গতকাল ২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হল ৬ষ্ঠ অটিজম সচেতনতা দিবস। আমাদের দেশে এই দিনটি রাষ্ট্রীয় কিছু আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ কয়েক বছর ধরে পালন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অটিজমের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছেন যা আমাদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে। গরিব দেশে সাধারন প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুরাও রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে, এর জন্য সরকারের কর্তাব্যাক্তিরা সাধুবাদ পাবেন। যদিও দেশে কতজন অটিস্টিক শিশু আছে তার কোন সঠিক হিসাব তাদের কাছে নেই! উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে ২০ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত সে হিসাবে আমাদের মত জনবহুল দেশে এর সংখ্যা সহজেই অনুমেয়।
অটিজম কি তা শহুরে মানুষজন কম বেশী জানলেও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষরা এখনও এটিকে ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্থি হিসাবেই ধরে নেয়। তাই সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে রাষ্ট্রের আরও যত্নবান হতে হবে।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হওয়ার দরুন সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ বা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না, তারা তাদের মত করে চলতে বা বলতে চেষ্টা করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর জন্য আমাদের ত্রুটিপূর্ণ জিনকেই দায়ী করেছেন, এ ক্ষত্রে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে আরও নতুন কিছু বের করে এনে অটিজমকে আরও ভালো ভাবে জানা যায়। শিশুদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ ৬ মাস বয়সেই বোঝা যেতে পারে, তিন বছর বয়সের মধ্যে তা পরিপূর্ণরূপে দেখা যেতে পারে যা পরবর্তীতে সারাজীবন স্থায়ী হয়।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সমাজিক আচার ব্যাবহারে সাবলিল নাও হতে পারে। তারা অনেকটা একা থাকতে ভালবাসে কিন্তু তারপরেও তারা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবধ হয় তবে তা তৈরি হয় তাদের স্বীয় চাহিদা মোতাবেক। তাদের কাছে বন্ধুর সংখ্যার চেয়ে বন্ধুর সাথে নিজেকে খুঁজে ফেরার প্রবনতাই বেশী চোখে পড়ে। অপরিচিত মানুষের চোখে চোখ না রাখা, ইতস্তত বোধ করা, আমতা আমতা করে কথা বলার চেষ্টা করা তাদের স্বাভাবিক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী শিশু সঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না।
তারা হয়ত মাথা ঘোরাতে থাকবে, হাত উচু-নিচু করতে থাকবে, উচ্চ স্বরে কথাও বলতে পারে। তারা দৈনন্দিন একটা রুটিনের মধ্যে চলতে পছন্দ করে এর হের ফের হলেই রাগ করে থাকে। সময়মত খাবার খাওয়া, গোসল করা, প্রতিদিন একই রকমের কাপড় পরা তাদের রুটিনের মধ্যে পড়ে। অটিস্টিক শিশুরা তাদের পছন্দনীয় ক্ষেত্রে খুবই মেধাবী হয়ে থাকে, কেউ হয়ত খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে বা কেউ হয়ত খুব ভালো পিয়ানো বাজাতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে ভালো যত্ন নিলে অটিস্টিক শিশুরা সাবলীলভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
তাই রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার তথা সমাজের সচেতন ভুমিকা অটিস্টিক শিশুদের জীবনে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। তাদেরকে সমাজের বোঝা না ভেবে লুকানো প্রতিভা কাজে লাগিয়ে মানব সম্পদে পরিনত করা যেতে পারে, তারজন্য চাই শুধু একটু ভালবাসা আর তাদেরকে বোঝার সক্ষমতা।
সুনামগঞ্জের মত প্রান্তিক এলাকায় যেখানে স্বাভাবিক অবকাঠামই গড়ে উঠেনি সেখানে অটিস্টিক শিশুদের জন্য কোন কিছু না থাকাটা আস্বাভাবিক না। এক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশুদের পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো সামাজিক সংস্থা এখানে মুখ্য ভুমিকা পলন করতে পারে।
তারা অটিস্টিক শিশুর পরিবারদের সাথে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করে তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের ব্যাবস্থা করতে পারে। আমরা ফাউন্ডেশন একটু সক্ষম হয়ে উঠলে সুনামগঞ্জ তথা ভাটি এলাকায় এরূপ একটি ব্যাবস্থা গড়ে তুলবে যার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সমাজের যোগ্য অংশীদার করে তোলা যায়। আমাদেরকে জানতে হবে অটিজমে আক্রান্ত প্রায় সব শিশুরা বড় হয়ে উঠার পরও একা একা থাকার যোগ্য হয়ে উঠে না, তাদেরকে সারাজীবন অন্যের তত্বাবধায়নে থাকতে হয়। আর তাই অটিস্টিক শিশু আছে এমন পরিবারকে প্রস্তুত ও সচেতন হতে হবে কারন তারাই তাদের শেষ ও একমাত্র আশ্রয়স্থল। ধন্যবাদ।
মোঃ জাকারিয়া জামান তানভীর
প্রেসিডেন্ট, আমরা ফাউন্ডেশন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।