আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একশে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় আমার কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা (কিছুটা ১৮+ বিষয়াদি থাকতে পারে)

সব ক'টা জানালা খুলে দাওনা-ওরা আসবে চুপিচুপি-যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ কোন এক মনিষী বলিয়াছিলেনঃ "বই কিনিয়া কেউ দেউলিয়া হয়না"-কথাটি যে একান্তই তাঁহার আবেগাক্রান্ত মনের নিস্ফল আস্ফালন অথবা প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচাইবার জন্য মহান মিথ্যাচার তাহা বুঝিতে আমাকে ২০০৬ সালের বইমেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইয়াছিল। প্রতিবারের মতোই ইত্যকার বই মেলাতেও আমাকে আবারো ঋণী ও দায়গ্রস্হরূপে বইমেলা হইতে প্রস্হান করিতে হইয়াছে। লজ্জা আর অপমানের কথা নাই বা বলিলাম। আজিকে বলিব গতকাল মানে ২১ ফেব্রুয়ারীতে আমার বইমেলা'র অভিজ্ঞতার কথা। কন্টিনেন্টাল হোটেল (শেরাটন হোটেল) এর সম্মুখ হইতে পদব্রজে আমাকে বইমেলায় যাইতে হইয়াছিল মনুষ্যসৃষ্ট জ্যাম জটিলতার কারণে।

বাংগালী যে ছবি তুলিতে মাত্রাতিরিক্ত কাতর তা আমি বুঝিলাম মোবাইল ক্যামেরার মুহুর্মুহু ক্লিক ক্লিক শব্দে। কেউ বা ভিড়ের ছবি আর কেউ বা তাহার বাহুলগ্নাকে বুকের মইধ্যে পিষিয়া একের পর এক ক্লিক করিয়া যাইতেছেন। ভিড় ঠেলিয়া যাইতে যাইতে উপলব্ধি করিলাম পুরুষ হইতে নারীর সংখ্যা নেহায়েৎ কম তো নয় ই বরং উল্লেখযোগ্য পরিমান বেশী অন্যান্য দিন বইমেলায় বই পাগল ক্রেতার সংখ্যা বেশী দেখিতে পাই কিন্তু আজ দেখি কেবলই প্রেমিক প্রেমিকা যুগলবন্দি। তাহারা বই কিনিতে আসেন নাই। এমনকি কোন বই নাড়াচাড়া করিয়া দেখিবার কোনরূপ মনোবাঞ্চাও আমার নজরে পড়ে নাই।

তাহারা আসিয়াছেন বইমেলা উপভোগ করিতে। উহার মধ্যেই একবার মিনিট দু'য়েকের বিদ্যুৎ বিভ্রাট তাহাদের উপভোগের মাত্রাটিকে হয়তো দ্বিগুন করিবার সুযোগ দিয়াছিলো । এক ভাইয়াকে দেখিলাম তার সাথে থাকা আপুনিকে আপন বুকের বাঁ পাশে পিষিয়া ফেলিবার উপক্রম করিয়াছেন আর আপুটি বিনা দ্বিধায় ভাইয়াটির পাঁজরের অন্তপুরে প্রবেশের চেষ্টা চালাইতেছেন। আমি বলিলামঃ "ভাইয়া পাবলিক প্লেসে ইহা না করিলেই কি নয়?" আপু কর্তৃক উত্তর আসিল-"জনাব, ইভটিজিং এর শাস্তির বিষয়ে কি আপনার কোন ধারণা বর্তমান?" এই কথা শুনিয়া নিজেকে নিরস্ত করা ছাড়া আমি আর কিছুই করিতে পারিলাম না আরেক দল ইয়ো ইয়ো ভাইয়াদের দলকে দেখিলাম তাহারা ভেপু বাজাইতে বাজাইতে আর নানান রকম অঙ্গভংগী করিতে বই মেলায় প্রবেশ করিয়াছেন। তাদের নর্তন কুর্দনের কোন অর্থ উদ্ধার করিতে পারিলাম না।

ইতিউতি করিতে করিতে ১০-১২ টি পুস্তক খরিদ করিয়া ফেলিলাম। হঠাৎ পাশ হইতে এক বাচ্চা মেয়ের কান্নাকাটি শুনিয়া মনোযোগ তাহার দিকে নিবিষ্ট হইলো। বয়স আর কতো হবে? ১১ কি বারো। তাহার বায়না শুনিয়া চমৎকৃত হইলাম। সে সত্যজিৎ রায়ের ৩-৪ টি পুস্তক কিনিতে চায়।

কিন্তুক তার পিতা কিছুতেই কিনিয়া দিতে রাজী নয়। বিভিন্ন খিস্তি খেউর পারিতে পারিতে তিনি কন্যাকে টানিয়া লইয়া যাইতে উদ্যত হন। আমি পাশেই দাঁড়াইয়া ছিলাম। মেয়েটির আকুতি দেখিয়া বলিলাম, আপু আসো আমি তোমাকে বই কিনিয়া দেই। এই কথা শুনিয়া বাবা ভদ্রলোক আমার দিকে এমন কটমট করিয়া চাহিলেন যে উনার অক্ষির সমুখে সাক্ষাৎ এক মেয়েধরা দেখিতে পাইয়াছেন।

আমি উপায়ন্তর না দেখিয়া নির্বাক প্রস্হান করিলাম। বেশী ভিড় দেখিয়া সোহরাউয়ার্দি উদ্যানের মধ্য দিয়া মেলা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলাম। কিন্তু চর্মচক্ষে যা দেখিলাম তাহা কল্পনাকেও অতি সহজেই হার মানায়। লাভ জোনে লাভ মেকিং দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম আমি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর পেছনে পড়িয়া আছি। গন্জিকা সেবনকারীরা তাদের জোনে বসিয়া অতি ভাবগম্ভীর পরিবেশে সেবন করিতেছেন আর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বাবাজিরা মনের সুখে বিড়ি ফুকিতেছেন।

বাসায় ফিরিতে ফিরিতে ভাবিলাম মেলা হইতে মগের মুল্লুক নামক কোন বই না কিনিয়া ভুল করিয়াছি কি না? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।