ভাল পাঠক হলেও নিজে কিছু লিখতে পারি না,মনের ভাবটা তাই ঠিকমত প্রকাশ করতে পারিনা....... আমি মানুষটা হুমায়ুন আহমেদের ভক্তই বলা যায়,যদিও অন্ধভক্ত নই। কিন্তু এখনো এই লোকটাকে বুঝে উঠতে পারলাম না ঠিকমত! আমার রীতিমত এলার্জি রয়েছে ভারতকে নিয়ে,অথচ ইদানিং হুমায়ুনের কয়েকটা লেখা দেখলাম ভারতের প্রতি নরম তোষনমূলক মনোভাবের! এর আগে দেখেছিলাম ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের পক্ষে সাফাই গাওয়া! অন্তত এই উত্তপ্ত সময় যখন বিএসএফের বাড়াবাড়ি সীমাহীন পর্যায়ে,টিপাইমুখ,ট্রানজিটের নামে যথেচ্ছাচার চলছে, ঠিক সেই সময় হুমায়ুনের নিম্নোক্ত টাইপের লেখাকে কী বলা যায় আমি বুঝতে পারছিনা!! লেখাটাঃ
"ভারত জুজু:
হুমায়ূন আহমেদ
আমরা যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন টঝওঝ ছিল প্রেসক্লাবের সামনে। যেকোনো উপলক্ষে আমরা মিছিল করে সেখানে যেতাম। 'আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাও' বলে বিকট চিৎকার দিয়ে আনন্দ নিয়ে ফিরে আসতাম। এটা ছিল রুটিন কার্যক্রম।
আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদেরএই চিৎকারে কিছু যেত-আসত না। তাতে কী? আমরা তো আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
এক সময় দেখি পাশের দেশ ভারত তাদের জায়গা নিয়ে নিল। যত দোষ ভারত ঘোষ অবস্থা। ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে গেল।
আমরা অতি-উৎসাহী। নিয়মিতভাবে নিউ মার্কেটেকেউ না কেউ ভারতের স্পাই হিসেবে মার খেয়ে আধমরা হতো। আমরা খুশি ভারতীয় স্পাই তো ধরা পড়ছে। মহান পাকিস্তানের জন্যে আমাদের অন্তর আপ্লুত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো একবার বললেন, ভারতকে শায়েস্তা করার জন্য প্রয়োজনে ঘাস খেয়ে হলেও পাকিস্তান অ্যাটম বোমা বানাবে।
আমরা আনন্দিত চিত্তে ঘাস খাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। ভারত আমাদের চিরশত্রু_এটা ততদিনে মাথায় ঢুকে গেছে, কিংবা ঢুকানো হয়েছে।
১৯৭১ সাল, প্রিয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুরু হলো আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়াল। তখনো সমস্যা_ভারত কি আর মানবিক কারণে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে? ভারতের মতলব ভালো হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ভারত চাচ্ছে পাকিস্তান ভেঙে টুকরা টুকরা করতে। যেই মুহূর্তে তারা সফল হবে, পূর্ব পাকিস্তান চলে যাবে তাদের দখলে। আমাদেরকে হিন্দি কথা শিখতে হবে।
ব্যাপার কিন্তু সে রকম ঘটল না। তারপরও ভারতবিরোধী আগুন জ্বালিয়ে রাখা বাংলাদেশের রাজনীতির একটা ধারা হয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলি্ল গেলেন। কিছু চুক্তি ভারতের সঙ্গে আমাদের হয়েছে। রাজনীতির একটা ধারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনা বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন। লাভ-ক্ষতি কী হয়েছে আমি জানি না। আমি একটা জিনিসই জানি, বাংলাদেশ বিক্রি হবার না।
শেখ হাসিনা কিংবা বেগম খালেদা জিয়া কেউ এই কাজটি করতে পারবেন না। ভারত জুজুর ভয় দেখানোর পুরানো খেলা কেন আমরা এখনো খেলছি?
ক্ষমতাধর যে রাষ্ট্রটি আমাদের পাশে, তার সাহায্যআমাদের ক্ষমতাবান হবার জন্য প্রয়োজন। তারা আমাদের নৌবন্দর ব্যবহারকরবে, করুক। বন্ধুত্বের হাত আমাদের অবশ্যই বাড়াতে হবে। সারাক্ষণ 'ভারত সব নিয়ে নিল' বলে চিৎকার-চেঁচামেচির কিছু নেই।
আমরা বার্মার মতো রুদ্ধ রাষ্ট্র হতে চাই না।
বলা হয়ে থাকে, একটি দেশের লেখকরা সেই দেশের আত্দা। এটা অনেক বড় কথা, আমি নিজেতা মনে করি না। অনেক দুষ্ট লেখক আছেন, দেশের আত্দা হবার তাঁদের যোগ্যতা নেই। দেশের সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি_বন্ধুত্বেরযে পথে আমরা এগুচ্ছি সেটাই শুদ্ধ পথ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। কেউ যেন আবার ভেবে না বসেন আওয়ামী লীগের কাছে আমার কোনো দায়বদ্ধতা আছে। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা নেই। আমি দায়বদ্ধ আমার দেশের কাছে। "
রিসেন্ট দেখছি ব্লগে কিছু ধার্মিক বা ছাগু টাইপের ব্লগাররা হুমায়ুনকে ডিফেন্ড করার জন্য কোমর বাইন্ধা নামছে,এই লেখাটা পড়ার পর তাদের প্রতিক্রিয়া আশা করছি
হুমায়ুনের লেখাটার লিংকঃ Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।