আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতপাতা দ্বিতীয় সংখ্যার সম্পাদকীয়

দ্বিমাসিক সাতপাতা বাতাসে উস্‌কে ওঠা ধুলোর কুণ্ডলী ফণা তুলছে। এলোবায়ু তাড়িত না কোলাহল না নিরজন দুপুর সেই বিষাক্ত ফণার ছোবল বুকে নিয়ে আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। অট্টালিকা বাড়ি নির্মাণের আয়োজন ঘিরে রাখা ইটকাঠ, ধীর কর্মী সঞ্চার আর শ্রীহীন সবুজহীন দু/এক চিলতে ফ্যাকাশে মাঠের মাঝখানে এক অধিবাসী হয়েও সবাইকে জানিয়ে দিই বাংলাদেশের চিরায়ত নতুন রূপবান বৈশাখী দিনের শুভেচ্ছা। বৈশাখ নিয়ে আমি আমার পিপাসাকে ক্ষণকালের জন্য পেশ করতে পারি আর তা ক্ষণভগ্নাংশের মাঝেই অনুবাদ হয়ে যায় কচি পাটের বিথীকায় নিপুণ হরিণীর মতো বিচরণকারী বাতাসের ভাষায়, কখনো জনমনুষ্যিহীন জংলা ভিটার প্রান্তে কাঁচামিঠে আমের ভারে নুয়ে পড়া শাখার ছায়ায়, হলুদ পাতায় উপচে ওঠা কবরস্থানের আশ্চর্য মৌনতাকে জেয়ারতকারী বাঁশঝাড়ে, কোলাহলময় দখিনের বৃক্ষশোভিত পুকুরে কিংবা বৈশাখের কোনো দারুণ মেলায় বাঁশির সুরে-বেসুরে, হুতোম পেঁচার মুখোশে, কাঁচা আমের আগুনঝাল ভর্তা এবং কিশোরীর বিনুনি- রেশমি ফিতে আর লাল আলতায়। আমি বাংলাদেশের বৈশাখের এইসব সুধা-স্বপ্ন নিয়ে আপনাদের কাছে আসতে চেয়েছি।

বাংলার বৈশাখের এই যে ধাঁচ, যার কিছুটা আপনিতে আর কিছুটা আমাদের আহ্লাদে, তা আমাদের এই রুঠা বিদীর্ণ নাগরিক জীবনেও এক-একটা ছকে থিতু হচ্ছে। বাংলার নদীজল- বাংলার সংস্কৃতি- হাজার বছরের অভ্যাস ও অভিজ্ঞতার উদরে জন্মেছি আমরা সন্তান। কিন্তু পরিতাপ, এর মাঝে এখনও কিছু মানুষ সেই জন্ম ও জনমকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। যে সাংস্কৃতিক অভ্যাস ও অভিজ্ঞতার কথা বলছি, তার সাথে মিশ্র হয়ে আছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রজ্ঞা, যা হাজার বছর ধরে অস্তিত্বমান স্রেফ ধেয়ে চলা এক জনগোষ্ঠীকে দিয়েছে আত্মপরিচয়ের খোলাখুলি সূত্র এবং স্বীকৃতি। কিছু মানুষ সেই সংগ্রামের প্রজ্ঞা ও পরিচয়ের স্বীকৃতিকে বেমালুম অস্বীকার করে যাচ্ছে তাদের কর্মে, ভাষায় সর্বতোভাবে।

আমরা দেখেছি বাংলার সংস্কৃতির ধারক-প্রতীক বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে দিয়েছে তারা, তারা ভেঙে দেয় লালনের উন্নত ভাস্কর্য কখনো নগরের সড়কদ্বীপে উজ্জ্বল হয়ে থাকা ধবল বলাকার প্রতিকৃতি। তারা ধর্মের দোহাই দেয় এবং তারা আমাদের মাঝেই বাস করে। আমরা আমাদের সংস্কৃতি হন্তারকদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করি সোজা ভাষায়। আর সেই উচ্চারণকে ধারণ করার প্রয়াস হিসেবে সাতপাতা প্রকাশিত হচ্ছে। বাঙালির ইতিহাস, হর্ষ-বেদনা ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরবে এমন লেখা আমরা ছাপাতে চাই।

তবে সীমাবদ্ধতা হচ্ছে তেমন মানসম্পন্ন লেখা ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সেইসব রচনা পাঠ করতে চাই যা বাঙালি জাতির পরিচয়কে ব্যাখ্যা করবে নতুন আঙ্গিকে, নতুন ঢঙে এবং একইসঙ্গে মিটবে শিল্পের খোরাক। লেখা পাঠানোর সুযোগ উন্মুক্ত, যে কারও মানসম্পন্ন লেখা ছাপানোর জন্য বিবেচিত হবে। ভালো কথা, পশ্চিমবঙ্গের কবি জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা এ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে, খুব আশাকরি বাংলাদেশের পাঠকের কবিতাতৃষ্ণার কাছে জয়তী সমাদৃত হবেন। ভালোকথা দুই, কবি টোকন ঠাকুর ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্ড়্গার ২০১০’ লাভ করেছেন।

সাতপাতার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ আঁকাতে গিয়ে আমরা এখন খুব কাছাকাছি, পাঠককে সাক্ষী রেখে তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। নিশ্চই তাঁর লেখার পরিধি আরও বিকশিত হবে। যাই হোক, প্রথম সংখ্যায় সম্পাদকীয় জাতের কিছু বলা হয়নি। কেউ কেউ কৈফিয়ত চেয়েছেন, দ্বিতীয় সংখ্যায় কিছু বলার তাড়না বাস্তব ছিল। দ্বিমাসিক কাগজ হিসেবে সাতপাতা আবার হাজির হবে সামনের জুনে।

খুব বিশ্বাস আছে, প্রকাশনা কখনো রয়ে-সয়ে অথবা ফাঁকি-ঝুঁকি মেরে চলবে না; বরঞ্চ গতিশীল থাকবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত হবে। নির্বাহী সম্পাদক, প্রচ্ছদশিল্পী, লেখকবৃন্দ ও কাগজ-পাগলরা প্রয়াসটিকে স্বার্থক করছেন দিনকে দিন, এটাকে কর্তব্যের ছাপ মেরে তারা নির্বিকার আছেন। তাদের ধন্যবাদ দিই না। তবে সাথে থাকার জন্য পাঠককে ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.