সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল স্বাধীন বাংলাদেশে এমন গুমোট আর অস্থির সময় মাত্র একবারই এসেছিল। সেটা ৩রা থেকে ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালে।
দেশ কোনদিকে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে সারা দেশেই এখন চাপা অস্থিরতা। আতংকিত হচ্ছেন অনেকেই। কিন্ত কেন?
এই সরকারের বর্তমান শাসনামলের শেষের দিকেই একের পর এক নানা ঘটনা জন্ম দিয়েছে।
সেই শাহাবাগ আন্দোলন থেকে শুরু। শেষ হচ্ছে মাহামুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার মধ্যে দিয়ে।
দলের আদর্শিক অবস্থানের উর্ধে থেকেই অনেক সাধারণ মানুষই সেই আন্দোলনের পক্ষ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন।
কিন্তু একটি বিশেষ কুচক্রি মহল, সেই আন্দোলনকে ছিনতাই করাতে, এখন সেই আন্দোলন মৃত। যদিও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে তাকে বাচানোর প্রাণান্ত চেস্টা চলছে।
এজন্য সেই কুচক্রি মহলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কেননা সাধারণ মানুষের বিপুল সাড়া পেয়ে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছিলো। তার উপর সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এরা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।
বিরোধিমত প্রকাশ করলেই, সামান্যতম জ্ঞানগম্য ব্যাবহার না করেই, দলিয় অন্ধ বাচালের মত এরা একে মারো, অমুক রাজাকার, তুমক যুদ্ধাপরাধী, অমুকের ফাসি চাই তমুককে নিষিদ্ধ করো, বলে বলে নিজেদের দিন দিন অগ্রহনযোগ্য করে তুলছিলো।
যার ফলে যা হবার তাই হয়েছে।
পা ভাঙ্গা ল্যাংড়া ঘোড়ার মত এরা মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছে।
যারা এই কুচক্রি মহলের ইন্ধনদাতা, তাদের পরিচয় জনসম্মুখে তেমন আসে না। এদের কুকীর্তির কথা খুব যত্ন করে ঢেকে রাখা হয়। তবে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে, সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তাই আমরা এখন জানতে পারছি যে, যে সব উচ্চকন্ঠ তথাকথিত চেতনাধারিরা শাহবাগে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিল, তাদের কেউ কেউ ছিল পাকিস্থানি বাহিনীতে মুরগি সাপ্লায়ার।
কেউ কেউ পাকিদের নিরাপত্তায় যুদ্ধের ৯ মাস খুব আরাম আয়েশ করে সারা ঢাকা ঘুরে বেড়িয়েছিল। আর কেউ কেউ এমনই বীরপুঙ্গব ছিল যে, শর্ষিণার পীরের ঘরে ৯ টা মাসই লুকিয়েছিল। আবার এমন একজনকে দেখা গিয়েছে, যে কিনা স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেই আন্ডারগ্রাউন্ডে যুদ্ধ করেছে।
আর ব্লগ না লিখেই ব্লগারদের নেতা হয়ে যাওয়া ছেলেটার দাদা নাকি মুক্তঞ্চলে রাজাকারদের হাতে শহিদ হয়েছিল। অনেকদিন শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কোটায় ভাতা খাবার পর, প্রকৃত সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়াতে সেই ভাতা খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
অথচ আলাদিনের আশ্চর্যপ্রদীপের গুণে এরাই হয়েছে গিয়েছে স্বাধীনতার চেতনার একমাত্র সোল এজেন্ট।
শাহাবাগের পতনের আরো একটা কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিস্ট সাধারণ মানুষদের ধর্ম ইসলাম নিয়ে বিরুপ মন্তব্য এবং অন্যায় কিছু দাবি করা। যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষরা ভাল চোখে দেখেনি।
অবস্থা আরো বেগতিক হয় যখন দেখা যায় শাহাবাগের মঞ্চ থেকে প্রবল ইসলামবিদ্বেষি খুন হওয়া একজনকে নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি করা হচ্ছে। ইসলামি কায়দাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে লোক দেখানো জানাজা পড়ানো।
শহিদ তকমা দেয়া ইত্যাদি।
অসাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা কি? কেন?
শাহাবাগিদের অনেকগুলি শ্লোগানের সাথে একটি শ্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের। আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা কেউ কি কোনদিন দিয়েছিলেন? দিলে এক এক দল এক এক রকম কথা বলবে কেন?
তবে এই ধরণের ডায়ালগ সবচেয়ে বেশি যারা হরহামেশাই দিয়ে অভ্যস্থ, তাদের জীবনাচারণের সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের মিল কোথায়?
আর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা তারাই খুজে পায়, যারা পাশের দেশকে প্রভু জ্ঞান করে। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশেই পুর্ণ মাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান।
যার পুর্ণ কৃতিত্ব বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের।
অথচ এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আবিস্কার করাদের নিশ্চই করে ভিন্ন এজেন্ডা আছে। মাঝে মাঝে এই এজেন্ডা প্রকাশিত হয়ে পড়ে বলেই আমরা দেখতে পাই, এই গোষ্ঠির অনুগতরাই বাংলাদেশ ভারতের সামরিক আগ্রাসন আহবান করছে।
আর ইসলাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীরুতা আছে, অজ্ঞতাও আছে সেটা স্বীকার করি। তাই বলে তাদের এই ধর্মবিশ্বাসকে অবজ্ঞা করা, কিংবা বিলুপ্ত করা, ইসলাম নিয়ে চরম অশ্লিলভাবে যুক্তরাস্ট্রের চরম মৌলবাদি গোষ্ঠি বাঁ ভারতের হিন্দুত্ববাদিদের সুরে একই সুরে কথা বলা , এটা কোন অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা থেকে উদ্ভুত?
এ ধরণের আহবানকারিদের মধ্যে মুসলমান নামধারি যেমন আছেন, তেমনি হিন্দু ধর্মানুলম্বিরাও আছেন।
যা হওয়া উচিত নয়। এর পরেও তারা এই সব করছেন। কেননা, ঘৃণাবাদ ছড়ানোর দায়ে কোন হিন্দুকে গ্রেফতার করা হলে, উনারা সংখ্যালঘুতত্ত্বের আড়ালে, নিজেদের নির্যাতিত প্রমানে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে পারে। নইলে মুন্নি সাহা কোন স্পর্ধায় বলতে পারে যে, কোরবানির পশুর চামড়া যেন আর কওমি মাদ্রাসায় দান করা না হয়?
হেফাজতে ইসলাম একটি রাজনৈতিক সংগঠন হলে, বলা যেতো আদর্শিক ভিন্নতায় মুন্নি সাহা এই ধরণের মন্তব্য করেছেন। সেটা না হওয়াতে, বলাই বাহুল্য যে মুন্নি সাহাদের মত লোকজন শ্রেফ ধর্মিয় ভিন্নতার কারণেই এধরণের কথা বলেছেন।
আর এই সব একারণেই প্রায় দৃস্টির আড়ালে থাকা কওমি মাদ্রাসাদের সংগঠন যে বিক্ষোভ করেছে, তাতে অভুতপুর্ব সমর্থন এসেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের কাছ থেকেই।
এই বিক্ষোভ এতই ব্যাপক ছিল যে, স্বয়ং হাসিনা পর্যন্ত নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। তাকে এখন মদিনা সনদ নিয়ে বলতে হচ্ছে। যদিও তিনিই বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস কথাটি উঠিয়ে দিয়েছেন। তাও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে।
সংবিধানে যাই লেখা থাকুক, তাতে বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃস্টি হয়েছিল, এমন কোন প্রমান কি আছে? এর পরেও হাজার হাজার সমস্যা বাদ দিয়ে ইসলাম নিয়ে টানাটানি করে হাসিনা প্রমান করেছেন যে তিনি আসলে গণমানুষের মনের ভাষা পড়তে অক্ষম। অথবা তার বাবার মত ইসলামদ্বেষি জনগণ প্রত্যাখ্যাত ভারতপ্রেমিক বামদের হাতে বন্দি।
যতই মদিনা সনদের বুলি কপচানো হোক, কিংবা লোক দেখানো হাতে গোণাম ইসলামবিদ্বেষি কিছু ব্লগারদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হোক, তিনি মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করে আস্থা হারিয়েছেন। যা পুনরুদ্ধার হয় অসম্ভব কিংবা সুদুর পরাহত।
আমাদের দেশে প্রগতিশীলতা আধুনিকতা এইসবের আড়ালে যা চলে, সেটা আর কতদিন মেনে নেয়া যায়? যারা এর প্রচারক, তারা তো পুজিবাদের ঘোরতর উপাসক।
অর্থই দ্বিতীয় ঈশ্বর জ্ঞানকারি মুনাফাবাদি।
মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচার প্রসারের ফলে আমাদের দেশে রীতিমত আমাদের বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যকে ধর্ষন করা হচ্ছে। নারী স্বাধীনতার আড়ালে নারীকে অন্ধকার জগতে চিরতরে বন্দি করা হচ্ছে।
আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে যে সব ঘটনা ঘটে, সেগুলির সাথে নিষিদ্ধপল্লির তেমন রকম ফের নেই। সমস্যা হচ্ছে, ব্যাপক প্রপাগান্ডার কারণে সেই সামাজিক নিষিদ্ধতার প্রতিও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার পথ তৈরি হচ্ছে।
যার রাশ টেনে না ধরা হলে, ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে সারা জাতিকে টেনে নিয়ে যাবে।
এখনই যা অবস্থা তাতে কুমার আর কুমারি বলে শব্দদুটি অভিধানেই শুধু আছে। কিছু ব্যাতিক্রম আছে অবশ্যই।
সারা দেশ এমনই প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে যে, বাৎসায়ন বেচে থাকলে কামশাস্রের দ্বিতীয় সংস্করণ লিখতে বাংলাদেশে অবশ্যই আসতেন।
যারা এই সব অনাচারকেই আধুনিকতা বলে উস্কে দিচ্ছেন, তারাই কিন্তু আবার স্বাধীনতার চেতনার সবচেয়ে বড় ফেরিওয়ালা।
অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামের বড় তিনটি ফ্যাক্টরের মধ্যে, এই নারীদের সম্ভ্রমহানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছিল অন্যতম একটি।
উস্কানিওয়ালারা এই সব জানবেন কি করে? সে সময় তো তারা হয় মুরগি সাপ্লাই দেয়াতে ব্যাস্ত ছিলেন, কিংবা পীরের আস্তায় লুকিয়ে ছিলেন, অথবা পাকিদের নিরাপত্তায় খুব ভালোই ছিলেন।
আর কেউ কেউ ছিলেন কোলকাতায় রঙ্গ তামাশায় ব্যাস্ত। দেশ স্বাধীনের পর এরাই চোয়াল্বাজি করে মুক্তিযুদ্ধের ক্রেডিট হাইজ্যাক করেছে।
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।