বাংলাসাহিত্যের তুমুল জনপ্রিয় একটি উপন্যাস ‘দেবদাস’। অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এ উপন্যাস অবলম্বনে ভারতে ও বাংলাদেশে যুগে যুগে তৈরি হয়েছে অসংখ্য টিভিনাটক, মঞ্চনাটক, যাত্রাপালা ও চলচ্চিত্র। দেশীয় চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম দ্বিতীয়বারের মতো নির্মাণ করেছে ‘দেবদাস’ ছবি। কিন্তু সম্পূর্ণ হাস্যকর ও অযৌক্তিক কারণে সেন্সর বোর্ড এটি আটকে রেখেছে।
শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, মৌসুমী, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ শিল্পীদের নিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘দেবদাস’ ছবিটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় গত বছরই।
পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ছাড়পত্রের জন্য ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেন। জানুয়ারি শেষ সপ্তাহে ছবিটির ছাড়পত্রের জন্য প্রথম দফায় এটি সেন্সর বোর্ডে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু ছবিটিকে ছাড়পত্র দিতে বোর্ড সদস্যরা আপত্তি জানান। সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় ছবিটি সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের দেখানো হয়। এবারও সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা ছবিটিকে ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সেন্সর বোর্ডের নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানায়, ছবিটির তিনটি দৃশ্যে চুনীলালের ভূমিকায় শহীদুজ্জামানের পরনের ‘মুজিব কোট’-ই আটকে দিয়েছে ছবিটির সেন্সর। চুনীলালের মতো মদ্যপায়ী একটি চরিত্রের পরনে মুজিব কোট থাকাটা মেনে নিতে পারছেন না সেন্সর বোর্ডের একাধিক সদস্য।
‘দেবদাস’ ছবিটির সেন্সর না দেওয়ার কারণ হিসেবে সেন্সর বোর্ডের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবহির্ভূত পোশাক চুনিলাল চরিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। সুতরাং দৃশ্যগুলো কর্তন করা সাপেক্ষে ছবিটি মুক্তির জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে।
সেন্সর বোর্ডে এই আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চুনিলাল চরিত্রের অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বেশিরভাগ দৃশ্যেই অভিনয় করেছেন ধুতি আর পাঞ্জবি পড়ে।
তিনটি দৃশ্যে চুনিলাল পাঞ্জাবির উপর খয়েরি রঙের কটি পড়েছেন। এটাকেই সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা ধরে নিয়েছেন মুজিব কোট। তাও যদি হয়, সমস্যাটা কি? মুজিব কোটের আদলের পোশাকগুলো কি আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে না? তারা কি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যবহির্ভূত কাজ করেছেন? এই তিনটি দৃশ্য কর্তন না করলে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। তাদের এই Ÿক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত। একটি পোশাকের কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি কীভাবে হতে পারে সে ব্যাখ্যাও আমার জানা নেই!’
সেন্সর বোর্ডের একজন প্রভাবশালী সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি নেগেটিভ চরিত্রের পরনে মুজিব কোট থাকাটা মোটেও শোভনীয় নয়।
তিনটি দৃশ্য কর্তন করে পুনরায় সেন্সরের জন্য জমা না দিলে সেন্সর বোর্ডের সবাই ‘দেবদাস’-কে ছাড়পত্র প্রদান না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে। ’
এদিকে চাষী নজরুল ইসলাম কোনো অযৌক্তিক ও হাস্যকর কারণে ছবির তিনটি দৃশ্য কর্তন করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘১৯১৭ সালে রচিত ‘দেবদাস’ উপন্যাসের লেখক শরৎচন্দ্র কোথাও কোনো চরিত্রের পোশাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাঁর প্রেক্ষাপট নিয়েছি। একজন নির্মাতা হিসেবে যে পোশাককে প্রয়োজনীয় মনে করেছি, সেটিই ব্যবহার করেছি।
’
এ বিষয়ে তথ্যসচিব ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান হেদায়েত উল্লাহ আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘দেশের বরেণ্য ও স্বীকৃতি ব্যক্তিদের নিয়েই সেন্সর বোর্ড গঠিত। এখানে সদস্যদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা সম্মিলিতভাবেই ‘দেবদাস’ ছবিটির ছাড়পত্র প্রদানে আপত্তি জানিয়েছে। দৃশ্য তো মোটে তিনটি। এই তিনটি জায়গা কর্তন করে বা নতুন করে শুটিং করে জমা দিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
কেন বিষয়টি নিয়ে অযথা জল ঘোলা করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।