নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক ইজতেমা আসলেই দেখা যায় কিছু সংখ্যক ভাইদের গায়ে জ্বলুনি শুরু হয় ,আর এই ব্লগে এ কাজে সবার আগ্রগামী আবদুল্লাহ আরিফ মুসলিম ও তার সহযোগী কািন্ট টুটুল । আমি কাউকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না। কিন্তু উনারা যা শুরু করেছেন। তাতে বাধ্য হয়েই কিছু পোস্ট দিয়েছি এবং আজ দিলাম।
কািন্ট টুটুল সাহেব কালকের একটা পোস্ট দিয়েছেন,সেখানে ফাযায়েলে হজ্ব বই থেকে একটা পৃষ্ঠা উল্লেখ করলেন ,নিচে সেই পৃষ্ঠাটা দেখুনঃ
উনি এটা উল্লেখ করে বুঝাতে চাইলেন তাবলীগের আলেমরা কি ভুলটাই না করলেন,মানে বুঝাতে চাইলেন ফেরেশতারা মানুষের বেশে আসা সম্ভব না, আর অনেকেই এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তা সাপোর্ট করেলেন।
কিন্তু আসলেই কি ফেরশতাদের দুনিয়াতে মানুষের বেশে আসা অসম্ভব ,আসুন দেখি কোরআন কি বলেঃ
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَىٰ قَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ ۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ [١١:٦٩]
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!
فَلَمَّا رَأَىٰ أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۚ قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمِ لُوطٍ [١١:٧٠]
কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
(সূরা হুদঃ ৬৯-৭০)
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا [١٩:١٦]
এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا [١٩:١٧]
অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।
(সূরা মারয়ামঃ ১৬-১৭)
إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَاثَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُنزَلِينَ [٣:١٢٤]
আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।
بَلَىٰ ۚ إِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ [٣:١٢٥]
অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা এক বিশেষ বেশধারী পাচ সহস্র ফেরেশতাকে তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।
(সূরা আলে-ইমরানঃ ১২৪-১২৫)
وَلَمَّا جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالَ هَٰذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ [١١:٧٧]
আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূত (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হল।
তখন তাঁদের আগমনে তিনি দুচিন্তাগ্রস্ত হলেন (যেহেতু তারা সুদর্শন বালকের আকৃতিতে এসেছিলেন)এবং তিনি বলতে লাগলেন, আজ অত্যন্ত কঠিন দিন।
(সূরা হুদঃ ৭৭)
কোরআনের রেফারেন্স দেওয়ার পরে উনি বললেন উনি কি তা অস্বীকার করেন না। কিন্তু নবিজী(সা) এর পর ফেরেশতারা আসতে পারে এ ধারণা নাকি ভুয়া।
উনাকে আমার প্রশ্ন ছিল এমন কোন আয়াত কিংবা হাদিস কি আছে যেখানে উনার কথার পক্ষে রেফারেন্স আছে?যেখানে বনী ইসরাইলের সাধারণ লোকদের কাছেও আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতা পাঠিয়েছেন,সেখানে উম্মাতে মোহাম্মাদীর কাছে কেন ফেরেশতা আসতে পারে না??
উনি রেফারেন্স না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করলেন আউলিয়া কিরামের কাছে ফেরশতা আসতে পারে তা উনি বিশ্বাস করেন না কারণ তিনি এমন কোন ঘটনা জানেন না যে, সাহাবায়ে কেরামের কাছে কোন ফেরশতা এসেছিলেন কিনা, এবং দেখেছিলেন কিনা? আমাকেন বললেন ,পারলে একটা উদাহরণ দিন।
তাই কিছু রেফারেন্স দিলাম -
কানযুল উম্মাল এবং ইবনে আবি শাইবার এক রেওয়াতে আছে, হাসান (রা) এক খুৎবায় বলেছিলেন, হযরত আলী(রা) এর সাথে যুদ্ধের সময় ডান পাশে জিবরীল এবং বাম পাশে মিকাঈল(আ) থাকতেন এবং তিনি যুদ্ধে জয় লাভ করতেন।
(কানযুল উম্মালঃ ৬\৪১২)
এছাড়া তাহযীবুত্তাহযীব ,ওয়াকেদীর মাগাযী তে উল্লেখ আছে যে, সা'দের(রা) জানাযা ফেরেশতারা বহন করছিল,তাই তার জানাযা হালকা মনে হচ্ছিল। (তাহযীবুত্তাহযীবঃ ৩\৪৮১)
এছাড়া বুখারী শরীফে হযরত খোবায়েবের বন্দী জীবনের সময় যে তার কাছে ফেরেশতারা বিভিন্ন মৌসুমী ফল নিয়ে আসতেন, যা দেখে কাফেররা বিস্মিত হত তা উল্লেখ আছে। (বুখারীঃ২\৫৮৫)
আর মেশকাত শরীফের এক হাদিসে, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস(রা) বলেছেন যে উনি ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ(সা) এর পাশে শ্বেতবশ্ত্রধারী দুজন যোদ্ধাকে দেখেছেন,যারা হলো জিবরীল ও মিকাইল। (মেশকাতঃ ২\৫৩১)
আর হানাযালা(রা) কে যে ফেরেশতারা শাহাদাতের পর গোসল দিয়েছিল,তা তো প্রায় সবার জানার কথা,আর সাহাবারা তার চুল থেকে পানির ফোটা পড়্রতে দেখেছেন। (ওয়াকেদীঃ কিতাবুল মাগাযী, হাকিমঃ ১\২০৪, তাবাকাতে ইবনে সাদ)
মেশকাত শরীফে বুখারী,মুস্লিমের সূত্রে আরেক হাদিসে উল্লেখ আছে যে, উছায়দ বিন হোযায়র (রা) একবার সূরা বাকারা তিলাওয়াত করার সময় তার নিকট ফেরেসতারা অবতীর্ণ হচ্ছিল উনি যদি ভয় না পেয়ে সকাল পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে থাকতেন তাহলে ফেরেস্তাদের দেখতে পেতেন।
(মেশকাতঃ ১\২৮৪)
বুখারী এবং মুসলিমের আরেক হাদিসে উল্লেখ আছে যে, উসামা(রা), রাসূলুল্লাহ(সা) এর সাথে জিবরীল (আঃ ) কে দেখেছেন।
মুসলিম শরীফের আরেক হাদিসে আছে যে, ইমরান বিন হাছিম(রা) বলেছেন, ফেরেশ্তারা তাঁকে ছালাম করতেন। কিন্তু অর্শ রোগের চিকিৎসা করার পর ফেরেশতারা সালাম বন্ধ করে দেয়। আবার চিকিৎসা বন্ধ করলে ফেরেশতারা সালাম দেওয়া শুরু করে।
তিরমিযির আরেক রেওয়াতে আছে যে, মানুষ ইমরানের ঘর থেকে সালামের শব্দ শুনতে পেতেন।
নাসীমুর রিয়ায গ্রন্থে নির্ভরযোগ্য বরতযোগে বর্ণিত আছে যে, ইমরান(রা) এর সাথে ফ্রেশতারা মুছাফাহা করতেন।
এছাড়া বদর যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরাম যে ফেরেশতাদের দেখেছেন তা কোন হাদিস কিংবা তারিখের কিতাবে একটু খেয়াল করলেই পাওয়া যাবে।
এখন আপনারা কোরাআন হাদিস থেকে কি প্রমাণ হয় না ফেরেশতাদের মানুষের রূপে হাজির হওয়ার স্বপক্ষে।
আমি আমার এই পোস্টে দেখানোর চেষ্টা করেছি যে, আওলিয়া কিরামের কারমাত সত্য। কিন্তু তা বিশ্বাস করা আর না বিশ্বাস করা আপনার ব্যাপার।
সজীব আকিবের মত নাস্তিকেরা যখন টুটুল সাহেবের পোস্টে ফেরেশতাদের ব্যাঙ্গ করে পেরেশতা এবং ফেরেশতাদের যারা বিশ্বাস করে তাদের উন্মাদ বলে, ঠিক তেমনি টুটুল সাহেবরাও আউলিয়ায় কিরামের কোন কারামত শুনলে সেটাকে গাঁজাখুরি গল্প বলে উপহাস করে। কিন্তু কোরআন হাদিস কি তাকে এ অধিকার দিয়েছে? তিনি আউলিয়ায়া কেরামের কোন কারামতের কথা শুনলে তা অবিশ্বাস করতে পারেন তাতে ঈমানের কোন ক্ষতি নেই,এটা তার নিজের ব্যাপার,কিন্তু তাই বলে কেউ বিশ্বাস করলে সেটাকে গাঁজাখুরি গল্প বলার অধিকার তার নেই এবং সে যোগ্যতাও তার নেই।
তাই তাদের আবার বলব আপনারা যদি তাবলিগের বিরোধিতাকে নিজেদের জীবনের মটো মনে করেন তাহলে আর কিছু বলার নেই, কিন্তু বিরোধিতার আগে একটু ভেবে নেওয়া উচিৎ তাদের দু একজনের বিরোধিতায় এই হক কাজের কোন ক্ষতি হবে না। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।