ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাসে আড়িপাতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউর একটি প্রস্তাবিত বাণিজ্যচুক্তি বাতিল করা হতে পারে। বিবিসি বলেছে, আসছে ৮ জুলাই এ চুক্তি নিয়ে দরদস্তুর শুরু হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যচুক্তি।
ওলাঁদ হুঁশিয়ার করেছেন, ‘অবিলম্বে’ আড়িপাতা বন্ধ করা হচ্ছে, এমন ঘোষণা না দিলে সব ধরনের আলোচনা রহিত করা হবে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দাবি করেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো কাজ করা ‘অস্বাভাবিক কিছু নয়’।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট বলেন, ‘মিত্রদের ওপর গোয়েন্দাগিরি অগ্রহণযোগ্য। ...আমরা শীতল যুদ্ধের যুগে বাস করছি না। ’ তিনি বলেন, জার্মানি চায় চুক্তিটি নিয়ে অগ্রগতি হোক, কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানোর আগে পারস্পরিক বিশ্বাস জরুরি।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিও বলেন, রোম ওয়াশিংটনের কাছে এ ‘যন্ত্রণাদায়ক সম্পর্কের ব্যাখ্যা চেয়েছে’।
থামাতে হবে
ফ্রান্সের চলচ্চিত্র ও অনলাইন বিনোদন খাত যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড ও সিলিকন ভ্যালির তোপের মুখে পড়বে না, ইইউ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার পরই গত জুন মাসে ফ্রান্স চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী হয়।
কিন্তু আসছে সপ্তাহে ওয়াশিংটনে শুরু হতে যাওয়া আলোচনা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এ নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তারা ইইউর ওপর গুপ্তচরবৃত্তি বন্ধ করেছে।
পশ্চিম ফ্রান্স ভ্রমণের সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওলাঁদ আরও বলেন, ‘অংশীদার ও মিত্রদের মধ্যে এ ধরনের আচরণ আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা এখনই এসব থামাতে বলছি। ’
এর আগে জন কেরি বলেন, ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ ও জার্মানির ‘দেয়াহ স্পিগাল’ দৈনিকে প্রকাশিত অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
তবে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন এবং তিনি তাঁকে সব বিষয় অবহিত করবেন।
কেরি আরও বলেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয় এবং অনেক ধরনের তথ্য জোগাড় করতে হয়। ...যত দূর জানি, কোনো দেশের জন্য এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমার হাতে সব তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এবং সত্যিকার পরিস্থিতি কী, তা না জানা পর্যন্ত আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ’
গোয়েন্দাবৃত্তির জালে ইউরোপ
এর আগে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়, ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে আড়িপাতার যন্ত্র বসিয়ে নজরদারি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ব্যাপারে তাদের ৪৮টি লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিসের দূতাবাস রয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যের বরাত দিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়, গুপ্তচরবৃত্তির অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও জাতিসংঘের মিশনে ইলেকট্রনিক যোগাযোগব্যবস্থায় আড়িপাতার যন্ত্র বসিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইএ। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন তারবার্তাও রেকর্ড করা হয়।
স্নোডেনের ফাঁস করা ২০১০ সালের নথির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়াশিংটনে অবস্থিত ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিসের দূতাবাস থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালানো হয়েছে। জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও তুরস্কের দূতাবাসও রয়েছে এই তালিকায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।