শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
ইমন ভাইয়ার সাথে আমার প্রথম পরিচয়- গানের মাধ্যমে। আমি তখনো বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড বলতে চিনি অর্থহীন আর ক্রিপ্টিক ফেইথ। সেটা ২০০৪ এর কথা। ব্ল্যাক ভালো পরিচিতি পেয়েছে তখন, বন্ধুরা অনেকেই শোনে ওদের গান। আমার তখনো শোনা হয়ে ওঠেনি।
আমার বন্ধু অনিক, একদিন আমাকে জোড় করেই ব্ল্যাকের একটা অ্যালবাম কিনিয়ে নিল। সেটা ছিলো "উৎসবের পর"। মনে মনে ভাবলাম- কি আর এমন গান হবে! কিন্তু বাসায় এসে বাজিয়ে শুনতেই যেন ক্যামন যেন মোহাচ্ছন হয়ে গেলাম ওগুলো শুনতে শুনতে। সমসাময়িক বাংলা ব্যান্ডের গানের তুলনায় ব্ল্যাকের গানগুলো ছিল একেবারেই অন্যরকম, কি মিউজিকে - কি লিরিকে, কি গায়কীতে! আমার তখন চলছিলো ব্ল্যাক-গ্রস্থতার পালা। সারাদিন গানগুলো উল্টেপাল্টে শুনতাম, আর ভাবতাম সুর স্রষ্টা দের তো সামনে দেখতে পাচ্ছি।
একেবারেই অন্যধাচের এই লিরিক গুলো যিনি লেখেন, তিনি কে? সিডির ফ্ল্যাপে পড়ে জেনেছি ওনার নাম জুবায়ের হোসেন ইমন। কে তিনি?
ব্ল্যাকের প্রথম একক অ্যালবাম আর মিক্সড অ্যালবাম গুলো সংগ্রহ করে ফেললাম শিঘ্রীই। শোনা হয়ে গেলো সব গান। আমি তখন ব্ল্যাকের লিরিক দ্বারা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত। আগে থেকেই টুকটাক লেখার অভ্যেস ছিলো।
গল্পই লেখার চেষ্টা করতাম বেশী। জুবায়ের হোসেন ইমন নামের এই মানুষটার লিরিক গুলো আমাকে এতটাই প্রভাবিত করলো, আমি অনেক অনেক লিরিক (আমি লিরিকই বলি, লিরিক মনে করেই লিখি। কবিতা লেখার বিষয়টা আসলে আমার মাথায় কখনোই থাকে না! শব্দেরা বেশী বেয়াড়াপণা শুরু করলে আমি সেগুলোকে কবিতা বানিয়ে ফেলি!) লেখা শুরু করলাম। অবচেতনেই হয়ত অন্যরকম একটা প্যাটার্নে লিখতে চাইতাম, কেননা ব্ল্যাকের গান তখন আমার শরীরে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী তে অনেকেই আমাকে বলেছে, তোমার কবিতাগুলো ব্ল্যাকের লিরিকের মত লাগে পড়তে! যতবারই আমি শুনেছি কথাটা কারো কাছ থেকে, ততবারই একটা আনন্দের হিল্লোল বয়ে গিয়েছে আমার ভেতর।
লিরিক লিখে ফেললাম অনেকগুলো। বন্ধুরা মিলে সারাদিন প্ল্যান করি একটা ব্যান্ড বানাবো। কে কি বাজাবো ঠিকও করে ফেলি। বাসায় আব্বু গানবাজনা পছন্দ করে না- কি করবো? টাকা জমিয়ে জমিয়ে কিনে ফেলি একটা গীটার- চলতে থাকে আব্বুর চোখ এড়িয়ে গীটার শেখা, আর লিরিক লেখা। ব্ল্যাক তখন আমার কাছে অন্য কিছু- কেউ ব্ল্যাক নিয়ে খারাপ মন্তব্য করলে পার্সোনাল অ্যাটাক হিসেবে নিতাম! (সত্যি কথা বলতে এখনো নিই।
আমার সাথে কথা বলার সময় সাবধান!) কিন্তু যার লেখা গানে আমার মধ্যে এত উৎসাহ, এত প্রেরণা, সেই ইমন ভাই কে তো দেখলাম না! প্রায়ই ভাবতাম অ্যালবাম এর ফ্ল্যাপে লিরিসিস্ট এর ছবি ক্যানো দেয়া হয় না! আমার কাছে তখন ছবিই অনেক...
স্কুল কলেজ পর্ব পেরোলাম, এইচ এস সি পরীক্ষা শেষে কয়েক টুকরো অবসর। সামুতে আসা হয় নিয়মিত। তখনো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। নাফিস ইফতেখার ভাইয়ের লেখাগুলো নিয়মিত পড়া হয়। হোমপেজে একদিন পোস্ট পড়তে পড়তে আটকে গেলাম একটা নামে।
ইমন জুবায়ের। লেখাটা পড়লাম। বুঝে উঠতে পারলাম না ইনিই কি সেই ইমন ভাই! আগের বেশ কিছু পোস্ট ঘেটে দেখা হলো। আরে, ইনিই তো! বিশ্বাসই হচ্ছিল না ইমন ভাইকে ব্লগে এসে পেয়ে গেলাম। তড়িঘড়ি করে অ্যাকাউন্ট খুললাম।
লেখাও শুরু করলাম- জেনারেল না হলে তো ওনার ব্লগে কমেন্ট করতে পারছি না। একসময় পেলাম কমেন্ট একসেস। ভাইয়ার একা ২ নিয়ে করা পোস্টেই বোধ হয় প্রথম কমেন্ট করেছিলাম।
আমি কল্পনা করতে ভালোবাসি। আমার কল্পনায় ইমন ভাইয়া ছিলেন দাড়িগোফে ঢাকা একজন।
কাচাপাকা চুল। চোখে মোটা রীমের চশমা। কিছুটা রবীন্দ্রনাথ টাইপ! খুব রাগ করে থাকলে তাকে যেমন দেখায়, খুব খুশীর সময়েও একই রকম দেখায়, এটাই ছিলো আমার ধারণা! তো তখনো ব্লগের কেউ ইমন ভাইয়ার ছবি দেখেন নি। আমি একটা পোস্ট লিখলাম, মিথ্যা - ইমন জুবায়ের ভাইয়ের সেই গান... পোস্টটা পড়ে ইমন ভাই নিজে থেকেই ওনার ছবি দিয়ে গেলেন, আর ওনাকে প্রথম দেখলাম। দেখলাম কল্পনার সাথে কোন মিলই নেই! হাঃ হাঃ।
সেটা ছিলো আগস্টে।
জন্মদিনের পোস্ট লিখতে গিয়ে সব মনে পড়ে গেলো।
এর মধ্যেই ফেবুতে ভাইয়াকে বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠালাম। ভাইয়াও সাড়া দিলেন। মোবাইল নাম্বার ও নেয়া হলো।
কিন্তু ফোনটা আজও দেয়া হয়নি। ভাইয়ার সম্ভবত এটা নিয়ে একটু অভিমানও আছে। ফোন যে দিতে ইচ্ছে করে নি তা নয়। বেশ অনেকবারই হাতে ফোন নিয়ে ভাইয়ার নাম্বার ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গিয়েছি। কি যেন একটা আড়ষ্টতায় শেষ পর্যন্ত ফোন দিতে পারিনি! বিষয়টা বেশ হাস্যকর হয়তো... মাঝে বেশ কয়েকবার ইচ্ছে করেছিলো ভাইয়ার সাথে গিয়ে দেখা করবো।
সেটাও করা হয়নি। কারণ আলাদা অবশ্য। ওনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব কিনা আর বলবটা কি- এসব ভেবেই যাওয়ার সাহস করিনি। আমি যাদের কে খুব পছন্দ করি তাদের সামনে গেলে আমি আড়ষ্ট হয়ে যাই! মুখ থেকে কথা সরে না...
ইমন ভাইয়ার ব্যপারে আর নতুন করে কি বলব? উনি খুব পড়ুয়া। নাক মুখ গুঁজে বই পড়েন আর দুহাতে লেখেন (আক্ষরিক অর্থেই!)।
সামুর একটা জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া হচ্ছেন ভাইয়া, এমনটা তো সবাই বলেই! ব্লগে এমন খুব কম ব্লগারই আছেন যাদের প্রিয় পোস্টে ভাইয়ার কোন পোস্ট নেই! প্রতিনিয়ত আমাদের উপহার দিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন গল্প, গান, গবেষণা, প্রবন্ধ, মিথ আরো কতকিছু! ব্লগে এই লেখালিখির স্বীকৃতি হিসেবে গতবছর ডয়েচে ভেলে ব্লগ প্রতিযোগে মনোনীত হয়েছিলেন সামু থেকে। গতবছরের শেষে বাংলা ব্লগ দিবসে সামুর শ্রেষ্ঠ ১০ জন ব্লগারের ভেতর একজন নির্বাচিত হয়েছেন ভাইয়া। তবে আমি জানি, ভাইয়া এত এত পড়াশোনা আর লেখালিখি করেন এসব কিছু জন্যে না, নিজের ভেতরের একটা ভালোলাগা থেকে...
আজ ইমন ভাইয়ার জন্মদিন! প্রতিবার ভাবি এবারের ভাইয়ার জন্মদিনে একটা পোস্ট দেবই, কিন্তু প্রতিবারই আমার আগেই দেখি অনেকগুলো পোস্ট চলে এসেছে। আর দেয়া হয়না। কিন্তু এবার ঠিক করে ফেলেছি দেবই।
তাই লেখা শুরু করে। (তখন বাজে সাড়ে ১২ টা) । তার আগেই অবশ্যই হোমপেজে ঘুরে দেখে নিয়েছি আর কেউ পোস্ট দিয়ে ফেলল কিনা ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে! তখনো পর্যন্ত কেউ দেয়নি...
যাহোক! জন্মদিনে ভাইয়ার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!
ভাইয়া কি কেক পছন্দ করেন, বা আদৌ পছন্দ করেন কি জানিনা! তাই আমার পছন্দের কেক দিলাম! ব্ল্যাকফরেস্ট।
ভাল থাকুন সবসময়, আর এভাবেই প্রাণবন্ত করে রাখুন সবাইকে... সামনের দিনগুলো দারুণ কাটুক এই প্রত্যাশা রইল
এই দ্যাখো না আলোর মেলায়/
পাখিদের প্রেম দুপুর বেলায়।
দু হাতে নাও এসব/
এসব তো তোমারই...
দূর থেকে শোন ঝর্নারই গান/
দ্যাখো পাতার সবুজ অভিমান।
এই দ্যাখো না এই সন্ধ্যায়/
জীবনের গভীর মায়া।
দু হাতে নাও এসব/
এসব তো তোমারই...
বিকেলের নরম রোদে/
আমার ছায়া আকাশের তলে/
ঝিরিঝিরি মৃদুস্রোত হ্রদের জলে...
আমার ধারণা ভাইয়া রেগেমেগে ভ্রুকুটি করতে পারেন না! দেখি এই লেখাটা দেখে ভ্রুকুটি পাই, না ভাইয়ার মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে ওঠে...... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।