ফজলুল বারী। ।
সর্বশেষ দেশে শনাক্তকৃত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে। সেনা তদন্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষ তাদের অধিকতর তদন্তে তথ্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন। এসব তথ্য বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পিছনে একদল বিপদগামী সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে জড়িত ছিল নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত একাধিক পলাতক খুনি এবং তাদের পরিবারের কিছু সদস্য ও জামায়াত, ইসলামী ছাত্র শিবিরের মাঠ পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী।
পলাতক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের সঙ্গে এরমাঝে হিযবুত তাহরীরের সংশ্রব জানা গেছে। অভ্যুত্থান সংগঠন প্রপাগান্ডার একটি পর্যায়ে বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও এক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগে ব্যবহার করা আইডি’টি সম্পর্কে সূত্রটি নিশ্চিত হতে পারেনি। সূত্র থেকে পাওয়া কিছু ওয়েবসাইট-অনলাইন লিঙ্কও এখন আর বহাল-সক্রিয় নেই। কিছু কিছু ওয়েবলিঙ্ক এরমাঝে হাইড অথবা নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়েছে। সূত্রমতে অভ্যুত্থানের খবর দিতে সেনাবাহিনী যেদিন সংবাদ সম্মেলন করে সেদিনও কুমিল্লা সেনানিবাসে সমস্যা, ১১ জানুয়ারি গোলাগুলিও হয়েছে।
কিন্তু সে খবরটি মিডিয়ায় আসেনি।
সূত্রটি বলেছে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীরা মাস তিনেক আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। Click This Link শিরোনামের ফেসবুক গ্রুপের ওয়েবলিঙ্ক দিয়ে তা দেখতে বলে। টুটল হায়দার নামের গ্রুপের এক সদস্য তার প্রকৃত ফেসবুক একাউন্টের ই-মেইল ঠিকানা তাকে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাকে তার প্রকৃত আইডি না দিয়ে একাধিক ফেক আইডি’র একটির ই-মেইল ঠিকানা দেন।
এরপর তাকে তার কিছু ছবি দিতে বলা হয়। এর সাড়ায় তিনি তাকে কিছু ছবি দিয়েছেন ঠিক, কিন্তু সেগুলো তার নিজের ছবি নয়। এরপর তিনি সেই কথিত টুটুল হায়দারকে বলেন, তিনি তার(টুটুল হায়দারের) পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবেন না। এরপর টুটুল হায়দার তার প্রকৃত পরিচয় উল্লেখ করে নিজস্ব ব্লগের একটি ওয়েব লিঙ্ক দেন। সেটি হলো Click This Link. কিন্তু লিঙ্কটি হাতে আসার পর দেখেন, এ লোকটির নাম টুটুল হায়দার না।
কিন্তু এরপরও যোগাযোগ অব্যাহত রাখলে তার মতো কিছু ব্যক্তির ফেসবুক ঠিকানা দিতে অনুরোধ করা হয়। জবাবে সূত্রটি নিজের একাধিক ফেক ফেসবুক আইডি দেন। এরপর থেকে নিয়মিত অনলাইন চেটিং’এ সরকারের নানা স্বেচ্ছাচারিতা ত্রুটিসমূহ উল্লেখ করে এর অবসানে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছিল। এতে ভয় পেয়ে গিয়ে সূত্রটি এ ব্যাপারে আর তার সঙ্গে যোগাযোগে অনীহা প্রকাশ করে বলেন তিনি ডিজিএফআই’র ভয় পাচ্ছেন। সরকার বিরোধী একটিভিস্ট হিসাবে ডিজিএফআই তাকে ধরে হয়রানি করতে পারে।
এরপর ডিজিএফআই’র আলী কোম্পানি, লিও কোম্পানি’র(Ali company, Leo Company) নাম উল্লেখ করে তাকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, এ দুটি কোম্পানি তাদের সঙ্গে আছে। এরপর সূত্রকে তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে বলা হয়। তাতে অস্বীকৃতি জানালে বলা হয় তাদের সন্দেহ হচ্ছে সূত্রটি তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত। এরপর তার সে আইডি হ্যাক করে সেটিকে অকার্যকর করে দেয়া হয়। অকার্যকর করে দেয়া হয় তাদেরকে দেয়া তার অন্য ফেক আইডিগুলোও।
এতে সূত্রটির মনে হয় তাদের সঙ্গে বেশকিছু আইটি বিশেষজ্ঞও আছে, যারা একইসঙ্গে ভালো হ্যাকারও।
এরমাঝে যতদিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাতে সূত্রটির ধারনা হয়েছে এসব গ্রুপ সদস্যের পরিচালনায় ২০ টির বেশি ফেসবুক পেজ আছে। সোনার বাংলাদেশ ও সবুজ বাংলা ব্লগ দুটিও এদের সৃষ্ট এবং পরিচালিত। এসবের মাধ্যমে তারা মেধাবী তরুনদের টার্গেট, সংগ্রহ ও তাদের মগজ ধোলাই-ঝালাই করে। এদের মধ্যে যাদেরকে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত মনে করে তাদেরকে 18:21 জাতীয় গ্রুপে অঙ্গিভূত করে নেয়(18:21), এদের গোপন গ্রুপগুলোর একটির নাম)।
এই গ্রুপগুলো আকারে ছোট ছোট। এসব গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে ম্যান টু ম্যান সরাসরি যোগযোগ হয়। সূত্রটি বলেছে, তিনি তখনও নিশ্চিত ছিলেন না, এদের আসলে মূল লক্ষ্যটা কী? বা অভ্যুত্থান সংগঠন-সংঘটনের মতো সামর্থ্য তাদের আছে কিনা। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার খবর প্রকাশের পর তার কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়েছে। এসব গ্রুপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের http://www.majordalimbubangla.com/Jiboni.html ‘র মতো লিঙ্ক তাদের সদস্যদের উদ্ধুদ্ধকরণে ব্যবহার করেছে।
তারা ধারনা দিয়ে বলেছে Abu Zafar mahmood(https://www.facebook.com/azm100) and Mohammed Majumder (https://www.facebook.com/mohammed.mujumder) ‘র মতো কিছু স্থায়ী ডোনার তাদের আছে। প্রয়াত সাবেক বিএনপি নেতা মশিউর রহমান জাদু মিয়ার মেয়ে Click This Link ‘এই আইডি নিয়ে গ্রুপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। জাদু মিয়ার মেয়ের জামাই খায়রুজ্জামান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের অন্যতম। সর্বশেষ বিএনপি আমলে মালয়েশিয়ায় কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন খায়রুজ্জামান। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে ডেকে পাঠালে তিনি দেশে না ফিরে আত্মগোপন করেন।
সূত্রটির মতে এর আগে গত বছরের মার্চের শেষের দিকে বগুড়া সেনানিবাসে আরেকটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেপথ্যের হোতাদের মধ্যে মেজর গিয়াসের নাম জানা গিয়েছিল। সর্বশেষ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের অন্যতম দুই ফিল্ড কোর্ডিনেটর শাহজাহান চৌধুরী ও রেজাউল করিম তালুকদার জামায়াত নেতা। এরা পলাতক খায়রুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক খুনি মেজর রশীদের মেয়ে ফারিয়া শবনম, কানিজ ফাতেমা সহ(দেবীদ্বার, কুমিল্লা) বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৬৮ লংকোর্সের ক্যাডেটদের কতিপয় সদস্য অভ্যুত্থানের পক্ষে ফেসবুক প্রপাগান্ডায় জড়িত ছিল।
অভ্যুত্থান সংঘটনের চেষ্টায় গত ১১ ডিসেম্বর কুমিল্লা সেনানিবাসে সংঘটিত বন্দুক যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মেজর জেনারেল কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সূত্রটি নিশ্চিত হয়েছে অভ্যুত্থান সংগঠকদের সঙ্গে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সংশ্রব ছিল। কিন্তু এ গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্তিতে তারেকের ব্যবহার করা আইডি’টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িতরা বিভিন্ন সময়ে পরষ্পরকে উদ্ধুদ্ধকরনে নিচের এসব ওয়েবলিঙ্ক, ফেসবুক গ্রুপ, আইডিও ব্যবহার করেছে--
Click This Link
https://www.facebook.com/mustafazuhair
http://deshcalling.blogspot.com
https://www.facebook.com/MBIMunshi?sk=info
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক
ফেসবুক থেকে নেয়া..............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।