১৯৩৪ সাল। নতুন আরেকটি ফুটবল মৌসুম শুরুর আগে ইংলিশ লিগের তখনকার চ্যাম্পিয়ন আর্সেনালের নতুন কোচ হয়ে এলেন জর্জ অ্যালিসন। বার্ষিক বেতন ৩ হাজার পাউন্ড। চুক্তি সই করে অ্যালিসন ইংল্যান্ডসহ সারা দুনিয়ার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম। ওটাই তখন কোচের সর্বোচ্চ বেতন!
ফোর্বস সাময়িকীর দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোচ হোসে মরিনহো, বার্ষিক বেতন ১৬.৩ মিলিয়ন ইউরো (১৩.৮ মিলিয়ন পাউন্ড)।
হয়তো একেবারে অসম তুলনা হয়ে গেল। অ্যালিসন থেকে মরিনহো—মাঝে আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ গেছে, বাষ্প ইঞ্জিনের জাহাজ পুরোনো হয়ে গেছে, মানুষ চাঁদে যাওয়া শিখেছে। এখন চিন্তা মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার। তার পরও এই তুলনা থেকে কোচদের বেতনের ঊর্ধ্বমুখী রেখাটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাচ্ছে।
অর্থনীতির নিয়মে এই রেখাটা ক্রমেই ওপরেই ওঠে।
কিন্তু গত এক দশক কিংবা এর আশপাশের সময়টা থেকে সেটা বিশাল বাঁক নিয়েছে অনেকটা আকস্মিকভাবে। তার আগে ফুটবলের বাজারে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার মতো অর্থের লেনদেন কিন্তু খুব একটা হতো না। ১৯৮২ বিশ্বকাপ খেলে ম্যারাডোনা ৭.৫ মিলিয়ন ডলারে যোগ দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। ওটাই তখনকার বিশ্ব রেকর্ড। এখন গ্যারেথ বেলের জন্য ১০০ মিলিয়ন ইউরো অকাতরে ঢালছে রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যারাডোনা বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার বছর চারেক পরে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেন, তাঁর বেতন ধরা হয়েছিল বছরে ৬০ হাজার পাউন্ড। এই মে মাসে অবসরে যাওয়ার সময় স্কটিশ বুড়োর বেতন ছিল ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের মতো (৯.৪ মিলিয়ন ইউরো)।
মোটা দাগে এই উত্থান মূলত গত এক দশকে রুশ আর আরব ধনকুবেররা ফুটবলে বিনিয়োগ শুরু করার পর। তবে ফুটবলারদের দলবদল নিয়ে আগ্রহটা বেশি বলে তাদের বাজারদর কিংবা ট্রান্সফার ফি সংবাদমাধ্যমে আসে বেশি, জানা যায় সহজে। সেই অর্থে কোচদের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা হয় কম।
অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা গোপন রাখা হয় দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায়। ফলে তাদের বেতনের সঠিক অঙ্কটা জানা কিছুটা কঠিন। চেলসি কিনে নেওয়ার পর রোমান আব্রামোভিচ যখন মরিনহোকে কোচ করলেন, তখন থেকেই তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া কোচদের একজন। পোর্তো থেকে ৪.২ মিলিয়ন পাউন্ড বার্ষিক বেতনে ২০০৪ সালে চেলসিতে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার স্টামফোর্ড ব্রিজে এসে বেতন বাড়িয়েছেন চার গুণেরও বেশি।
বেতনের দিক থেকে মরিনহোর খুব কাছাকাছি তাঁর সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব নেওয়া কার্লো আনচেলত্তি। কাতারি মালিকাধীন প্যারিস সেন্ট-জার্মেইয়ে আনচেলত্তি বেতন পেতেন বছরে সাড়ে ১৩ মিলিয়ন ইউরো। ফ্রেঞ্চ ফুটবল সাময়িকী জানিয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদেও অঙ্কটা এর কম নয় মোটেও। তবে মনে রাখতে হবে, বেতন কাছাকাছি হলেও দেশভেদে আয়করের অঙ্কও ওঠানামা করে। আনচেলত্তির কাছাকাছি বেতন পেপ গার্দিওলার।
ফোর্বস-এর তথ্য, বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে তাঁর চুক্তিটা বার্ষিক ১২ মিলিয়ন ইউরোর। সবচেয়ে দামি কোচের তালিকায় এর পরের নামটা হয়তো বিস্ময়কর নয়, কিন্তু তাঁর ক্লাবের নামটা চোখ কপালে তুলে দিতে পারে। বছর দুয়েক আগেও চীনের দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে খেলত গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে। কিন্তু ২০১১ সালে চীনা সুপার লিগে উঠে আসা দলটা গত বছর কোচ করে এনেছে জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান আর ইতালির সাবেক কোচ মার্সেলো লিপ্পিকে। তাঁর বেতন বছরে ১০ মিলিয়ন ইউরো!
টাকা ঢালতে কার্পণ্য নেই রুশ ক্লাব আনঝি মাখাচকালারও।
সাবেক কোচ গাস হিডিঙ্ককে তারা বছরে বেতন দিত ৮.৩ মিলিয়ন ইউরো। তবে কিছুদিন আগে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন এই ডাচ। তবে চাকরিতে থাকলেও সবচেয়ে বেশি বেতনের তালিকায় তাঁর নামটা আসত আরও পরে।
অবসরের আগ পর্যন্ত ফার্গুসন যা বেতন পেতেন, তাতে এই তালিকায় লিপ্পির পরের অবস্থানটা তাঁরই ছিল। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফার্গুসনের উত্তরসূরি ডেভিড ময়েসের বেতন বেশ কম (বছরে ৫.৯ মিলিয়ন ইউরো)।
পূর্বসূরি রবার্তো মানচিনির (৮ মিলিয়ন ইউরো) চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটির নতুন কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনিও (৫.৩ মিলিয়ন ইউরো)। এঁদের সবাইকে ছাড়িয়ে বেশি বেতন পাওয়া কোচের তালিকায় আছেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। সমর্থকেরা ফরাসি এই কোচের দর্শন নিয়ে যতই সমালোচনা করুক, মালিকপক্ষ কিন্তু বেশ সন্তুষ্ট ওয়েঙ্গারের পারফরম্যান্সে। নইলে কি আর বছরে ৯.৩ মিলিয়ন ইউরো বেতনে তিনি এমিরেটসে থাকতে পারেন?
এই বেতন শুনলে কে বলবে গত ৮ বছরে বড় কোনো শিরোপা নেই আর্সেনালের! ওয়েবসাইট অবলম্বনে।
কার পারিশ্রমিক কত
কোচ ক্লাব বার্ষিক বেতন (ইউরো)
হোসে মরিনহো চেলসি ১৬.৩ মিলিয়ন
কার্লো আনচেলত্তি রিয়াল মাদ্রিদ ১৩.৫ মিলিয়ন
পেপ গার্দিওলা বায়ার্ন মিউনিখ ১২ মিলিয়ন
মার্সেলো লিপ্পি গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে ১০ মিলিয়ন
আর্সেন ওয়েঙ্গার আর্সেনাল ৯.৩ মিলিয়ন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।