আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিলিম নদীপথে কিলিম জিওফরেষ্ট পার্ক

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ লংকাউই দ্বীপে আমাদের প্রথম দিনে সকাল ৯ টার সময় ড্রাইভার মুসা হাজির । মুসার বাড়ী লংকাউইতে, মালয়ী, ইংরেজী বোঝে কম ইশারা বুঝে ।

আট ঘন্টার জন্য তার গাড়ী বুক করলাম, ৩০ রিংগিত ঘন্টা এটাও টয়োটা এভেঞ্জা সাত সিটের গাড়ী । মুসার দায়িত্ব সে আমাদেরকে লংকাউইর চারপাশে ঘুরিয়ে দেখাবে এবং যত বেশি সম্ভব জায়গায় নিয়ে যাবে । একদিনে সব আকর্ষনীয় জিনিষ দেখা সম্ভব নয় । তাই তার পরিকল্পনা হলো, প্রথম দিন গাড়ীতে আট ঘন্টা ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, রাইড চড়া ইত্যাদি । দ্বিতীয় দিন আইল্যান্ড হপিং, অর্থ্যাৎ স্প্রিড বোটে চড়ে ৩টা দ্বীপে ঘুরে আসা।

এই প্যাকেজ চার ঘন্টার । স্প্রীড বোটের ভাড়া ৩৫০ রিংগিত । ৮/১০ জন হলে সবচেয়ে ভাল আর নিজেরা নিলেও একই টাকা । প্রথম দিন একটার দিকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কিলিম জিওফরেষ্ট পার্কে জন্য নিয়ে এলো । ঢুকতেই এলাকা জুড়ে খাবারের দোকান ।

সুভেনির বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে, সামনে কাউন্টার । নীচে জেটিতে স্প্রীডবোট বাঁধা। এক থেকে চার ঘন্টার জন্য স্প্রীড বোট ভাড়া করা যায় । এক ঘন্টার জন্য ২৫০ রিংগিত ২ ঘন্টা ৩৫০ রিংগিত । প্রথমে যেতে ইচ্ছে করছিল না পরে কি মনে করে এক ঘন্টার টিকেট নিলাম ।

স্পীডবোটে আমরা দুই পরিবার ২ জন বাচ্চা । কিলিম নদী দিয়ে স্পীড বোট ছুটলো । এই এক ঘন্টার প্যাকেজে আছে, ব্যাট কেইভ বা বাদুরের গুহা ফিস র্ফাম, ঈগল ওয়াচিং এবং আন্দামান সাগর ভ্রমন, প্রথমে আমাদের নিয়ে গেল ফিসফার্মে নদীর বুকে বাসমান কুড়েঘর, এখানে বাঁশ, কাঠ ও জাল দিয়ে ছোট ছোট চৌবাচ্চা বানানো। নদীর পানিতেই এই ভাসমান মাছের ফার্ম, বিচিত্র সব প্রজাতির ছোট বড় মাছ । হাংগর ঈলমাছ দর্শকদের জন্য রাখা আছে ।

কাউকে খাবার দিয়ে, কোন মাছকে শদ্ব করে, ডেকে , দর্শকদের দেখানো হয় । বড় বড় শক্ত খোলসের সামুদ্রিক প্রাণী হাতে ধরে ছবি তোলা যায় । সবগুলি কৃড়ে ঘরে একই ব্যবস্থা । অনেক দর্শক একবারে যাতে এগুলো দেখতে পারে তাই একই ধ্রনের ৮/১০ টা এরকম র্ফাম আছে । একটু বৃষ্টি হচ্ছিল তারপরও খারাপ লাগেনি ।

নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। নদী বেশ গভীর তাই বোটের ড্রাইবার সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিল । ফিস র্ফাম থেকে বের হয়ে কিলিম নদী দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আন্দামান সাগরে পড়লাম । সাগর নদীর সংগম স্থলেও বেশ কিছু দ্বীপ মাথা তুলে দায়িয়ে আছে এবং তারপর কিছুদুরে খোলা দিগন্তে আন্দামান সাগর। আন্দামান সাগর থেকে নদীর দিকে দেখলে খাঁড়িমুখের পাহাড়ে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজীতে লিখা কিলিম জিওফরেষ্ট পার্ক লিখা দেখা যায় ।

এই পার্কের এলাকার চুনা পাথরের পাহাড়গুলো পানিতে মাথা ফুরে খাড়া ভাবে উঠে গেছে । কিছু কিছু পাহাড় গোলাকার , এগুলোকে সাগরের মাঝে দ্বীপের মত লাগে । পাহাড়ের মধ্যে মাঝে মাঝে অনেক ছোট বড় গুহা । খাড়া পাড় নীচে বিচ নেই । যে গুলোতে একটু জমি আছে সেখানে ম্যানগ্রোভের বন ।

পাতুরে পাহাড়ের গায়েও সবুজ ঝোপঝাড়, কিছু কিছু জায়গায় শুধু খাড়া পাথরের চাই ্ বিভিন্ন আকারের ছোট বড় এই সব লাইম ষ্টোনের পাহাড় এই জিওফরেষ্টের অন্যতম বৈশিষ্ট । এই এলাকাটা লংকাউই দ্বীপের পুর্বঞ্চলে । এই পার্কে ম্যানগ্রোভ বন ছাড়াও আরো নানা জাতের গাছ ও ফুল দেখা যায় । কি বিচিত্র প্রকৃতি, পাথরের গায়ে সবুজ, হলুদাভ ফল ও বৃক্ষ। আন্দামান সাগরের ঢেউ একটু উত্তাল ছিল বৃষ্টির কারনে ।

কিছুক্ষণ সাগরের ভ্রমন করা যেতো তবে দলে অন্যদের আগ্রহ না থাকাতে গাইড আমাদেরকে একটু ঘুরিয়ে ঈগল পাখি দেখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গেল । এই এলাকাটা ঈগল পাখির অভয়ারন্য । ঈগল পাখি, গুহা এসবই এই লংকাউই দ্বীপের উপকথার সাথে জড়িত । এখানে গারুদা নামের উপকথার পাখির আবাসের গল্প ও প্রচলিত । এই স্ত্রী শ্রেণীর বিশাল পাখির যে কোন জীবিত প্রাণীকে পাথর বানিয়ে দেবার ক্ষমতা ছিল ।

যদিও সে সব রুপ কথা । তবে পর্যটকদের জন্য এগুলো বেশ রং লাগিয়ে পরিবেশন করা হয় । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছির তাই ঈগলের ওড়াওড়ি বন্ধ । দু চারটা মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে । আবহাওয়া ভাল হলে তবে শত শত ঈগল দিনের অণ্যান্য সময় আকাশে উড়ে বেড়ায় ।

এই ঈগলগুলো আকারে অবশ্য ছোট । বোট থেকে মুরগীর মাংস ছড়িয়ে দিয়ে একটু দুরে সরে গেলে আশে পাশের গাছ থেকে ঈগল পাখি সেই মাংশ খেতে আসে এবং তখন ঈগলের দেখা মেলে । ঈগল দেখা শেষ করে কিলিম নদী দিয়ে ফিরতী পথে বাদুরের গুহার কাছে এলাম । জেটিতে বোট লাগিয়ে বোটম্যান আমাদের ভেতরে ঘুরে আসবে বলল । কাউন্টারে সার্চ লাইট, পাওয়া যায়, ১ থেকে ৫ রিংগিত ভাড়া ।

পাহাড়ের মাঝে বিশাল অন্ধকার গুহা । গুহার ছাদে বাদুর জুলে আছে । কিছুদুর গিয়ে গুহা সংকীর্ন হয়ে গেছে । প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে কিছুক্ষন যেতে হয় তারপর আবার বড় গুহা। গুহার মধ্যে পর্যটকদের জন্য হাটাপথ, ছবি তোলার জায়গা ইত্যাদি রয়েছে ।

গুহা দেখে বোটে ফিরে এরাম । প্রায় ৫০/৫৫ মিনিট লাগল সবকিছু দেখতে । আন্দামান সাগরে কিছুক্ষণ বেড়ালে একঘন্টা ভ্রমন হতো । ফিরে আসার পর সবাই এক বাক্যে বলল না দেখেলে মিস করতাম । তবে সূর্য়ের হাসি থাকলে আন্দামান সাগরে ভ্রমন একটু লম্বা হতো ও ঈগল পাখির ঝাাঁক দেখা যেতো ।

থাক তবুও মন্দ লাগেনি । ক্যামেরার মেমোরী কার্ড ফুল হয়ে যাওয়ায় শেষের কিছু ছবি তোলা হলো না । তবে বোটের চড়ার সময় আমাদের গ্র“প ছবি ২৫ রিংগিত দিয়ে কিনে নিলাম ফেরার পথে । পেশাদার ক্যামেরাম্যান এই সব ছবি দ্রুত ওয়াস করে ফ্রেমে ভরে বিক্রি করে । ভালই কেটে গেল কিলিম নদীর এক ঘন্টার স্প্রীড বোট ভ্রমন ।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.