তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা এ লেখাটি পুরোই আমার বিমানযাত্রা নিয়ে। ছোটবেলায় বাবার চাকরির সুবাদে বেশ কয়েকবার বিমানযাত্রা হয়েছে। ঐ অতটুকু শৈশবের তেমন কিছুই আজ আর মনে নেই। পরিণত কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের সূচনায় আবার প্লেনে চড়ে উড়াল দেয়ার সুযোগ হলো।
দিনটি ছিল ২৯ শে আগষ্ট ২০১০ সাল।
কাতার এয়ারওয়েজে চড়ে উড়াল দিলাম কাতারের উদ্দেশে। পরিবার ও দেশ ছেড়ে যেতে হচ্ছে অচেনা নতুন দেশে। মনটা ছিল ভীষণ খারাপ। সময়টা ছিল পবিত্র রমযানের ১৯ তারিখ। ভ্রমণের তাগিদে আমি রোজা ভেঙে খেয়ে ফেললাম প্লেনের দেয়া খাবার।
তারপর আর কী? সাড়ে দশটায় নেমে গেলাম দোহা বিমানবন্দরে। কাতার এয়ারওয়েজ এর ঐ প্লেনটির সীটগুলো তেমন বড় নয়, খাবারের মান ছিল বেশ ভাল। সংকীর্ণ আসন ছাড়া বাকী যাত্রীসেবার মান অনেক ভালো।
কাতারে আসার মাস দেড়েক পর কুরবানীর ঈদ। দুরন্ত মনের কাছে হার মেনে দেশে যাওয়ার জন্য টিকেট খুঁজতে লাগলাম হন্যে হয়ে।
টিকেট নয়, খুঁজছিলাম সস্তা দামের টিকেট। এ ট্রাভেল ও ট্রাভেল ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে গেলাম এয়ার আরাবিয়ার টিকেট। সংযুক্ত আরব আমীরাতের শারজাহ নগরের মালিকানাধীন এয়ারলাইন্স। সবচেয়ে সস্তা দামের টিকেট- তাই শুরু থেকেই বিপত্তি পিছু লাগল আমার। টিকেট কেনার পর বেচারা কর্মকর্তা শুধু একখানা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিল, কোন খাম নেই।
টিকেট খানা পকেটে ভরতেই কর্মকর্তা ডাক দিয়ে জানিয়ে দিল, যাওয়ার সময় লাগেজ বুকিং দেয়া যাবে ত্রিশ কেজি। হাতে নেয়া যাবে সাত কেজি। ওখানেই ঢেকুর গিললাম। অন্য সব এয়ারলাইন্স দিচ্ছে চল্লিশ কেজি। কী আর করা, সস্তায় কেনা টিকেট, মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।
নির্ধারিত যাত্রার দিনে বুকিং কাউন্টারে গিয়ে দেখি- সাত কেজি বেশী। অনুনয় আর অনুরোধে কোন কাজ হলোনা, প্রথমবার দেশে যাচ্ছি, তাও ঈদ উপল,ে বাসায় মা বাবা, ছোট ভাই বোন, বাইরে বন্ধু বান্ধব- যাহ! জরিমানা দিয়ে লাগেজ বুকিং দিয়ে দিলাম।
সময় মতো প্লেনে উঠলাম। দোহা থেকে শারজাহ যাবো। সেখান থেকে আরেক প্লেনে ঢাকা।
প্লেনটিতে শুধু আসন আছে বসার জন্য, বিনোদনের কিছু নেই। অনেক দূর দূর পর ছোট স্ক্রীন ঝুলানো। ওখান থেকে যা দেখা যায়, তাই। কী আর করা, বসে বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। আধঘন্টার কিছু সময় পরে শারজাহ গিয়ে নামলাম।
শারজাহ এয়ারপোর্ট ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে এল। আবারও গিয়ে বসলাম আরেক প্লেনে। আকারে বড় হলেও ভেতরের আয়োজন ঐ আগেরটির মতোই। যথরীতি প্লেন আকাশে উড়ল। ওমা, কেবিনক্রুদের কোন নড়াচড়া নেই।
খানিকন পরপর একজন এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে, যাত্রীদের দিকে তাকাচ্ছে, ব্যস, ওইটুকুই। আমি সামনে পেছনে খুঁজতে লাগলাম, কী ব্যাপার, খাবারের আয়োজন কোথায়? এতণে ট্রলি নিয়ে ক্রুদের ব্যস্ত হওয়ার কথা। আধঘন্টা পা হতে চলল, এখনও হাত মুখ মুছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য কোন রুমাল বা টিস্যুও দিলোনা। আমার কপালে ভাঁজ পড়ল। এতণে পেটের ুধা আর গলার পিপাসা ঘুম থেকে জেগে উঠেছে।
একটু নড়েচড়ে বসে গলা উঁচিয়ে যখন সামনের দিকে তাকাচ্ছি, অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, ওমা, একী! এক কেবিন ক্রু ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে আসছে, সে বলছে, ওয়াটার ওয়াটার, উই হ্যাভ কফি, টি, ফাইভ দিরহামস অনলি।
আমি একদম তাজ্জব বনে গেলাম। এমন তো কোথাও দেখিনি। প্লেনের ভেতর খাবার বিক্রি। এক গ্লাস পানিও এরা দিবেনা দিরহাম ছাড়া।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার গুটিয়ে গেলাম আমার সীটে। যাহ! পানিও খাবনা। এই বুঝি এয়ার আরাবিয়া! যতখানি পিপাসা জেগেছিল, তার চেয়েও বেশী ােভ আর লজ্জা লাগছিল এ বিমানের যাত্রী হয়েছি বলে।
আব্বা আসছেন এয়ারপোর্টে, নামতে নামতে সকাল হবে। জানি, মা আমার জন্য গরম নাস্তা নিয়ে তৈরী হচ্ছেন।
তার হাতের পানি দিয়ে নিবারিত হোক আমার পিয়াসা। এদের কাছ থেকে কেনা পানিতে নয়। জরিমানা দিয়ে লাগেজ বুকিং দিয়েছি, তাও এক বোতল পানি আমি আর কিনলাম না। চোখ বুঁজে সময় পার করতে লাগলাম।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।