হরিষে বিষাদ কক্সবাজারের উখিয়ার সংরতি বনাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত হতে চলছে। আশির দশকের কক্সবাজার জেলার সর্ববৃহত্তম অভয়ারণ্য হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বনাঞ্চলে সংঘবদ্ধ বনদস্যুদের ধারাবাহিক বন সম্পদ লুটপাট ও পাচার বাণিজ্যের ফলে উখিয়া ও ইনানী বনরেঞ্জের প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর বনভূমি উজাড় হতে চলেছে। বর্তমানে সরকারী বনভূমির দখল বিক্রি অব্যাহত থাকলেও দেখার কেউ নেই। এভাবে বন নিধনযজ্ঞ ও পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মান চলতে থাকলে আগামীতে বনায়ান সৃজনের মতো আর কোন পরিবেশ থাকবে না বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল।
উখিয়া বনরেঞ্জের আওতাধীন সদর বিটের তিন হাজার হেক্টর বনভূমি পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
ইতিপূর্বে বন বিভাগের লোকজন তাদের ঘরবাড়ী কয়েকবার ভেঙ্গে দিয়েছে। বর্তমানে তারা সংশ্লিষ্ঠ বিট কর্মকর্তা ম্যানেজ করে পুনরায় ঘরবাড়ী মজুদ করে বেধেছেন। এভাবে শিলের ছড়া, মুহুরীপাড়া, ফলিয়া পাড়া, মধুর ছড়া, কুতুপালং বাগানের পাহাড়, টিএন্ডটি, হাঙ্গরঘোনা, আমতলী, দরগাবিল, হাতিমোরা, লম্বাঘোনা, এলাকা জুড়ে তিন হাজার ৩০ হেক্টর বনভুমির দখল হয়েছে।
এছাড়া, বিগত ২০০৪ ও ২০০৫ সালে তিন শতাধিক হেক্টর বনভুমির সামাজিক বনায়নের আওতায় এনে সুফলভোগীদের মধ্যে দলিল হস্তান্তর করা হলেও বাকী দুই হাজার সাতশত হেক্টর বনভুমি বেহাত হয়ে গেছে। তম্মধ্যে ২০০৯-১০অর্থ বছরে ১২০ হেক্টর বনভূমি সামাজিক বনায়নের আওতায় আনার জন্য সুফলভোগীর তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও মতাসীন দলের কিছু নেতার অবৈধ হস্তেেপর কারনে দলিল হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বর্তমানে ঐসব বনভুমিতে শতশত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে ।
এদিকে, থাইংখালী বিটের ৫৪৭৫ হেক্টর বনভুমিতে বিট কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহজাহানকে ম্যানেজ করে বর্তমানে তিনটি অবৈধ সমিল স্থাপন করে দিনরাত চোরাই কাঠ সাইজ, পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন সহ শতশত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠার ফলে উক্ত বনভূমি বেদখলে চলে গেছে।
২০০৯-১০ অর্থ বছরে উক্ত বনভুমির আওতায় শতাধিক হেক্টর বনভুমি সামাজিক বনায়নের সুফলভোগীদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও অজ্ঞাতকারণ বসত তা স্থগিত হয়ে যায়। দুছড়ি বিটের ২৪৭৭ হেক্টর বনভূমির সম্পূর্ণ এখন বেদখলে চলে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উপকূলের জমি জমার দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বসত ভিটা ছড়া দামে বিক্রি করে দুছড়ি বনাঞ্চলের জায়গায় অবৈধ বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে।
স্থানীয় বন বিভাগের ভিলেজার হ্যাডম্যান নামধারী দালাল চক্র মোটা অংকের টাকা নিয়ে বনভুমি দখল হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে।
দুছড়ি বন বিটের প্রায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এভাবে উয়ালা বিটের ১১৬৬ হেক্টর, উখিয়ার ঘাট বিটের ২৩০১ হেক্টর, ভালূকিয়া বিটের ১৫৮০ হেক্টর, হলদিয়া বিটের ৯০১২ হেক্টর, মোছারখোলা বিটের ২৩০৫ হেক্টরসহ ২১৪০৫ হেক্টর বনভূমি বিরানভূমিতে পরিনত হতে চলছে।
অন্যদিকে ইনানী বন রেঞ্জের আওতাধীন ২০ সহস্রাধিক হেক্টর বনভুমির মধ্যে ১০ হাজার বনভুমির মধ্যে অরন্যক ফাউন্ডেশন, শেড ও বন বিভাগ যৌথ উদ্যোগে জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নে পরিকল্পনা হাতে নিলেও তা শুধু কাগজ কলম ও সভা সমাবেশ সেমিনারে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
চলমান সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখানেই যেভাবে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে, তাতে আগামীতে বিশ্ব ব্যাংক সামাজিক বনায়ন খাতে আর কোন বরাদ্দ রাখবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ উপজেলার যে সমস্ত বনসম্পদ রয়েছে তা বনবিভাগের জনবল সঙ্কট এবং সরকারী কর্মকর্তা,কর্মচারীদের অন্তরিকতার অভাবের কারনে দিন দিন হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের অনুরোধ করব, বেহাত হয়ে যাওয়া বন সম্পদ গুলো উদ্ধার পূর্বক বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।