ভালবাস সবাই ভালবাসাকে বুধবার সকালে ঘড়ির কাঁটাটা ১০টায় পা রাখার আগ থেকেই সাংবাদিক সমাজ একক ভাবে কিংবা নিজ দল কিংবা অনুসারীদের নিয়ে জমতে থাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে সাংবাদিকদের ভীড়। এক পর্যায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখ সড়ক পরিপূর্ণভাবে ভরে উঠে সাংবাদিকদের পদচারণায়। পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয় ঝাঁঝালো শ্লোগানে। মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক মেহের আফরোজ রুনি হত্যার প্রতিবাদে সাংবাদিক অংগন এক পলকে হয়ে উঠে উত্তপ্ত।
এসময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখ সড়কের দুই পাশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরণের যান চলাচল। একটু পরেই শুরু হবে সাংবাদিকদের সমাবেশ। একে একে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সভাস্থলে আসর সাথে সাথে শুরু হতে থাকে সাগর-রুনি হত্যাকারীদের দ্রুত বের করা, তাদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ।
সমাবেশে সভাপতির আসনে ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালক সাজ্জাত আলম তপুর উপস্থাপনায় একে একে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আবদুল্লাহ্, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, সভাপতি আবদুস শহীদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সবাপতি জামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিআরইউ সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকের হোসাইন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ।
শুধু তাই নয় প্রতিবাদ মুখর সাংবাদিক সমাজের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে বয়সের ভারে ন্যুব্জ প্রায় এদেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক নির্মল সেনও ছুটে আসেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মোবাইলের মাধ্যমে একাত্মতা ঘোষণা করেন এদেশের সাংবাদিকতার আরেক নক্ষত্র এবিএম মুসা। তাছাড়া ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিক সংগঠন কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা ও অংশ নেয়ার জন্য ছুটে আসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।
প্রতিথযশা সাংবাদিক নির্মল সেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন সাংবাদিকতা করেছি তখন সাংবাদিক খুন হওয়া তো দূরের কথা কোন সাংবাদিক লাঞ্ছিতও হত না। এর পেছনে একটিই কারণ ছিল আর তা হল ঐক্যবদ্ধতা।
আমরা ঐক্যের সাথে সাংবাদিকতা করেছি। কোন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের ছাড়া ইউনিয়নও করেছি। সাগর রুনির হত্যাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে সাংবাদিক সমাজ যেভাবে একত্র হয়েছে তা ভবিষ্যতেও যেন অব্যহত থাকে। সাংবাদিকরা সকল দলমতের উর্দ্ধে। তারা কেন দলাদলিতে গিয়ে নিজেদের ঐক্য নষ্ট করবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী সাগর-রুনির হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, সাগর-রুনির মত প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক এদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। এদেশের অনেক কিছু পাবার ছিল তাদের কাছ থেকে কিন্তু ঘাতকরা শুধু তাদেরকেই খুন করেনি খুন করেছে এদেশের বিশাল কিছু পাবার মাধ্যমকে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এ ঝুঁকিও তাদেরকে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে আমাদের অনেক সাংবাদিক ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছে।
কিন্তু কোনটিরই বিচার হয় নি। ভবিষ্যতে যাতে আর কোন সাংবাদিককে নৃশংসতার শিকার না হতে হয় সেজন্য আমাদের ঐক্যকে সুদৃঢ় করে রাখতে হবে।
ডিআরইউর সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, আজ সাংবাদিকরা তাদের জাত ভাই-বোন সাগর রুনির হত্যার প্রতিবাদে একত্রিত। সবার একই দাবি, একই চাওয়া।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, অধিকার রক্ষা কিংবা আদায় করতে যখনই সাংবাদিক সমাজ একত্রিত হয়েছে তখনই সাংবাদিকদের অধিকার/দাবি রক্ষা কিংবা আদায় হয়েছে।
কাজেই যতদিন পর্যন্ত সাগর রুনির হত্যার বিচার না হবে ততদিন পর্যন্ত দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিক সমাজকে লড়ে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের পক্ষে আগামি দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, আগামী ২৭ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কলম বিরতি। এতেও যদি সাংবাদিক দম্পতি খুনিদের গ্রেপ্তার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয় তাহালে আগামী ১ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকরা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচী চালাবে। এ কর্মসূচী সারাদেশে একযোগে চলবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র সাগর রুনির হত্যার প্রতিবাদে আমারা এ সমাবেশ করিনি। আমরা সমাবেশ করেছি অতীতে যে সাংবাদিকরা হত্যার শিকার হয়েছে তার বিচার চেয়ে, একত্রিত হয়েছি সারাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে। সাগর-রুনির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে এখন জন্ম নিয়েছে তীব্র আতংক। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের কথামত ধৈর্য্য ধরেও কোন ফল পাচ্ছিনা। ১১দিন পার হবার পরও আপনারা কোন খুনিকে এখনও ধরতে পারেন নি, খুনের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারেননি।
তাহলে কীভাবে আমরা আপনাদের উপর ভরসা রাখব। আলোচনা শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পল্টন চৌরাস্তার মোড় প্রদক্ষিণ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।