এটা আমার একটি ব্লগের সার সংক্ষেপ পোস্ট। সংক্ষেপে আমি এই জন্য আবার লিখলাম যে অনেক ভাইয়ের বড় পোস্ট পড়ার ধৈর্য নেই।
► শুরু কথাঃ
আমি যা লিখেছি, কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখেছি। আপনি যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন। আপনি সঠিক হলে আমি মেনে নিব।
যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে একটা কথা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশে তর্ক করা মানে আপনি কোরআন-হাদিসের অমান্য করছেন।
আর কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবলীগদের সূফীবাদের ভুলভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা ভুল প্রমান করার পরেও যদি আপনি "ফাজায়েল আমলের" কথাই মেনে নেন, তাহলে আমার কিছু বলা নেই।
► মুল কথাঃ
ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
“আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর। সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল।
আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব”।
এখানে লক্ষণীয়-
১. ফকির আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর জেনে সে তার মৃত্যুর জায়গা নিজে নিজেই ঠিক করল।
২. সে মারা যাওয়ার পরেও একজন জীবিত মানুষ তাকে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করল ও সে শুনল।
৩. কথা শুনার পর সে তার উত্তরও দিল।
এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে-
১. আল্লাহ বলেন,
“... কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে। ” (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
এই আয়াতের ব্যখায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা। ” (সহিহ বুখারি)
কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা সে কোথায় মারা যাবে। আর তাবলীগরা শিক্ষা দেয় ফকির বুজুর্গরা জানতে পারে তারা কোথায় মারা যাবে !!!
২. আল্লাহ বলেন,
“মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না”।
(সূরা নামলঃ ৮০)
তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল?
৩. আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না”।
(সুরা আল ফাতিরঃ ২২)
অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান।
হাদিসে আছে (প্রথম অংশ দেওয়া হল), “একদিন রাসুল (সঃ) ও একজন ইহুদী বসে ছিলেন। এমন সময় একটি জানাজা অতিক্রম করতে থাকলে সে জিজ্ঞাসা করে, “হে মুহম্মদ, এই লাশ কি কথা বলতে পারে?” রাসুল (সঃ) জবাব দেন, “এই বিষয়ে আল্লাহ অধিক অবগত। .। "
(আবু দাউদঃ ৩৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
শুধু একটি ঘটনা না, আরও অসংখ্য এমন আজগুবি অনেক কিচ্ছা রয়েছে তাবলীগি ভাইদের একমাত্র পঠিত বইগুলোতে।
এখন দেখতে পাচ্ছি-
১. তাবলীগ ও তাদের আমলের বই এক কথা বলছে।
২. কোরআন হাদিস তার ভিন্ন আর এক কথা বলছে।
যেহেতু দুটো বিপরীত কথা, তাহলে এখানে যেকেউ একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। যেহেতু, কোরআন ও রাসুল (সঃ) কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা, সেহেতু যে গল্পটি বলেছে সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর যে বইয়ে মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তৈরি আজগুবি গল্প, কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ভরা সে বই অনুযায়ী আমল করতেই কি রাসুল (সঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? বরং রাসুল বলেছেন,
“নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”।
(আবু দাউদঃ ৩৬২৪)
► তাবলীগ সম্পর্কে কিছু তথ্য যার ব্যখা তাবলীগদের নিজেদেরও জানা নেইঃ
১. তাবলীগরা "মুরুব্বি" শব্দটা বহুল ব্যবহৃত। তাবলীগের মুরুব্বিকে ইংরেজিতে এরা Elder বলে। আপনি কি জানেন এই মুরুব্বি বা Elder শুধু দুদল বেশি মান্য করে? ইহুদী ও তাবলীগরা। ১৯০৫ সালে ইহুদীদের "The protocol of the learned elders of Jews" বা "জ্ঞানী ইহুদী মুরুব্বিদের প্রোটোকল" নামে একটি গোপন নথি আবিস্কার হয়। আর তাবলীগ মুরুব্বিদের আবির্ভাব হয় ১৯২৬ সালে।
২. তাবলীগের মুরুব্বিরা কোরআনকে শুধু আরবিতে পড়ে অনেক ফায়দা হাসিলের কথা বললেও তারা সাধারন মানুষকে অর্থ ও তাফসীরসহ কুরআন বুঝার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে মুফতি, আলেম না হলে বা ১৫টি ভাষায় জ্ঞান না থাকলে কুরআন বুঝা উচিত না। অথচ আল্লাহ বলেছেন,
--> “আমি বুঝার জন্য কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কেউ কি বুঝতে চায়"? (সূরা কামার)
৩. ফাযায়েল আমল ও সাদাকাত বইয়ে কোন হাদিসেরই সঠিক উৎস দেওয়া নেই। এই কৌশলের কারনে এখানে দুর্বল, জাল ও বানোয়াট সব হাদিস একসাথে করা গেছে খুব সহজেই।
তাবলীগের মুরুব্বিরা ইসলামের আরেকটি ভিত্তি সহিহ হাদিসগ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ইত্যাদি তারা অধ্যয়ন করেনা ও করতে উৎসাহ দেয়না। কারন তারা ভয় পায়, মানুষ কোরআন বুঝে পড়লে কোরআন ও হাদিস বিরোধী তাদের ফাজায়েল আমল বই কেউ আর পড়বেনা।
৪. তাদের সিলেবাসে লক্ষ্য করে দেখবেন যে জিহাদ সম্পর্কে কোন বই নেই। ফাজায়েল সব সিরিজ থাকলেও কেন "ফাজায়েল জিহাদ" নেই? তারা সুকৌশলে মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রেখে পরকাল ও দোআ-জিকির নির্ভর ইসলাম প্রচার করতে ব্যস্ত।
৫. পৃথিবীর অনেক ভাষায় “ফাযায়েল আমল” বইটি অনুবাদ হলেও আরবি ভাষায় এটার অনুবাদ করা হয়নি এবং আপনি অনেক আরব তাবলীগ দেখলেও সৌদি আরবে তাবলীগ নিষিদ্ধ।
তারা তো সরকার বা বাদশার বিরুদ্ধে কোন কথা বা আন্দোলন করেনা, তাহলে কেন তাদের নিষিদ্ধ করা হল? কারন সকল বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার একমত তাদের আকিদা ভিন্ন।
৬. ভণ্ডনবী গোলাম আহমেদের তৈরি কাদিয়ানীদের যখন অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সকল ইসলামী দল একসাথে ১৯৭৪ সালে “খতমে নবী” আন্দোলন করছিল, তখন একমাত্র এই তাবলীগ জামায়াতই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আন্দোলনে যেতে অস্বীকার করে। অন্যান্য অন্যায়ের প্রতিবাদ, আন্দোলন দূরে থাক, ভণ্ডনবীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করাও নাকি ফেতনা, ফ্যাসাদ !!!
৭. এমন কোন বিধর্মী দেশ নেই, যেখানে তাবলীগরা তাদের দাওয়াতি কাজ করতে পারেনা। এমনকি ইসরাইলেও তাবলীগরা বাধাহীন ভাবে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, যেখানে অন্যান্য মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ !!!
৮. ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে, তারা বলে তাদের এখনো পর্যাপ্ত জনবল হয়নি। অথচ টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় তাদের যে সংখ্যক লোক সমাবেত হয়, তারা সবাই যদি একযোগে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীতে বা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ঢাকার দিকে মার্চ শুরু করে, কোন সরকারের ক্ষমতা নাই এত সংখ্যক মানুষকে আটকানোর।
এসব কথার কি ব্যখা কোন তাবলীগ ভাই দিবেন? না, তাদের নিজেদের কাছেও এসবের কোন ব্যখা নেই।
► যদি ইসলাম বিষয়ে একটা বইয়ে একটাই কোরআন এর বিপরীত বানোয়াট ও নতুন কিছু থাকে, তাহলে মুসলমানদের জন্য সেই একটাই কারন যথেষ্ট সেই বইকে আর অনুসরন না করা।
দেখা যাবে অনেকে আবেগের বশে মুলবিষয় ভিন্ন দুনিয়ার আরও অন্যান্য কিছু নিয়ে এসে তর্ক শুরু করবে, অথচ তারা আমার এই মুল বিষয়ের কোন উত্তর দিবেনা। যারা তর্ক করতে চান, তারা অন্যান্য তর্ক বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস দিয়ে প্রমাণ করুন, ফাজায়েল আমলের গল্পটি সঠিক। শুধু এই গল্প না, হুবহু এরকম আরও দুইটা গল্প আছে ২৭০ পৃষ্ঠায়।
। একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামের পক্ষ থেকে তাবলীগদের কাছে এটা চ্যালেঞ্জ করা হল।
► বিস্তারিত- আমার আগের পোস্ট Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।