আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি মৃত ক্যাপ্টেন মাজহারের বাবা বলছি

ব্লগের একমাত্র অলস ব্লগার । হ্যালো.. হ্যালো বাবা... হুম.. কেমন আছো ? ভালো , তুমি কেমন ? আমিও ভালো, সকাল বেলা হাঁটাহাটি কর তো ? হুম হুম না বল কর কি না ? হ্যা করি , মাঝে মাঝে মিস হয়ে যায় , নিয়মিত কর বাবা , ঔষুধ খেয় ঠিক মত আচ্ছা ভালো থেকো বাবা ঘুমটা ভেঙে গেল মজিদ সাহেবের । সাড়ে ৪ টা বাজে । ফযরের আযান হতে অনেক দেরি । আর ঘুম ঘুম আসবে না ।

উঠে বসলেন মজিদ । টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা টেনে নিয়ে পানি খেয়ে নিলেন । কি করা যায় ? ফযরের আযানের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে । বারান্দায় গিয়ে বসে থাকা যায় । ইজি চেয়ারটায় হালকা কুয়াশা পড়ে আছে ।

তাই ঠান্ডা লাগছে । ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরি । চারিদিকে হালকা অন্ধকার । পাখিদের ডাকাডাকি এখনও শুরু হয়নি । কতদিন হল ? তিন বছর ? অনেক সময় ।

গত তিন বছরে একটিবারও মাজহারের সাথে কথা হয়নি । এখনও নিয়মিত হাটাহাটি করা হয় না , শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে । মাজহার না বললে আর কেউই সেভাবে বলে না । আযান হচ্ছে ওযু করা দরকার আবার বারান্দায় গিয়ে বসলেন মজিদ সাহেব । ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে ।

পূর্বের আকাশে গাঢ় কমলা আভা । পাখিও ডাকাডাকি করছে , কিন্তু পাখির চেয়ে কাকের কা কা আওয়াজটাই বেশি কানে আসছে । কাক এভাবে উত্তেজিত হয়ে ডাকাডাকি করে কখন ? যখন ওদের শোকের সময় তখন ? হয়ত । আজ মর্নিং ওয়াকে যেতে ইচ্ছে করছে না । এখানে বসতেই ভাল লাগছে ।

ক্যাডেট কলেজের শুরুর মাজহার প্রায়ই বলত সকালে মর্নিং ওয়ার্ক ওর ভাল লাগে না । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা ওর রুটিন হয়ে গেল । ছোটবেলায় অনেক আলসে ছিল ছেলেটা । সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চাইত না । সেই ছেলেটা ক্যাডেট কলেজ এরপর সেনাবাহিনীতে ।

ভাবতেই অবাক লাগে । যদিও ক্যাডেটে ও পড়তে চায়নি । আমিই মনে হয় বেশি জোর করেছিলাম । সেদিন যদি জোর না করতাম আজ হয়ত ব্যাপারটা অন্যরকম হত । খালুজান চা , সবুজের ডাকে চোখ মেললেন মজিদ সাহেব ।

খালুজান আপনেরে রেডি হইতে কইছে । বাসার সবাই আজ গ্রামের বাড়ি যাইব । হুম আসছি , তুই যা । গাড়ির পেছন সিটে বসে জানালা দিয়ে চোখ মেলে দিলেন মজিদ সাহেব । রাস্তার দুপাশে ক্ষেত ।

তবে সবই ন্যাড়া । কোন সবুজ নেই । আবারও মাজহারের কথা মনে হচ্ছে । কত বয়স হয়েছিল ছেলেটার ? ২৯ । খুব বেশি না ।

ছেলেটা জীবনের অর্থই বুঝতে পারল না । তার আগেই চলে গেল । অথচ মনে হচ্ছে এই সেদিন ওকে স্কুলে নিয়ে গেলাম ভর্তি করাতে । অনেকটা তাড়াতাড়িই ভর্তি করিয়েছিলাম ওকে । প্রথমদিন হেডমাস্টারকে দেখেই কেঁদে ফেলেছিল ও ।

অদ্ভুত ছেলে আমার । কি ভীতুই না ছিল ছেলেবেলায় । অথচ বড় হয়ে দেশের সেবা করতে ঠিকই যোগ দিয়েছিল সেনাবাহিনীতে । কিন্তু আমিতো না করেছিলাম । তুমি পারবে না এত কষ্ট সহ্য করতে ।

অন্য কোথায় ভর্তি হও । ও কি বলেছিল এখনও পরিস্কার মনে আছে , বলেছিল "বাবা তুমি না মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলে , আমি সেই সুযোগ পাইনি , কিন্তু এই সুযোগটা নিতে আমাকে না করোনা প্লিজ" । না , আমি না করিনি । বড্ড ঘুম পাচ্ছে , কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়া দরকার ঘুম ভাঙল সবুজের ডাকে । এসে পড়েছি ।

কতদিন পর এলাম ? গতবছরের এই দিনে মনে হয় শেষ এসেছিলাম । না আরেকবার এসেছিলাম । মাজহারের নামে পাঠাগার উদ্বোধন করতে । এরপর আর আশা হয়নি । আজ বাড়ি ভর্তি মেহমান ।

কিন্তু এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । কিছুটা একা দরকার । তবে তার আগে বাড়ির পেছনটা ঘুরে আসতে হবে । না হলে মাজহার রাগ করবে । ছেলেটা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই পরিবার পরিজন ছেড়ে বড় হয়েছে ।

এখনও একাই থাকে । মাঝে মাঝে মনে হয় ওর সাথে অন্যায়টা করেছি আমি । ক্যাডেট কলেজে ভর্তি না করলেই হত । মাজহারের কবরের পাশে এসে দাড়ালেন মজিদ সাহেব । এবছর কবরটা পাকা করা হয়েছে ।

তাই কিছুটা উচু হয়ে আছে । আশাপাশে জঙ্গলও কিছুটা বড় হয়ে আছে । কবরের দেয়ালটা ধরে এক দৃষ্টিতে কবরের মাটির দিকে তাকিয়ে আছেন মজিদ সাহেব মেহমানদের বিদায় করে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলেন মজিদ সাহেব । ভাল লাগছে না । বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলেন ।

কি হয়েছিল সেই ২৫ তারিখ ? কেনইবা বিডিআর জোয়ানরা বিদ্রোহ করেছিল ? ব্যাপারটা কি পরকল্পিত ছিল ? মনে হচ্ছে হ্যা । না হলে কেন হানিমুনের তিনদিনের দিন ছেলেটাকে ফোন করে পিলখানা ক্যাম্পে জয়েন করতে বলা হবে ? কি দোষ ছিল ওর ? আমার সাথে কথা হয়েছিল হানিমুন থেকে ফেরত আসার আগের দিন । অথচ দুদিন পরেই ছেলেটা চলে গেল । ওর শ্বশুরের সাথে শেষ কথা হয়েছিল ওর । ওর শ্বশুরকে নাকি বলতেছিল হ্যালো , বাবা এখানে কোন একটা সমস্যা হয়েছে ।

সবাই খুব ছোটাছুটি করছে । জোওয়ানরা বিদ্রোহ করেছে । আমাদের সাহায্য দরকার... পুলিশের আইজি ওর শ্বশুরের কাছে ছিল সাহায্য চাওয়ার তীব্র আকুতি । কিন্তু সেদিন কেউ ওদের সাহায্যে এগিয়ে যায়নি , কেউ না । তিন বছর হয়ে গেল প্রকৃত সত্যটা এখনও জানা যায়নি ।

হয়ত এজীবনে ছেলে হত্যার বিচারটা দেখে যেতে পারব না । সে আশা অবশ্য আমি করিও না । তবে আল্লাহর কাছে ঠিকই জানতে চাইব , কেন তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিলেন । আমি কি পাপ করেছিলাম যে তিনি আমাকে ছেলের মরদেহের ভার আমার কাঁধে দিয়েছেলেন ?? জানালে দিয়ে দিনের শেষ আলোটা বিছানায় এসে পড়ছে । আমার ছেলেটাও ছিল সূর্যের মতই ।

কিন্তু পার্থক্য শুধু এটুকুই সূর্য ডুবে গিয়ে পরদিন আবার উঠে , কিন্তু মাজহার সেই যে গেল আর আসবে না বিঃদ্রঃ গল্পের চরিত্র সবই সত্যি , কিন্তু গল্পটা আমার বানানো । অযথা বিতর্ক না করার জন্য অনুরোধ করছি # এক বন্ধুর অনুরোধে খুবই তাড়াহুড়ো করে লেখা , কিছুটা ভুল থাকা স্বাভাবিক । আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।