হুমায়ুন
গভীর রাতেরা সব একাকী ঘুমিয়ে আছে, মাঝে মাঝে ঘুমঘোরে আমাকে জড়ায়
রাত কী সরীসৃপ, বুঝি না আবেগী আরামে, পদ্মগোখরার ঠোঁট চুমুতে ভিজাই
এখন আমার চিৎকারে মাটি ফেটে যায়, যারা আছে প্রাণবন্ত মাটির ছায়ায়, উজায়
এখন আমার চিৎকারে শূন্যতা খান খান হয়ে ভেঙে পড়ে, থেকো শেষ যাত্রায়
এখন আমার বুকে কান্না ঘুমায়, রোদনের লীলাবতী মাত্রায়, সব যায়, হায় হায়!
বাংলার ক্রন্দসী সমাবেশ অশ্রু আখ্যানে রচে হুমায়ুন নামা, ছায়াকে রঙিন করে
ছায়ারঞ্জন, শিবরঞ্জনী রাগে মঞ্চেই এক অন্তর্গত দ্বন্দে কেঁপে উঠে তোমারই দেহ
হুমায়ুন, ফরিদীর কথা বলো, তার সাথে দেখা হলে বলো, জীবনই মঞ্চস্থ হয়
যাচ্ছো যে চলে, না বলে, নিখোঁজ সংবাদ হয়ে আমিও পালিয়ে যাবো
আত্মহনন ও আত্মচেতন দশা, একই কথা, আমিও একদিন প্রতিবাদী
আমিও চলে যাই, তা’হলে চলে গেলে কেন, না বলে, জানি আমিও…
কান্দনে বিধান আজি নাহি বদলায়, জন্ম ও মৃত্যুই সার্বজনীন, বাকি সব মূর্তমান
জীবন মরণ যেখানে কুন্ডলী পাকায়, কোলাহলপ্রিয় শুধু জীবন, মরণ বড়োই অভিমানী
ফরিদী,হুমায়ুনকে দেখেছো তুমি! সে কেবলই ঘুমায়, অনন্ত শয্যায়, ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি, দরোজা খুলে না, উঠে না, এ যে মরণের ঘুম, ছিটকিনি আটকিয়ে মরণ ঘুমায়;
হুমায়ুন, ফরিদীকে ডেকে তুলো তো, এতোগুলো বেলা পড়ে পড়ে ঘুমাবে শুধুই
তোমারই ত্বকের নীচে নাট্যবর প্রতিটি নাটকেই কোষ বদলায়,শুধুই নাটক, জীবন
গোটা শরীরেই স্ক্রিপ্ট, একমাত্র নাটকেই পুস্তকের বিলয় ঘটে, অক্ষরের সমাধি হয়
হুমায়ুন, জীবন্ত ভাষা, ফরিদীকে ডেকে তুলো তো, এতোগুলো বেলা পড়ে পড়ে ঘুমায়
অক্ষরগুলো এক একটা মাংসের টুকরা, বসাতে গেলাম কবিতার গায়ে, জরিবুটির
কাজ হয়ে যায়; কোন মিনারই একবারে শেষ হয় না, বংশপরম্পরায়, একটি শরীর
দাফনের অপেক্ষায় আছে, একজন শিল্পী মরণেই ফিরে পায় নিজের শরীর
অক্ষরে উপস্থাপিত বই, যাত্রার ভাষায়, স্বশরীরে হাজির ভাষা, হুমায়ূন, ভাষার শরীর
তোমার চিবুক, ঠোঁটের হালকা কাঁপন, অস্তিত্বের মহাধমনীর সেঁচযন্ত্র, সব আমাকে শিখাও; আমার হাতে তুলে দাও বাংলার রোরুদ্যমান কনসার্টে সেই একহারা একতারা; যা কেবল, তোমারই সাথে বাজে; সমগ্র সত্তায় কেরামত মঙ্গল, হাহাকার
গলাচিরা চিৎকার, ভূস্বামীরা, সামন্ত, সবাই খামোশ হয়ে যায়। ।
কেউ চিনে না আমাকে, আমিও কাউকে না, কারণ, আমার কোন নাম নাই
আমার নাম আমি রেখেছি, আম্রমুকল, তিলফুল, অচেনা ফুল দেখলেই
আমি নিজের নাম রাখি “অচিন বকুল”।
ফুল অনেকক্ষণ নিজের সৌরভে বেঁচে থাকে, তোমারই দেহের উপর ফুল
দুই মুর্দার পরষ্পরের কাছে নিথর নির্বাক; তবুও সৌরভ শোভায় মনে হয়
ফুলেরা মরে না; আমার নাম হউক মুরগী ফুল। আমি ফুল দেখে দেখে
মুর্দারের শরীর হই, কবির কারণ।
আমাকে চিনে না কেউ, আমার নাম নাই, বেনামী জীবনই বেশ রোমাণ্টিক
রোমাঞ্চ রোমন্থনে কাল কেটে যায়; হাজার বিবাগী কাল, তবুও তোমার
গন্তব্যগহীনে আমারও হবে আনাগোনা, তার আগে বিনা অনুমতিতেই
আমি নিজের নাম রাখি, হুমায়ুন। ।
একজন হুমায়ুনের হাতে কুসুমিত ইস্পাত
একজন হুমায়ুনের আছে বিশ্ববীক্ষা
একজন হুমায়ুন, ফরিদীকে ডাকে, ভাষাসর্বস্ব শরীর
আমিও আমাকে ডাকি, হুমায়ুন! এসো, জীবনমরণ ঐক্যবদ্ধ ডোরে
কিছুটা সময় কাটাই, আলসেমী করে, চোখ বুজে, চোখ বুজে।
আজ আমি যাই শহীদ মিনারে
কুসুমিত ইস্পাত নিয়ে বসে আছি
লিখি শুধু অর্ঘ্যের আলেখ্য
কিংবা লিখার পরিকল্পনা করি
গত সাতদিন আমি শুধু আমারই পাপ সাফ করি
গত সাতদিন আমারই ভেতরবাড়ি ঝাড়ু দেই
গত সাতদিন আমি কাব্যের প্রস্ততি নেই
তখনই তুমি চলে গেলে, হুমায়ুন… আহা!
আমার কোষে কোষে পুঞ্জীভূত পাপ
তবুও আমি আমার হাতের কোষে রেখেছি এক আঁজলা অশ্রু
আমার ত্বকের নীচে লুকানো অন্ধকার
তবুও আমি আমার শরীরেই এবাদত ধারণ করি
হুমায়ুন, তারপরও দোয়া করি…
আমার চিৎকারে মেঘের চোখ ফুটে
আমার কান্নায় বাগানে ফুলের বিকাশ
হুমায়ুন, শূন্যতায়, আমি শূন্য, কিছু নাই হয়ে বসে আছি
এক সুরম্য চত্বরে আমরা আড্ডা দেই
এই সব সুন্দর চত্তরে আমাদের কথোপকথন চলতেই থাকবে। ।
শুরু থেকে, সেই কিছু নাই থেকে যখন দুনিয়ার ফোঁপানো কান্না
অশ্রু উদগীরণ_ সেই থেকে একটিই কথোপকথন
আছি আমি, নাই আমি
একটিই কথা
হুমায়ুনের জন্য এই একটি কবিতাই লিখা হয়। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।