার নামে পিরোজপুর শহরে আছে একটি সড়ক ও।
ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌনপল্লীতে বসবাসকারী ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কন্যা এবং পুত্রের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। প্রতিবেদকের কাছে তারা বর্ননা করেন তাদের দুর্বিসহ জীবনের কাহিনী। শহীদ মুক্তিযোদ্বার স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন যুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহ সে দিন গুলোর কথা। তিনি স্বামীর শহীদ হওয়ার খবর পান যুদ্বের প্রায় দেড় মাস পরে।
দুই কন্যা এবং এক নাবালক পুত্র নিয়ে তখন তার চোখেমুখে অন্ধকার। খুলনাতে তাদের আহারের কোন সংস্থান নেই। সন্তানদের নিয়ে আছিয়া বেগম ফিরে আসেন পিরোজপুরের বাদুরা গ্রামে। সেখানে সংসারে ঠাইঁ হয় না তাদের। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় আছিয়া বেগম এবং সন্তানদের।
শুরু হয় তাদের ঠেলা ধাক্কার জীবন। শেষ পর্যন্ত আছিয়া বেগমের ঠাইঁ হয় পটুয়াখালীর যৌন পল্লীতে। সেখান থেকে আরো কয়েকটি যৌনপ্লী ঘুরে এখন তাদের আশ্রয়স্থল ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌন পল্লীতে। এক সময়ে যৌনকর্মীর জীবন শুরু হয়েছিলো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের স্ত্রীর। ধীরে ধীরে যৌন কর্মীর পেশায় জড়িয়ে পড়তে হয় তার দু’কন্যা রুশি এবং জরিনার।
এখন তাদের পর যৌনকর্মী হয়ে জীবন ধারন করতে হচ্ছে রুশির কন্যা শিল্পীর। যৌনকর্মী মা এবং বোনদের আয়ে জীবন বাচাঁতে হচ্ছে শহীদ মুক্তিযোদ্বার একমাত্র ছেলে নুর আলীর।
সরকার যে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এবং সুযোগ সুবিধার আওতা বাড়িয়ে মুক্তিযোদ্বাদের নাতি নাতনিদের পর্যন্ত সম্প্রসারন করেছে সে সময় একজন যৌনকর্মী হয়ে বাচঁতে হয়েছে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্বার স্ত্রীর পর তার কন্যাদের এখন যৌনকর্মীর হয়ে বেচেঁ থাকতে হচ্ছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আমজাদ হোসেনের নাতনিকে।
" শহীদ মুক্তিযোদ্বার বিধবা স্ত্রী আছিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলেন মুক্তিযুদ্ব অন্যদের কি দিয়েছে জানি না আমাকে বাচঁতে হয়েছে যৌন কর্মীর জীবন নিয়ে। তারা জানে না এ দেশে মুক্তিযোদ্বাদের কোন সম্মান দেয়া হয় কি না।
"
সূত্রঃ আমারব্লগডটকম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।