আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ... ( উনি একজন বাংলাদেশী। কিন্তু এই কথা খুব কম মানুষ জানে)
নীরবেই কেটে গেল ফুটবল জাদুকর খ্যাত সামাদের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। শুধু এবার নয়, এত বড় মাপের ফুটবলার হওয়া সত্ত্বেও সামাদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয় না কখনোই। ১৮৯৫ সালে ভারতের পূর্ণিয়ায় এ কিংবদন্তি ফুটবলার জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভারতে জন্ম নিলেও ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সামাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯১৫ থেকে ১৯৩৮ এ ২৩ বছর তিনি দুর্দান্ত ফুটবল খেলে 'জাদুকর' খেতাব পান। উপমহাদেশের কোনো দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার সুযোগ না পেলেও সামাদের নৈপুণ্য এশিয়া, ইউরোপসহ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সামাদ মাঠে থাকা অবস্থায় অনেক দলই ইংরেজদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু তার নৈপুণ্যের কাছে কেউ পেরে উঠতে পারেননি।
কলকাতা মাঠে অনেক সময় ম্যাচ শুরুর আগে তিনি ভক্তদের কাছে জানতে চাইতেন 'আজকের ম্যাচে আপনারা আমার কত গোল দেখতে চান?' দর্শকরা যা বলতেন সেটাকে রক্ষা করেই তিনি গুনে গুনে গোল দিতেন। ফুটবল মাঠের নজিরবিহীন এক ঘটনা না বললেই নয়। মধ্যমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের পাঁচজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে সামাদ পোস্টে বল মারলেন। কিন্তু তা জালে না গিয়ে সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। রেফারি দিলেন আউটের সিদ্ধান্ত।
কিন্তু জাদুকর সামাদ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন আমি এ সিদ্ধান্ত মানি না। বল ঠিকই জালে গেছে। আপনারা মেপে দেখুন, এ গোলপোস্টের সাইজ ছোট। শেষ পর্যন্ত পোস্ট মেপে দেখা গেল সামাদের কথাই ঠিক। রেফারি বাধ্য হলেন বাইরে যাওয়া শটকে গোল ঘোষণা করতে।
এ ধরনের অনেক নজির সৃষ্টি করে সামাদ ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নেন। ৪৮ বছর আগে এ কিংবদন্তি ফুটবলারের মৃত্যু হলেও ভারতের অনেক জায়গায় তার মৃত্যু বা জন্ম দিবসে নানা অনুষ্ঠান করে তাকে সম্মান জানানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তাকে স্মরণ করার প্রয়োজনবোধ করেন না দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ''বাংলাদেশ প্রতিদিনে''এর দিনাজপুর প্রতিনিধি অবশ্য জানিয়েছেন গতকাল তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বতীপুরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। মিলাদ মাহফিল ছাড়াও তার স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের ফুটবলের অভিভাবক বাফুফে সামাদকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে প্রতিবার নীরব থাকছে কেন? ভারতে জন্ম নেওয়ায় ভারতবাসী এখনো তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। নিখিল ভারত ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে সামাদের ছবি টাঙানো রয়েছে। বিহারে এক স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে 'জাদুকর সামাদ স্টেডিয়াম'। বাংলাদেশে এত জনের নামে স্টেডিয়াম হচ্ছে, এ নিয়ে কেউ আপত্তিও তুলছে না। কিন্তু জাদুকর সামাদের নামে এখনো কোনো স্টেডিয়ামের নাম না হওয়াটা বিস্ময়করই বটে! '৪৭ সালে তিনি ভারত ত্যাগ করার পর এ দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন।
এত বড় ফুটবলার যে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, তা বর্তমান এ প্রজন্ম তো বটেই, অনেক প্রবীণও হয়তো জানেন না। তার গৌরবময় স্মৃতি ধরে রাখাটা অনেকে তাই জরুরি মনে করছেন। এভাবে অগোচরে থাকলে এই গ্রেট ফুটবলারের নাম ভবিষ্যতে মুখে কেউ উচ্চারণ করবে কি না সন্দেহ।
মূল- Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।