ফেব্রুয়ারি ২০১২-তে প্রকাশ হল মনসুর হাল্লাজের কবিতা (দিওয়ান-এ মনসুর হাল্লাজ)
মূল আরবি ও মুজাফ্ফর ইকবাল কৃত উর্দু ভাষান্তর হতে অনুদিত
ভূমিকা ও ভাষান্তর : জাভেদ হুসেন
কী ভেবে এই বই :
এই বইখানি মনসুর হাল্লাজের নিছক কবিতার সংকলন নয়। কবিতার সংগে আরো বহু কথা আছে। প্রাচ্যের ইতিহাস কেন ধর্মের ইতিহাস বলে মনে হয়_ সেই প্রশ্ন নিয়ে একটি অনূসন্ধান প্রয়াস এতো কথার কারণ। এইখানে আলোচনার জমিন মনসুর হাল্লাজ, তাঁর কাল, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও শ্রেণী। তিনি আম-জনতার সামনে মানুষের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ সীমায় আরোহনের কথা বলেছিলেন।
ফলে তৎকালীন দুনিয়ার মালিকেরা সাপেক্ষে গৌন হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র পরম সত্যের ‘আমি’র সাথে সম্পর্কেও দাবি হাল্লাজের সমকালীনদের, বিশেষ করে সেই সময়ের বাগদাদের ধনিক শ্রেণী, রাজনৈতিক কর্তাদের কাছে সমাজ বিদ্রোহের ডাক বলে প্রতিয়মান হয়েছিল। মানুষ আর পরম সত্যের মাঝের ব্যবধান ভেঙে দেয়ার চেষ্টা প্রকান্তরে মানুষকে তার কালীন বস্তুগত অধীনতার জোয়াল ভাঙার ডাক দেয়।
এই চেষ্টার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে। মনসুর হাল্লাজেরও তা ছিল।
সেই ইতিহাসের পর্দায় ফেলে তাঁকে না দেখলে তিনি সর্বকালীন চরিত্র হয়ে যাবেন। এর ফলে যে সব বিষয়গত শর্তে তিনি ইতিহাস হয়েছেন_ সে সবের কোন হদিস আর মেলে না। কোন কিছু সর্বকালীন করা মানে নির্দিষ্ট কোন কালে, তাই আমাদের কালেও ব্যাপারটিকে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলা। এই ভাব মানা যায় না বলেই ‘দিওয়ানে হাল্লাজ’-এর বর্তমান রূপ ধারণ।
হাল্লাজের কবিতা থেকে
##
আমি যারে চাই আমি হয়ে গেছি সে
যাকে আমি চাই সে হয়ে গেছে আমি
আমরা দুই প্রাণ এক শরীরেই থাকি
আমায় যখন দেখো, তোমরা তাকেই দেখ
যখন দেখো তাকে, আমায় দেখ ঠিকই
##
যে সূর্য্য, চন্দ্র, ওহে দিনের আলো
আমার কাছে তুমিই স্বর্গ, তুমি নরক
তোমার জন্য পাপকে ছাড়া, এরচে’ বড় পাপ আর কী সে?
তোমার থেকে মুখ ফেরানো- সব কিছুতে বিমুখতা
তোমার জন্য জগতজনে, জানি, ছাড়ে সব অজুহাত
যার নেই অজুহাত, সে আর বলো ছাড়বে কাকে?
##
মেঘের পরে মেঘ জমলে বন্ধুরা সব আসন পাতে
কথক তখন গল্প ছলে আমার নামের সর্ব নাশে
আমার দৃষ্টি, শ্রবণ আমার যদি তোমার প্রেমের নিদান থাকে
প্রেমকে তোমার ছাপিয়ে যাব - এটুকু আশাই বাঁচিয়ে রাখে
##
তোমার কাছ হতে দুরে যাওয়ার পরে
দুর বলে তো আর কিছু নেই আমার কাছে
নিশ্চিত আমি, দুর - নিকটে তফাৎ নেই কোন
বিরহ আমার সামনে দাঁড়িয়ে; কী প্রবল প্রাণ
প্রিয় যখন খোঁজে আমায়, আহা! কী মধুর সে বিরহ!
##
ডুবে যাওয়া মানুষের মত আমি, যার শুধু আঙুল জেগে আছে
জল থই থই সমুদ্রে হাত বাড়িয়ে খোঁজে হাত
কিসের সামনে দাঁড়িয়েছি আমি জানে না কেউ
জানে এ হৃদয়, সে যে সামলে নিয়েছে একা
হৃদয় সয়েছে কী যে দুঃখ! বৃত্তান্ত জানে সেই
তারই ইচ্ছায় আমার মৃত্যু, আমার বেঁচে ওঠা
ও আমার প্রশ্নের আতিশয্য, সকল সান্তনা আমার
ও আমার প্রাণের জীবন, আমার ধর্ম, আমার পৃথিবী
হে আমার শ্রবণ, আমার দৃষ্টি, বলো, আমিই তোমার নিশ্চয়তা
তবে কেন এই বিরহে আমায় তুমি দুরে দুরে রাখো
যদি আমার দৃষ্টি হতে লুকিয়ে থাকো অদৃশ্যতে তুমি
এই বিরহে, এ বিচ্ছেদে আমার প্রাণ তোমায় দেখে
##
ও আমার বাসনার শেষ সীমা!
ব্যাকুল আমি তোমায় নিয়ে
সঙ্গে আছে আমার ‘আমি’র ব্যাকুলতা
তোমার দেয়া নৈকট্য নিয়ে
ভাবছি আমি - তুমিই ‘আমি’
পাওয়ার খোঁজে তোমায় হারিয়েছি বার বার
তুমি আমাকেই যেন আমাতে ডুবিয়ে দিলে
আমার জীবনে তুমি আমারই অনুকম্পা
সমাধিতলে প্রশান্তি তুমিই আমার
বইটির সূচী
কী ভেবে এই বই ?
ক. সমকালের সমাজ, রাজনীতি ও দর্শন
এবং মনসুর হাল্লাজ
১. আদি মুসলিম মরমীবাদ
২. প্রথম জীবন
৩. সেহেল আল-তুসতারি’র সাথে
৪. বসরা পর্ব
৫. জানয্ দাস বিদ্রোহ
৬. কেতাবি সুফিবাদের সাথে বিচ্ছেদ
৭. হাল্লাজের ভাবনা
৮. হাল্লাজের ‘আল-হক’ধারণা
৯. চারুবাক হাল্লাজ
১০. জাদুকরি’র মিথ, সার্বিকতাবাদী প্রবণতা
১১. হাল্লাজের জ্ঞান ও রাজনীতি চর্চা
১২. শাহিদ আনি ও সুফি আবদাল
১৩. আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের দশা
১৪. বাগদাদের বিচার
১৫. ধর্মতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্র
১৬. হাল্লাজের ফিরে আসা
১৭. ফলাফল
খ. হাল্লাজের কবিতা
দিওয়ান-এ- মনসুর হাল্লাজ
গ. হাল্লাজ প্রসঙ্গে ধ্রুপদি রচনা
১. আলী বিন উসমান আলজুল্লাবি আল-হুজওয়িরি’র
কাশফ্ আল-মাহজুব- হতে
২. মনসুর আল-হাল্লাজের কথা
-ফরিদ আল-দিন আত্তার এর তাযকিরাতআল-আউলিয়া হতে
৩. আবু নাসর আব্দুল্লাহ বিন আলী আল-সাররাজ আল-তুসি-র
‘কিতাব আল-লুমা’ হতে ‘শাথ’
৪. আল-হুসেইন ইবনে মনসুর আল-হাল্লাজের তত্ত্ব
-আল-কুশাইরি’র ‘রিসালা ইলা আল-সুফিইয়া’ হতে
৫. হাল্লাজ প্রসঙ্গে মাওলানা রুমি
মসনভি হতে
ফিহি মা ফিহি হতে
৬. ওয়াহদাত আল-ওজুদ
৭. মোহাম্মদ ইকবালের
‘জাভেদনামা’ হতে
ধারণা পরিচয়
স্থান ও ঘটনা পরিচয়
ব্যাক্তি পরিচয়
প্রাপ্তিস্থান :
ঐতিহ্য, ষ্টল নং- ১৬৬, ১৬৭, ১৬৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।