আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পনাহীন মিলন

কল্পনাহীন মিলন মাহবুব আলম মুরাদ ঈদের আমেজটা গ্রামে কাটিয়ে আবার শহরে প্রদার্পন। যদিও সবাই এখনো শহরে ফিরে আসে নাই তবুও পড়ালেখা আর টিউশনির তাগিদে দ্রুত ফিরে আসা। ভার্সিটি এখনও বন্ধ। সবাই ছুটি কাটাচ্ছে। ক্লাস না থাকায় সারা দিন বাসায় বসে বসে বই পড়া আর ঘুমানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

কাজের বুয়াটাও এখনো গ্রাম থেকে শহরে ফেরেনি। তাই কিছু সময় রান্না ঘরে ব্যয় করতে করতেই সকাল গড়িয়ে দুপুর। মাঝদুপুর কিন্তু প্রকৃতি খুব নীরব, কোলাহল মুক্ত ও মেঘলাচ্ছন্ন। আকাশ খুবই গম্ভীর, মাঝে মাঝে মেঘেদের গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। মনে হচ্ছে প্রবল বর্ষনে সব ভাসিয়ে দিয়ে যাবে।

কিন্তু প্রবল বর্ষন না হয়ে শুরু হয় রিমঝিম বৃষ্টি। সেই রিমঝিম বৃষ্টিতে মনের মাঝে লেগে যায় বসন্তের হাওয়া। মন চাচ্ছেনা কোন কিছু করতে, ইচ্ছে করছে কারো সাথে মন উজাড় করে কথা বলতে। কাউকে আপন করে কাছে পেতে। একাকী সময় আর ভালো লাগেনা।

বাসায়ও কেউ নেই। নিজেকে ভীষন একা মনে হচ্ছে। ঠিক এমন সময় দৃষ্টি পড়ে যায় পাশে আমাদের ছোট সেই বারান্দাটির দিকে। বারান্দার ঠিক বাহিরে একটা লাল ঘুড়ি লেজটা ঠিক নীল, বেচারা এন্টেনারের মাঝে আটকে গেছে। প্রাণপ্রন চেষ্টা করছে উড়ে চলে যেতে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না।

উহঃ ঘুড়িটার জন্য ভীষন খারাপ লাগছে! হাত বাড়িয়ে দিই তাকে মুক্ত করে দিতে। কিন্তু হাত বাড়িয়ে আবার পিরিয়ে নিই তাকে সেখান থেকে পিরিয়ে না দেওয়ার জন্য। আর ভাবতে থাকি তাকে মুক্ত করলে আমি ভীষন মিস করব তার এই চটপটানি দৃশ্য দেখা। আবার ভাবনা হয় আমার এই একাকীত্বটা ঠিক তারই মত। আমি যেমন চার দেওয়ালের মাঝে বসে চটপট করতেছি কাউকে পাশে পেয়ে মনের আহ্লাদ দূর করতে, ঠিক তেমনি ঘুড়িটিও চাচ্ছে এখান থেকে ছাড়া পেয়ে মনের আনন্দে পাখিদের সাথে নীল আকাশে উড়ে বেড়াতে।

প্রকৃতির মাঝে মেঘেদের আনাগোনা, রিমঝিম বৃষ্টি দেওয়ালের পাশের গাছগুলোকে সতেজ করে তুলেছে। যেন তাদের আলতো ছোয়ায় জেগে উঠেছে আমার শরীরের শরীরের শিরা, উপশিরাগুলো। ভীষন অলস লাগছে। এলোমেলো হয়ে উঠছে মন। ডানা মেলে উড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে কাউকে নিয়ে।

ঠিক আকাশে। কিন্তু সেই সময় কাকে পাই। কে শুনবে আমার মনের আত্মনাদ, দেখবে ভিতরের হাঁ হাঁ কার, বুঝতে চেষ্টা করবে মনের অনুভুতি। এভাবেই মনটা চটপট করতে থাকে আর কাউকে পেতে খুবই ইচ্ছে জাগে। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে প্রবল বর্ষন না হলে ও মনের রাজ্যে সিডর, সাইক্লোন শুরু হয়ে যায়।

এরই মাঝে হঠাৎ মৃদু হাওয়ায় রিমিঝিমি বৃষ্টির ফোঁটা আরো জোরে পড়তে শুরু হয়। মনটা আনন্দে নাচতে শুরু হয় বৃষ্টির ফোঁটার সাথে। আর শুরু করে দিই একাকী বৃষ্টিতে ভেজা। আকাশ কিছুটা উজ্জল। মেঘেরা তাদের আপন মনে লুকোচুরি খেলা খেলে যাচ্ছে।

ছোট বেলায় আমরা যেমন গ্রামে লুকোচুরি খেলতাম ঠিক সেই রকম। একা একা বাসার ছাঁদে নীরবে বৃষ্টিতে ভেজা। (কাউকে বৃষ্টিতে ভেজার সংঙ্গী হিসেবে পেলে খুব মজা হত) এক সময় অন্য মনস্কা হয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিটা উপভোগ করতে শুরু করি। এমন সময় অত্যন্ত মৃদু একটু চুড়ির টুংটাং, নুপূরের নিক্কন শব্দ শুনেই চোখগুলো আর বন্ধ রাখতে পারিনি। চোখ খুলতেই বুঝতে পারি, অত্যন্ত কৌতুহলপূর্নভাবে কেউ আমাকে নিরীক্ষন করিতেছে।

তখনি দু’খানি চোখ আমার মনে পড়িয়া গেল- বিশ্বাস, সরলতা এবং মায়াভরা ঢল ঢল দু’খানি বড় বড় চোখ, কালো কালো তারা, ঘনকৃষ্ণ পল্লব, স্থির-স্নিগ্ধ দৃষ্টি। সহসা হৃদয়টা কে যেন একটা কঠিন মুষ্টির দ্বারা চাপিয়া ধরিল এবং বেদনায় ভিতরটা টনটন করিয়া উঠিল। অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইল আমার দৃষ্টিপনে। মনে হচ্ছে বিধাতার নির্দেশে আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে আমার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে, দূর করতে আমার একাকীত্বতা, পূরন করতে মনের খোরাক। সেকি! ফুটন্ত লাল গোলাপের মত দেহ খানি তার জড়িয়ে আছে বৃষ্টিতে ভিজা পোশাকের মাঝে।

স্পর্শ করতেই যেন রক্ত ঝরে। পৃথিবীর সকল সুখ বুঝি এই দেহ খানির মাঝে লুকিয়ে আছে। প্রকৃতির তিমিরের মত কেশ তার। প্রকৃতির সকল তিমির বিঝি একেই হার মানাবে! স্নিগ্ধ তুসার শুভ্রের মত গাল দু’খানি, ঠোঁট দু’খানি কপোত কপোতির ঠোঁটের মত! টোকা পড়লেই যেন রক্ত ঝরবে দেহ খানি থেকে। মন চাচ্ছে দুটি কোমল হস্ত দিয়ে তার সৌন্দর্য্য টুকু স্পর্শ করে উপভোগ করি।

কিছু দিন আগেও সে আমার পাছে পাছে ঘুরছিল যখন আমি তার গৃহ শিক্ষক ছিলাম। অনেক চেষ্টা চালিয়েছে আমার সংগ পেতে। অনেক কিছুই করতে চেয়েছিল আমাকে সে আপন করে পাওয়ার জন্য। এমনকি দেহটাও উজাড় করতে চেয়েছিল শুধু আমি গ্রাহ্য করিনি বলে তা হলো না। ইচ্ছে করলেই মনের সকল আহ্লাদ পুরন করতে পারতাম, কিন্তু তাকে তো কখনো তেমন গ্রাহ্য করি নাই, এমনকি স্পর্শওনা, করার চেষ্টাও করি নাই।

বাধ্য হয়ে তাকে ত্যাগ করার অনেক কৌশল অবলম্বন করি, তা ও সফল হতে পারিনি। শেষ পড়ালেখা না শিখার অভিযোগ জানিয়ে তার মাকে তার নামে আরো অনেক কিছু বলে সেখান থেকে চলে আসি। কিন্তু তার পরও সে আমার পিছু ছাড়ে না। দীর্ঘদিন পর তার সাথে আমার দেখা। আজকের মত আর কখনো আমি তার সৌন্দর্য্য প্রত্যক্ষ করি নাই বলেই আজ আমার এই পরিনতি।

প্রকৃতির রাজ্যে ঝরছে যেমন প্রবল বর্ষন। দুজনের মনের মাঝেও ঝরছে তেমন প্রবল বর্ষন, সিডর একজন আরেক জনকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নিতে। আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়ে সে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আমি ছাড়া তার আর কেউ নেই। সে তার বাবা মায়ের সংসার ছেড়ে প্রকৃতির এই বর্ষনে আমার পাশে এসে উপনিত হয়েছে।

আমার কল্পনার রাজ্য থেকে যখনি বাস্তব জগতে পদার্পন করি ঠিক তখনি সে প্রবল আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমিও সস্নেহে তাকে বুকের মাঝে আগলে রাখি যাতে আর কেউ তাকে আমার কাছ থেকে কিছুতেই আলাদা করতে না পারে। প্রকৃতি আমাদের এই মিলন দেখে না হেসে পারে নি। আমাদের এই আনন্দ দেখে প্রবল বর্ষন বেশি সময় টিকে থাকতে পারেনি। ক্রমান্বয়ে পূনরায় সুর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। বিধাতাও বোধ হয় আমাদের এই মধুর মিলনের অপেক্ষায় ছিল।

তাই ফুলগুলোকে মধুর সুবাসে ফুঁটিয়ে তুলে। সবার সাথে ভাগিধার হয়ে পেয়ারা গাছের পাতার আড়াল থেকে ছোট টুনটুনি টুন টুন টিন টিন শব্দে গান গাওয়া শুরু করে। ছাদের কবুতরগুলোও আমাদের সুখের পাশে ভাগিদার হয়ে একটি অন্যটির ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে তাদের ভালবাসা প্রকাশ করতে থাকে। মাহবুব আলম মুরাদ বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী সাহিত্য বিভাগ মোবাঃ ০১৯১৯ ৮৭৯৩০৯ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.