জামাল যেদিন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদিন থেকে তার আচরণে বেশ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সে এখন যেকোন বয়স্ক লোক দেখলেই মোটর সাইকেল দাঁড় করিয়ে সালাম দেয়, ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে, কোন সমস্যার কথা শুনলে সমাধানের আশ্বাস দেয়, কারো অসুখ-বিসুখের কথা শুনলে সহানুভূতি দেখায়, গরীব-দুঃখী মানুষকে দান-খয়রাত করে। জামালের হঠাৎ এমন পরিবর্তন অনেকের কাছে আশ্চর্যজনক বলে মনে হলো। অনেক চেনা লোকেরাও যেন জামালকে চিনতে ভুল করে, তুমি কে বাবা?
জামাল উত্তর দেয়, আমাকে চিনলেন না চাচা আমি জামাল।
ওহ এবার চিনেছি তুমি জহিরের ছেলে জামাল?
ইদানিং জামালের কাছে কোন দরিদ্র মানুষ সাহায্যের জন্য হাত পাতলেই সে বিমুখ করে না।
বরং যেখানে দু/এক টাকা ভিক্ষা দেওয়ার কথা সেখানে হঠাৎ করে দশ টাকার নোট চাঁদা দিয়ে থাকে আবার যাকে দশ টাকা চাঁদা দিলেই যথেষ্ট তাকে এক'শ টাকার নোট বের করে দেয়, এখন তার মন যেন সাগরের মতো উদার, আকাশের মতো বিশাল।
সেদিন সন্ধ্যায় জামাল তার অফিসে ছিল। হঠাৎ তার কানে এলো এক বৃদ্ধার গলার স্বর, বাবা আমার মেয়ের বিয়ে কিছু সাহায্য দাও বাবা।
গেটে বসা পিয়ন জাকির খুব বিশ্বস্ত এবং অনুগত। সে প্রথমে বলল, ভিতরে ভাইজান আছে যাওয়া যাবে না।
আবার বৃদ্ধার কন্ঠস্বর ভেসে এলো, তোমার ভাইজানের সঙ্গে একবার দেখা করবো বাবা।
জাকির বলল, ভাইজান খুব ব্যস্ত, এখন দেখা করা যাবে না।
আমাকে একবার দেখা করতে দাও বাবা, তোমার ভাইজান খুব টাকাওয়ালা মানুষ, আমার মনে হয় আমাকে ফেরাতে পারবে না।
জাকির কর্কশ স্বরে বলল, টাকাওয়ালা মানুষ তাই দু’হাতে টাকা বিলিয়ে দিবে, না?
তুমি আমাকে একবার দেখা করতে দাও বাবা।
জাকির আরো জোরে বলল, বললাম তো ভাইজানের পারমিশন নেই।
জামাল কলিং বেল এ টিপ দিতেই জাকির ভিতরে ঢুকল, ভাইজান।
জামাল জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে জাকির?
ভাইজান একটা বুড়ি এসেছে মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য চায়।
জামাল জোরে ধমক দিয়ে বলল, চুপ বেয়াদব, বুড়ি বলবি না। চাচী বলবি। যা পাঠিয়ে দে।
জাকির কয়েক সেকেণ্ড জামালের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে মনে মনে বলল, ভাইজান তো আগে গরীব-দুঃখী মানুষ দেখলেই নাক ছিটকাতেন হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন?
জামাল আবার ধমক দিল, হ্যাঁ করে দেখছ কী?
জাকির চম্কে উঠল, জি ভাইজান যাচিছ।
কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে এক বৃদ্ধা জামালের চেম্বারে ঢুকে সালাম দিল, জামাল সালামের জবাব দিয়ে বলল, কী খবর চাচী বলুন?
আমার মেয়ের বিয়ে বাবা, তাই সাহায্যের জন্য এসেছিলাম।
আপনার বাসা কোথায় চাচী?
এই মহল্লায় বাবা।
জামাল জিজ্ঞেস করল, আমাকে চিনতে পেরেছেন?
বৃদ্ধা জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, না তো বাবা।
আমার নাম জামাল, আমার বাবার নাম জহির।
তুমি জহিরের ছেলে? অনেক বড় হয়েছ বাবা, তোমাকে ছোটবেলা কত কোলে-পিঠে নিয়েছি। এখন গরীব হয়ে গেছি তাই আর তোমাদের বাসায় যাওয়া যায় না।
আসবেন চাচী আমি ধনী-গরীব তফাৎ করি না, আসলে আমরা সবাই মানুষ। বলুন চাচী এখন আপনার মেয়ের বিয়ের কথা বলুন।
আমার মেয়ের বিয়েতে কিছু সাহায্যের জন্য তোমার কাছে এসেছি বাবা।
যৌতুক কত দিতে হচ্ছে?
বৃদ্ধা জামালের কথা বুঝতে না পেরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
জামাল একটু জোরে বলল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ডিমাণ্ড কত?
না বাবা ডিমেণ্ড না, চেয়ারম্যান সাহেব বলে দিয়েছেন এই পৌরসভায় কেউ ডিমেণ্ড দিতেও পারবে না, নিতেও পারবে না। আমার মেয়ের বিয়েও এই পৌরসভারই একটা ছেলের সঙ্গে তাই বিয়ের কোন ডিমেণ্ডের কথা হয়নি, শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ হলেই চলবে।
জামাল বৃদ্ধার দিকে নিরীক্ষার ভঙ্গীতে তাকিয়ে বলল, তা কত খরচ হবে?
কী জানি বাবা? তোমার চাচা অসুস্থ মানুষ সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকে সেই আমার এক দূর সম্পর্কীয় ভাগিনাকে নিয়ে হিসেবে করে বলল, তিন হাজার টাকা খরচ হবে।
আপনি কত টাকা যোগাড় করেছেন?
বারো’শ।
চেয়ারম্যান সাহেব টাকা দিয়েছেন?
জি।
কত?
পাঁচ’শ।
আচ্ছা চাচী আমি আপনার মেয়ের বিয়েতে এক হাজার টাকা দিব, আগামীকাল আপনার বাসায় গিয়ে দিয়ে আসবো।
দোয়া করি বাবা, আল্লাহ তোমাকে অনেক বড় করবে, বলে বৃদ্ধা চলে গেল।
জামাল আরো কিছুক্ষণ থাকল তারপর তার চেম্বার থেকে বের হলো।
তার চেম্বারের অদূরে ক্লাব, জামাল ক্লাবে ঢুকল। তাকে দেখে কয়েকজন উঠতি বয়সের তরুণ উঠে দাঁড়ালো।
জামাল বলল, বসো, তোমরা সবাই বসো।
সবাই বসল একজন জিজ্ঞেসকরল, ভাইজান হঠাৎ কী মন করে?
না এমনি এলাম, পাশেই থাকি অথচ তোমাদের এখানে আসতে পারি না। আসলে তোমাদের সবার সঙ্গে আমার খুব একটা পরিচয় নেই, বলে জামাল তার পাশে বসা একজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আগে নিজের পরিচয় দিল, আমি জামাল।
তারপর একে একে সবাই জামালের সঙ্গে হ্যান্ডশ্যাক করে তাদের পরিচয় দিল।
জামাল জিজ্ঞেস করল, কী কী আছে তোমাদের ক্লাবে?
শাহিন নামে একটা চট্পটে ছেলে বলল, অল্প কিছু বই আছে, কেরাম বোর্ড, দাবা এই আর কি।
টি.ভি নেই?
সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। এখন একটা-বলে শাহিন অন্যান্যদের মুখের দিকে তাকালো।
জামার অভয় দিল, বলো, বলো?
একটা ছেলে ফিস্ ফিস্ কের শাহিনের কানে কি যেন বলল, শাহিন মৃদু হেসে বলল্,তুই বল্।
জামাল শাহিনেক জিজ্ঞেস করল, কী হলো শহিন? বলো।
ভাইয়া আসেল আমাদের ক্লাবে একটা টি.ভি খুব প্রয়োজন।
বেশ তো তোমরা যখন আশা করছ আমি অবশ্যই দিব।
কয়েকজন এক সঙ্গে বলল, সত্যি বলছেন ভাইয়া?
হ্যাঁ সত্যি বলছি, তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা তোমরা একসময় সব সদস্য মিলে আমার কাছে এসো আমি তোমাদের একটা কালার টি.ভি কিনে দিব। আর হ্যাঁ আসার আগে মোবাইল কের এসে কেমন? বলে জামাল একটা ভিজিটিং কার্ড বের কের শাহিনের হাতে দিল।
জি ভাই ঠিক আছে।
তোমরা বসো আমি আসি কেমন, বলে জামাল বের হলো।
ক্লাবে বসে সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। একজন শাহিনকে জিজ্ঞস করল, হঠাৎ করে জামাল ভাই এত দয়ালু হয়ে গেল?
অন্যজন বলল, নির্বাচন করবে নাকি?
শাহিন বিরক্তি সহকারে বলল, তোরা সবকিছু নেগেটিভ সেন্সে এ নিস্, সবকিছু বাঁকা দৃষ্টিতে দেখিস্। জামাল ভাই বরাবরই উদার, ধনী লোকের ছেলে এখন নিজেও অনেক টাকার মালিক তার কত ব্যবসা, পেট্রোল পাম্প, ধান-চাউলের ব্যবসা, ঠিকাদারী ব্যবসা কাজেই একটা কালার টি.ভি তাঁর কাছ কোন ব্যাপারই না।
আমি মনে করি তিনি যখন দিতে চেয়েছেন তখন আমাদের নিতে না চাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।
সকলেই সমস্বরে বলল, না না আমাদের দেরি করা ঠিক হবে না। আমরা কালকেই যাব।
শাহিন বলল, তাহলে এ কথাই থাকল আগামীকাল সবাই অবশ্যই সন্ধ্যায় সাতটার মধ্যে চলে এসো।
চলবে..
গডফাদার-০১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।