বাংলার আলো-জলে ধূলো মেখে বেড়ে ওঠা মুক্তি রক ক্যাডেট : গারদখানার আমলনামা' এর- পাঁচ নম্বর এপিসোড এটি। এর প্রথম চারটি এপিসোডের লিঙক নিচে দেয়া আছে।
রক ক্যাডেট : গারদখানার আমলনামা-পঞ্চম এপিসোড
মতি বৃষ্টিতে ভেজেনি। ভেজার কথাও না। ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেনের একটা ছেলের অতো সাহস নেই।
বিষ্টিতে ভেজার কথা কেউ ভুলেও চিন্তা করে না। ক্লাস এইটের কাছ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতেই ব্যস্ত থাকে তারা।
ক্ষিপ্র চিতা কিংবা প্রতাপশালী ডায়নোসর সে যেই হোক না কেন, ক্লাস সেভেন হিসেবে দিন শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই সে বেড়াল হতে বাধ্য। বেড়াল না হলেও অন্তত ভেজা বেড়াল হতে হয়। না হলে টিকে থাকাই দায়।
পিঠের শিরদাড়া সোজা করে- চোখের পুতলী নিচে নামিয়ে চাবি দেয়া রোবটের মতো করে চলতে হয় তাদেরকে। হুকুম পালন করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নাই। গতির সাথে তাল মেলাতে- গায়ে ঘামের গন্ধ নিয়ে এরা ছুটে বেড়ায় রোদ-বিষ্টি-কুয়াশায়। শুধ হুকুম তামিল করার জন্য, নিয়ম পালন করার জন্য, নিজের ইচ্ছায় নয়।
তার উপর মতি আবার একেবারেই নিরীহ টাইপের ভদ্র ছেলে।
আগে থেকেই দু’চোখে ব্যাথা ছিল ওর। লেখাপড়া করার সময় মতি অল্প পাওয়ারের একটা চশমাও চোখে লাগায়। আজ হঠ্যাত করে মাথাটা ব্যাথায় ভারী হয়ে গেছে ওর। হালকা জ্বরও আছে গায়ে।
রাতে কলেজের হাসপাতালে গেল সে ডাক্তার দেখাতে।
জ্বর-মাথা ব্যথা শুনেই ডাক্তার ক্ষেপে গেল মতির উপর। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরতো আসবেই- কর্কশ স্বরে একথা বলে ওকে বসতে বলল ডাক্তার। তারপর কয়েকটা প্যারাসিটামল ও হিসটাসিন দিয়ে নিজের রুমে চলে যেতে বলল।
চোখ থেকে মাথা। আবার মাথা থেকে চোখ।
ব্যথা সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না আর। মাথা বনবন করে ঘুরছে। চোখ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে বারবার। অনেক আকুতি মিনতি করে মতি বারবার বোঝাতে চেষ্টা করল ডাক্তারকে।
কিন্তু কসাই ডাক্তার কিছুতেই বুঝলনা সরল মতির আর্ত চিতকার। উল্টো ধমক দিয়ে মতিকে চলে যেতে বলল হাসপাতাল থেকে। এই সমস্যা নিয়েই এর আগেও কয়েকবার ডাক্তারের কাছে এসেছিল মতি। প্রতিবারই এভাবেই ডাক্তার বিদায় করে দিয়েছে তাকে।
নিপাট ভদ্র ছেলে মতি।
এতিমের মতো চারটি প্যারাসিটামল আর হিসটাসিন নিয়ে ধুকতে ধুকতে চলে গেল হাসপাতাল থেকে।
এটাই ক্যাডেটদের গড়পড়তা চিকিতসা। অসুখ যাই হোক না কেন ওষুধ কিন্তু প্যারাসিটামল, হিসটাসিন, ডাইক্লোফেন। আর খুব বেশী হলে এক কোর্স এন্টিবায়েটিক সিপ্রোসিন। এসব ওষুধ জমাতে জমাতে অনেকের কাছে এক বাক্স পর্যন্ত ওষুধ জমে যায়।
তবে ডাক্তার চাইলে দেশের সর্বাধুনিক চিকিতসা সেবা দিতে পারে একজন ক্যাডেটকে। নিয়মও আছে তেমন। কিন্তু তা করা হয় খুব অল্পই।
রুমে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করল মতি। মাথা আর চোখের অসহ্য যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে গেছে।
কোনভাবেই আর তা সহ্য করতে পারছেনা সে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে কোথাও ঝুলে থাকার মতো মনে হচ্ছে।
ক্যাডেট কলেজে রাত এগারোটায় সব রুমের বাতি নিভিয়ে দিয়ে ডার্ক আউট করা হয়। ডার্ক আউটের পর রুম থেকে বের হওয়া নিষেধ সবার। তবে সিনিয়ররা ঠিকই বের হয়।
কিন্তু জুনিয়রদেরকে নিয়মটি কড়াকড়িভাবে পালন করতে হয়। বাতি নিভিয়ে দেয়ার একটু আগে রিজভী নিজের রুমের দিকে হেটে যাচ্ছিল। হঠাত এক জানালার ধারে কান্নার শব্দ শুনে দাড়িয়ে গেল ও। কাচের জানালা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে দেখল। বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মতি।
জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে মতিকে কয়েকবার নীচু স্বরে ডাকল রিজভী। মতি কোন সাড়া দিল না। ডাকের শব্দ হয়তো বুঝতেই পারেনি ও। নতুবা মাথার অসহ্য যন্ত্রণার সাথে যুদ্ধ করে- সে অনেক ক্লান্ত। আর কারো ডাকে সাড়া দেবার মতো অবস্থা হয়তো হারিয়ে ফেলেছে সে।
কোন সাড়া না পেয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে মতির মাথায় হাত দিল রিজভী।
মাথা তুলে তাকালো মতি। রিজভীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল সে। লাইটস অফ হয়ে গেল সব রুমের। মতিকে নিয়ে বারান্দায় এলো রিজভী।
হাউসের বারান্দার দক্ষিণ কোণে নিজ অফিসের সামনে দাড়িয়ে আছে মালু স্যার। দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব রুমের বাতি নেভানো দেখছে সে। অবাক হয়ে গেল সে- বারান্দায় রিজভী আর মতিকে দেখে।
হুংকার ছাড়লেন মালু স্যার। এখনো বাইরে কি করছিস তোরা ? রিজভী এদিকে আয়।
তোর সাথে যে আছে তাকেও নিয়ে আয়। তোদেরকে একটু সাইজ করি। জুনিয়র ছেলেদেরকে ডার্ক আউটের পর বাইরে দেখে তীব্র রাগে গোঙ্গাচ্ছে সে।
######### ##########
মতির চোখ লাল হয়ে আছে। গাল বেয়ে টপটপ করে চোখের পানি পড়ছে।
মতিকে সাথে নিয়ে রিজভী এগিয়ে এলো স্যারের কাছে। স্যার আগুনের মতো চোখ করে রিজভীর দিকে তাকালো। ওকে মেরেছিস কেন ? বলেই স্যার তেড়ে এলো রিজভীর দিকে।
আমি মারিনি স্যার। ও অনেক ভদ্র ছেলে।
স্যারের হাত থেকে নিরাপদ দূরে সরে গিয়ে স্যারকে বোঝালো রিজভী। আপনার আফিস থেকে বের হয়ে আমি আমার রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। জানালার পাশে হঠাত কান্নার শব্দ শুনলাম। ভিতরে তাকিয়ে দেখি মতি কাঁদছে। তাই ওকে ডেকে কান্নার কারণ শুনছিলাম।
কি রে? কি হয়েছে তোর? বড় ভাইরা কি পিটিয়ে দিয়েছে নাকি? সব সত্যি কথা বলে দে আমাকে। দুষ্ট ছেলেদের মতো ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে এসব বলেই মতিকে কাছে টেনে নিল মালু স্যার। চোখ এতো লাল হয়েছে কেন তোর? অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিস মনে হয় । আমাকে বলতো কে তোকে মেরেছে । আমি তার পিঠের ছাল তুলে নেব।
কলেজ থেকে বের করে দিব ওই শুয়োরটাকে। মালু স্যার মতির মাথায় কোমলভাবে হাত বুলিয়ে দিল।
স্যার। আমার চোখ ব্যথা করছে। চোখ খুলে থাকা যাচ্ছে না।
মাথাতেও অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথাটা মাঝে মাঝে ঘুরে উঠছে। দাড়িয়ে থাকতে পারছি না। মাথাঘুরে পরে যাচ্ছি। স্যারকে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁদতে শুরু করল মতি।
ডাক্তার দেখিয়েছিস? সন্দেহের সরু চোখ দিয়ে মতির চোখের দিকে তাকালো মালু স্যার।
জ্বি স্যার, ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। জ্বরের ওষুধ দিয়েছে। এর আগেও কয়েকবার এরকম সমস্যা হয়েছিল। প্রতিবার একই ওষুধ দিয়েছে।
কিন্তু এখন অনেক বেশী কষ্ট হচ্ছে। শান্ত মতি বলেই যাচ্ছে আজ সব বঞ্চনার কথা। সহ্যসীমা অতিক্রম করে গেলে মানুষ বোধহয় মুক্তির জন্য এতো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
স্যার আমাকে কাল বাসায় পাঠিয়ে দিন। আমি আম্মুর কাছে যাব।
ভালো ডাক্তারের কাছে দেখাবো। আমি আর এইভাবে থাকতে পারবো না। কান্নার শব্দ আর ব্যথা থেকে বাঁচার আকুতি এক হয়ে যাচ্ছে মতির আর্দ্র কন্ঠে।
স্যার কি বুঝল কে জানে! রিজভীকে বললেন- তুই মতিকে হাসপাতালে নিয়ে যা। আমি ফোন করে ডাক্তারকে বলে দিচ্ছি।
হাউস বেয়ারা গোমেদ আলীকে হুকুম দিলেন নিচতলার গেট খুলে দিতে।
কেউ যেনো বাইরে যেতে না পারে সেজন্য রাত এগারটায় হাউসের মেইন গেট গুলোতে তালা লাগানো হয়। তালা খুলে রিজভী আর গেমেদ আলী একসাথে মতিকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেল। মালু স্যারের ফোন পেয়ে ডাক্তার এলেন হাসপাতালে। তারপর ঘুমের ওষুধ দিয়ে সে রাতে মতিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলো।
পরের দিন দুপুরে রিজভী একবার হাসপাতালে গেল মতির খোঁজ নিতে। মতির অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানায় বসে আছে। রিজভীকে দেখে উঠে দাড়াতে চেষ্টা করল মতি। ওকে উঠতে নিষেধ করে পাশে গিয়ে বসল রিজভী।
মতি অনেক সময় নিয়ে একপ্লেট খাবার শেষ করল। ওকে দেখে খুব বিষণœ আর অসহায় মনে হলো । অসুস্থ্য মতির মলিন মুখের দিকে দেখে রিজভীর খুব মায়া লাগল। চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি সে মতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চলে গেল ।
####### ################
কয়েকদিন ধরেই মতির জন্য রিজভীর মনটা অনেক খারাপ। সবার ধারণা মতি হয়তো লুকিয়ে চুকিয়ে সেদিনের বিষ্টির দিনে কোন নিরাপদ জায়গায় দাড়িয়ে বিষ্টিতে ভিজেছে। অথবা অসময়ে বেশী সময় ধরে গোসল করে ঠান্ডা লাগিয়েছে। কিন্তু রিজভী জানে মতি বিষ্টিতে ভেজেনি।
মতি যদি অনেক সিনিয়র হয় তবুও সে কলেজের নিয়ম ভেঙ্গে বিষ্টিতে ভিজবে না।
মতি যদি কখনো কলেজ ক্যাপ্টেন হয় তাহলেও সে কোনদিন নিয়ম ভাঙবে না। কোনদিন শখ করেও সিগার ফুঁকবে না। জুনিয়রদের গায়ে গাত তুলবে না। কিংবা ক্লাসের বাইরেও কখনো স্যার ম্যাডামদেরকে নিয়ে উপহাস করবে না। মানুষ এতো ভালো হয়! মতির মতো এতো ভালো ছেলে কখনো দেখেনি কেউ।
কলেজের সবচেয়ে চঞ্চল ছেলে রিজভী । ওকে কেউ এতোটা নিরব দেখেনি কখনো। মন খারাপ করে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সকালের প্রথম চারটা ক্লাস পার করে দিয়েছে। চা পানের বিরতির পর পঞ্চম ক্লাস সবে শুরু হলো । আর তখনই ভাইস প্রিন্সিপালের অফিসের পিওন এসে দাড়াল ক্লাসের দরজায়।
উচ্চতর গণিতের আবুল স্যার পিওনের কাছে জানতে চাইল, কি চাই? পিওন জানালো- ওয়েটিং রুমে ক্যাডেট রিজভী আর শরীফের অভিভাবক অপেক্ষা করছে। ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার ওনাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাজুল স্যার রিজভী আর শরীফকে ক্লাস থেকে চলে যেতে বলল।
মন ভারী করে রিজভী আর শরীফ ক্লাস থেকে বের হলো। তারপর ধীরে ধীরে হেটে ওয়েটিং রুমের দিকে চলে গেল।
রুমের সামনে পায়চারি করছে মালু স্যার। শরীফকে দেখেই বাঁকা হাসি দিয়ে স্যার বলল, তোর খালু সাহেব এসেছেন।
আর তোর বাবা তো তোর জন্য চকলেট নিয়ে অপেক্ষা করছে। বলেই শরীফের দিকে ধারালো দৃষ্টিতে তাকাল মালু স্যার। যা তোরা।
ভিতরে গিয়ে কথা বল। আমি আসছি একটু পর।
মুখখানা অপরাধী অপরাধী ভাব করে রিজভী ওয়েটিং রুমে ঢুকল। দুজন লোক চুপচাপ বসে আছে কুশনে। একজন চাপচাপ দাড়ি ওয়ালা মধ্যবয়সী আর একজন চাছাছোলা পরিস্কার শেভ হওয়া ভদ্রলোক ।
তাদের পাশের কুশনে বসে আছে এ যাত্রার নাটের গুরু শহীদ শাফি।
শাফির দিকে তাকাতেই- শাফি চোখ দিয়ে ইশারা করে দাড়িওয়ালার দিকে দেখতে বলল রিজভীকে। রিজভী বুঝে গেল সবকিছু। এই দাড়িওয়ালাই এখন বাবার নাম ভূমিকায়। এই লোকটাই কিছু সময়ের জন্য এখন তার বানোয়াট বাবা।
হাতে মেলানোর জন্য ডান হাতটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে রিজভী আস্তে করে বলল, আমি রিজভী।
লম্বাটা রিজভী আর একটু ছোটটা শরীফ, সব কিছু বলেছে শাফি। কোন সমস্যা নাই। ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে হাত মেলানোর সময়ই দাড়িওয়ালা লোকটা রিজভীকে নিশ্চিন্ত থাকতে বললো।
শরীফ গিয়ে বসলো তার জন্য ভাড়া করা খালুর পাশে।
খালু বেচারার দিকে তাকিয়ে একটু শরম পেল শরীফ। কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে খালু সাহেব। এবারই মনেহয় সে প্রথম কারো খালু হিসেবে প্রক্সি দিতে এসেছে। আর শরীফও একটু অপ্রস্তুত। চুপচাপ বসে আছে দু’জন।
রিজভীর বাবার ভূমিকায় যে দাড়িওয়ালা- সে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই রিজভীর সাথে আলাপ জুড়ে দিল। শাফির বাবা হিসেবে ক্যান্টপাবলিকে প্রক্সি দিতে গিয়ে কী কান্ডটাই না করেছিল সে। প্রিন্সিপালের সামনে শাফিকে যে কী ভয়ানক ধমক দিয়েছিল- সেসব গল্প শোনাতে শুরু করল সে।
বাইরে পায়ের আওয়াজ পেয়ে শরীফ আর রিজভী মাথা নিচু করে বসে পড়ল। আর অভিনেতা বাবা ও খালু মুখটা গোমড়া করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
মালু স্যার ভিতরে এসে দুটো ওয়ার্নিং লেটার ধরিয়ে দিল শরীফ আর রিজভীর অভিভাবকের হাতে। তারা তো রাগের চোটে স্যারের সামনেই ইতর বলে গালি দিল শরীফ আর রিজভীকে। তারপর ওদেরকে আরো কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য অনুরোধ করল স্যারকে।
স্যারের হাত ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় দাড়িওয়ালা বললো- স্যার । আমার একমাত্র ছেলে রিজভী।
ছোট থেকেই অনেক দুষ্ট। ওকে মানুষ বানান স্যার। আমি আর পারি না। বুড়োর মেকী আবেগ আর উতকণ্ঠা দেখে মালু স্যার ভিড়মী খেয়ে গেল। বুড়োর যে আবেগ প্রকাশ পেল এখানে তা হয়তো নিজের ছেলের জন্যেও প্রকাশ পায় নি কখনো!
স্মার্ট ভদ্রলোকও শরীফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
শরীফকে কলেজের সব নিয়ম-কানুন ভালোভাবে মেনে চলতে বলল। আর কড়া গলায় শেষবারের মতো ওকে শাসিয়ে দিল। এরপর যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে সৌদিতে ফোন দিয়ে শরীফের মাকে নালিশ দেয়ার হুমকিও দিল সে। শরীফ আবার তার মাকে খুব ভয় পায়। বাঁচার জন্য স্যারের সামনেই শরীফ তার অভিনেতা খালুর পা জড়িয়ে ধরল।
এসব ঘটনা এতো দ্রুত ঘটে গেল যে মালু স্যার হতভম্ব হয়ে গেল। স্যার কিছু বুঝে ওঠার আগেই অভিনেতা অভিভাবকেরা সব রকমের কঠিন সালিস করে ফেলল। স্যার আর কিছু বলার সুযোগই পেল না। অনেক হয়েছে ভেবে রিজভীর বাবা আর শরীফের খালুকে দু’চারটা কথা শুনিয়ে দিয়ে স্যার চলে গেলেন।
মুখে মজা মজা ভাব নিয়ে ভ্রুর নিচে এবং চশমার উপরের ফাঁক দিয়ে শাফি তার চোখ দুটো ছুড়ে দিল পালাক্রমে রিজভী ও শরীফের দিকে।
এবার হাতের ব্যাগ থেকে দুই প্যাকেট কফি চকলেট বের করল শাফি। রিজভীর হাতে চকলেট ধরিয়ে দিয়ে শাফি বললো, কিরে সিগারেট লাগবে নাকি? রিজভী তো অবাক শাফির কথা শুনে।
এনেছিস নাকি! দে তাহলে। দরজায় গিয়ে বাইরের দিকে একবার উঁকি দিল শরীফ। রিজভী চট করে শাফির পিছনের পকেট থেকে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট নিয়ে পায়ের মোজার ভিতর গুঁজে ফেলল।
চোখ টিপে রহস্যকরে ষ্টাবলিং করা একটা নীল খাম শরীফের দিকে এগিয়ে দিল শাফি। নে- এটা তোর তুলি খালাম্মার চিঠি। শরীফের মুখচোরা হাসি দেখে মনে হল অনেক খুশি হলেও একটু লজ্জ্বা পেয়েছে সে। এমনিতেই ও একটু লাজুক ছেলে।
তারপর ভাড়া করা বাপ আর খালুকে বিদায় দিয়ে রিজভী ও শরীফ চলে গেল ক্লাসের দিকে।
সেদিনের বাকি তিনটি ক্লাস ততখণে শেষ। সবাই ডাইনিং হলের দিকে যাচ্ছে দুপুরের খাবার খেতে। মাছ-গোসত-ডিম, অনেক ভালো ভালো দেয় কলেজে। কিন্তু প্রতিদিন একই ধরণের রান্না খেতে খেতে আর ভালো লাগে না। চামুচ, কাটা চামুচ আর ছুড়ি দিয়ে ঘটর ঘটর করে খেয়ে- পেট ভরে কিন্তু মন ভরে না।
চরম বিরক্ত নিয়ে ওরাও সবার সাথে পা চালালো বিশাল হল রুমের মতো খাবার ঘরের দিকে।
...............................(চলবে....)
১ম এপিসোড, লিংক- Click This Link
২য় এপিসোড, লিংক- Click This Link
৩য় এপিসোড, লিংক- Click This Link
৪র্থ এপিসোড, লিংক- Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।