ব্যক্তিগত জীবনের ভাগ কাউকে তেমন দিতে চাননি হুমায়ুন ফরীদি। ক্ষণজন্মা অভিনেতা অভিনয়টাকেই শুধু ভক্তদের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। এটি করতে গিয়ে শেষ জীবনে দারুণ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দেশ-বিদেশে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠা শিল্পী বহু দিন একলা একটি ঘরে শুয়ে বসে কাটিয়েছেন। প্রথম জীবনে যে ঘর বেঁধেছিলেন, সেটি টেকেনি।
এরই মাঝে দেবজানী নামে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের বাবা হন তিনি। কিন্তু মেয়েকে তাঁর সঙ্গে রাখতে পারেননি। এ অপূর্ণতা নিয়েই ফের ঘর বাঁধেন দেশের আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সঙ্গে। বিটিভির কোটি কোটি দর্শকের কাছে সুবর্ণা তখন মেগাস্টার। আর ফরীদিকে জানেন কেবল মঞ্চের মানুষরা।
বিদগ্ধ বন্ধুজনেরা। এর পরও নির্দ্বিধায় যুগল পথে হেঁটে চলার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞ ছিলেন তারা। কিন্তু চাইলেও তো সব হয় না। আর তাই দীর্ঘ সময় এক ছাদের নিচে থাকার পর ছন্দপতন ঘটে। ২০০৮ সালে ফরীদির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান সুবর্ণা মুস্তাফা।
মূলত এর থেকেই নিঃসঙ্গতায় ডুবেন বার্ধক্যে পা দেয়া ফরীদি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর সুবর্ণার নামে কেনা ধানমণ্ডির ফ্ল্যাটে একলা বাস করতেন তিনি। বিশাল ফ্ল্যাটে তাঁর সঙ্গী বলতে ছিল একটি বিড়াল আর দুইজন কাজের ছেলে। এরাই দেখা-শোনা করত তাঁর। সময় মতো খাবার দিত।
ওষুধ খাওয়াত। অজানা কারণে সূবর্ণার নামে কেনা ফ্ল্যাটটি পরে ছেড়ে দেন ফরীদি। ওঠেন অন্য একটি ফ্ল্যাটে। এ ফ্ল্যাটেও একলা জীবন ছিল। বিকল্প হিসেবে এ সময় তিনি মিডিয়ার মানুষজনদের কাছে টেনে নেন।
এক সময়ের ভীষণ অভিমানী অহঙ্কারী মানুুষটি ছোট-বড় সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাছে হয়ে উঠেন প্রিয় ‘ফরীদি ভাই’। শূটিং স্পটে তাঁদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিতেন তিনি। তাঁর কৌতুকের বিশেষ ভক্ত হয়ে উঠেছিল পুরো মিডিয়া। অদ্ভুত সুন্দর এক ভঙ্গিতে কৌতুক করতেন তিনি। সেটের অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সকলে মিলে দারুন যতœ করতেন প্রিয় মানুষটির।
বাসায় চলে আসত আড্ডা। অনেকেই ফরীদির ফ্ল্যাটে পর ঘণ্টার ঘণ্টা কাটিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন এবং অতি অবশ্যই বাড়ি ফিরে গেছেন। আর তখনই একলা জীবনের সঙ্গে দেখা হয়েছে এ অভিনেতার। মৃত্যুর পর সোমবার তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মৃদু বাতাসে নড়ছে পরিপাটি সাজানো পর্দা।
ছোট্ট বিছানার পাশের টেবিলে অযতেœ পড়ে আছে নেবুলাইজার মেশিন। এর পাশেই ছাইদানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে দুটি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ। সবই বলে দিচ্ছিলÑ অবশেষে বড় নিঃসঙ্গ ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। মানুষটিকে নিঃসঙ্গ করা সুবর্ণাও শেষ দেখা দেখতে এসেছিলেন ফরীদিকে। কিন্তু তাঁর আগেই মরদেহবাহী গাড়িতে উঠে পড়েন পরিত্যাক্ত প্রেমিক পুরুষ।
আর তাই বাসন্তী রঙে সেজে আসা সুর্বণার সঙ্গে আর দেখা হয়নি তাঁর। http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2012-02-14&ni=86547 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।