আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত ইসলামের তুলনায় বর্তমানের বিভ্রান্ত মোসলেম সম্পর্কে মোহাম্মদ আসাদের দৃষ্টিভঙ্গি-দাজ্জাল কি?শেষ পর্ব

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায় দাজ্জাল সম্বন্ধে মোহাম্মদ আসাদের অভিমত: মাগরেবের সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে শায়খ ইবনে বুলাইহিদ নযদি বেদুইন এবং শহরবাসী এক উৎসুক চক্রের কেন্দ্র হয়ে উঠেন, কারণ, এরা তাঁর পাণ্ডিত্ব এবং জাগতিক প্রজ্ঞা থেকে ফায়দা নিতে ইচ্ছুক। তিনি নিজেও ওদের অভিজ্ঞতা এবং দূরদেশে ওদের সফর সম্পর্কে ওরা তাকে কী বলতে পারে তা শুনতে আগ্রহী। নযদীদের মধ্যে দীর্ঘ সফর মোটেই বিরল নয়; ওরা নিজেদের বলে ‘আহলে আশশিদাদ’- উটের জীনের উপর সওয়ার লোক- এবং ওদের অনেকের নিকট বাড়ির সয্যার চেয়ে উটের জীন অনেক বেশী পরিচিত।

হার্বের যে তরুণ বেদুইন ইরাকে তার সাম্প্রতিক সফরকালের অভিজ্ঞতার কথা এইমাত্র শায়খের নিকট বর্ণনা করলো তার নিকট নিশ্চয় তা বেশী পরিচিত। এই সফরকালেই সে তার জীবনে প্রথম ফিরিঙ্গি অর্থাৎ ইউরোপিয়কে দেখতে পায়স (ইউরোপিয়দের এই নামে তখনি আখ্যায়িত করে আরবরা যখন ক্রুসেডের যুদ্ধের সময় ফ্রাংকদের সংস্পর্শে আসে)। -আমাকে বলুন শায়খ, ফিরিঙ্গিরা সবসময় মাথায় হ্যাট কেন পড়ে যা ওদের চোখ ঢেকে রাখে? ওরা আকাশ কী করে দেখতে পায়? -‘ওরা এ জিনিসটা দেখতে চায় না’,- শায়খ জবাব দিলেন, আমার দিকে চেয়ে চোখের পলক নেড়ে -‘হয়তো ওরা এই ভয় করে যে, আকাশের দৃশ্য ওদের স্মরণ করিয়ে দিতে পারে আল্লাহর কথা; ওরা চায় না যে, হপ্তার দিনগুলোতে কেউ ওদের আল্লাহর কথা মনে করিয়ে দেয়.........’ আমরা সবাই হেসে উঠি। কিন্তু তরুণ বেদুইনটি তার জ্ঞানের সন্ধানে রীতিমত জেদী। -‘তাহলে আল্লাহ কেন ওদের প্রতি এত দয়ালু এবং ওদের দিচ্ছেন ঐশ্বর্র্য্য, যা তিনি মুমিনদের দিচ্ছেন না?’ -‘ওহো, এতো খুব সোজা কথা বেটা, ওরা সোনারূপার পূজা করে।

’ তাই ওদের দেবতা ওদের পকেটে...কিন্তু আমার এই যে দোস্ত, তিনি তার হাত রাখেন আমার হাটুর উপর, ‘ইনি ফিরিঙ্গিদের সম্পর্কে আমার চাইতে অনেক বেশী জানেন, কারণ তিনি ওদের মধ্য থেকে এসেছেন,- আল্লাহ! মহিমান্বিত হোক তাঁর নাম-তিনিই তাকে অন্ধকার থেকে নিয়ে এসেছেন ইসলামের আলোকে। ’ -‘ব্যাপার কি তাই, ভাইয়া?’ জিজ্ঞাস করে উৎসুক বেদুইন, ‘একি সত্য যে আপনি নিজেই একজন ফিরিঙ্গি ছিলেন?’- যখন আমি মাথা ঝুকিয়ে সায় দেই, সে ফিসফিস করে বলে ‘প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি যাকে ইচ্ছা পরিচালিত করেন সুপথে- আমাকে বলুন ভাইয়া ‘ফিরিঙ্গিরা যে আল্লাহ সম্পর্কে এত উদাসীন তার কারণ কি?’ -‘এ এক লম্বা কাহিনী’ আমি জবাব দিই, ‘কয়েক কথায় এর জবাব এর ব্যাখ্যা করা যাবে না। আমি এই মুহূর্তে তোমাকে যা বলতে পারি তা এই যে, ফিরিঙ্গিদের দুনিয়া হয়ে উঠেছে দাজ্জালের দুনিয়া- চোখ ঝলসানো প্রবঞ্চকের দুনিয়া। তুমি কি আমাদের নবীর এই ভবিষ্যতবাণীর কথা কখনো শোননি যে, আখেরী জামানায় দুনিয়ায় বেশীরভাগ লোকই এই বিশ্বাসে দাজ্জালের অনুসারী হয়ে উঠবে যে, সে-ই আল্লাহ!’ এবং ও যখন জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকালো, আমি তখন শায়খ ইবনে বুলাইহিদের সম্মতি নিয়ে বর্ণনা করি বাইবেলের সর্বশেষ গ্রন্থে উল্লেখিত দাজ্জালের আবির্ভাব সম্পর্কিত ভবিষ্যতবাণী- যার একটি চোখ হবে অন্ধ কিন্তু তার থাকবে আল্লাহর দেয়া রহস্যময় ক্ষমতা। পৃথিবীর দূরতম অঞ্চলে যা বলা হচ্ছে তাও- সে শুনতে পাবে কান দিয়ে এবং অসীম দূরত্বে যা কিছু ঘটছে তার এক চোখ দিয়ে দেখতে পাবে; সে উড়ে কয়েকদিনের মধ্যে ঘুরে আসবে পৃথিবী; মাটির নিচ থেকে হঠাৎ করে নিয়ে আসবে সোনা-রূপার ভাণ্ডার; তার হুকুমে বর্ষণ হবে ; তরুলতা উৎপন্ন হবে, সে হত্যা করবে এবং নতুন জীবন দান করবে।

যার ফলে, ঈমান যাদের দূর্বল তারা তাকে বিশ্বাস করবে খোদ আল্লাহ বলে এবং ভক্তিতে তার সামনে সিজদায় যাবে- কিন্তু যাদের ঈমান মজবুত তারা আগুনের হরফে তার কপালে যা লেখা আছে তা পড়তে পারবে যে, মানুষের বিশ্বাস পরীক্ষা করার জন্য দাজ্জাল একটা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়.....’ এবং যখন আমার বেদুইন বন্ধুটি দু’চোখ বিস্ফোরিত করে আমার দিকে তাকায় এবং গুণগুণ করে বলে, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় মাগি,’ আমি তখন ইবনে বুলাইহিদের দিকে ঘুরে বলি: -হে শায়খ, এই রূপক কাহিনীটি কি আধুনিক কারিগরি সভ্যতার একটি যথোচিত বর্ণনা নয়? এ সভ্যতা হচ্ছে ‘এক চক্ষু’: অর্থাৎ এ কেবল জীবনের একটি দিক, তার বৈষয়িক উন্নতির দিকে তাকায় এবং জীবনের রূহানী দিক সম্পর্কে এ বে’খবর। এর কারিগরি তেলেসমাতির সাহায্যে মানুষকে দিয়েছে তার স্বাভাবিক সামর্থের বাইরে অনেক দূরের বস্তুকে দেখার ও দূরের শব্দ শোনার ক্ষমতা, দিয়েছে ধারণাতীত গতিতে অসীম দূরত্ব অতিক্রম করার সামর্থ্য। এই সভ্যতার বৈজ্ঞানীক জ্ঞান দ্বারা ‘বর্ষানো হয় বৃষ্টি এবং জন্মানো হয় তরুলতা এবং বৈজ্ঞানিক ধ্বংসলীলা ধ্বংস করে করে জীবনকে আর এর বৈষয়িক অগ্রগতি এতোই প্রচণ্ড এবং এতই চোখ ঝলসানো যে, দুর্বল ঈমানের লোকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, নিজের অধিকারেই এ হচ্ছে একজন ‘খোদা’, কিন্তু যারা তাদের স্রষ্টা সম্পর্কে সচেতন রয়েছে তারা স্পষ্টই বুঝতে পারে যে দাজ্জালের পূজা করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করা. . . . . . . । -তুমি ঠিক বলেছো মুহম্মদ, ঠিক বলেছো, উত্তেজিতভাবে আমার হাঁটুর উপর থাবা মারতে মারতে চিৎকার করে ওঠেন বুলাইহিদ, -দাজ্জাল সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবাণীটির প্রতি এভাবে তাকানোর কথা কখনও আমার মনে হয় নি কিন্তু তুমি ঠিক বলেছো! মানুষের অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের উন্নতি যে আমাদের আল্লাহরই একটা রহমত, একটু উপলব্ধি না করে অজ্ঞতাবশত মানুষ ক্রমেই বেশি- বেশি সংখ্যায় ভাবতে শুরু করেছে যে, এ খোদাই একটা লক্ষ্য এবং পূজা পাওয়ার যোগ্য। হ্যাঁ, আমি নিজে নিজে ভাবি- পশ্চিমের লোক সত্যই নিজেদের সঁপে দিয়েছে দাজ্জালের পূজায়।

অনেক কাল আগেই পশ্চিমের মানুষ হারিয়েছে তার সকল নিষ্কলুষতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার সকল অভ্যন্তরীণ সংহতি। তার কাছে জীবন হয়ে উঠেছে একটা হয়রানি। সে সন্দেহবাদী এবং সে কারণে সে তার ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নিজের অন্তরে নিঃসঙ্গ। এই নিঃসঙ্গতার মধ্যে যাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে না হয় সে জন্য বাহ্য উপায়ে জীবনের উপর প্রভূত্ব করার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে তাকে- ‘বেঁচে আছি’ কেবলমাত্র এই অনুভূতি তাকে আর দিতে পারছে না অন্তরের নিরাপত্তা; যন্ত্রণার সঙ্গে মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে তাকে অবশ্যই হামেশা কুস্তি লড়তে হবে জীবনের সাথে, যেহেতু সে সকল প্রকার অতীন্দ্রিয় জিজ্ঞাসা হারিয়ে বসেছে এবং স্থির করেছে যে, তাকে বাদ দিয়েই সে চলবে, তাই তাকে ক্রমাগত উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করতে হবে তার নিজের জন্য যান্ত্রিক মিত্র। আর এভাবেই শুরু হয়েছে কারিগরী ক্ষেত্রে তার উন্মত্ত বেপরোয়া প্রয়াস।

সে প্রত্যেক দিন নতুন নতুন মেশিন আবিষ্কার করছে এবং তার প্রত্যেকটিকে দিচ্ছে তার আত্মার কিছু না কিছু যেন সেগুলি তার অস্তিত্বের জন্য লড়াই করে। মেশিনগুলি তা অবশ্যই করে কিন্তু একই সঙ্গে সেগুলিই তার জন্য সৃষ্টি করে নিত্য-নতুন অভাব, নতুন নতুন বিপদ, নতুন নতুন ভয় এবং নতুনতর আরও কৃত্রিম মিত্রের জন্য এক অতৃপ্ত তৃষ্ণা। তার আত্মা নিজেকে হারিয়ে ফেলে উৎপাদনশীল মেশিনের নিয়ত প্রবলতর, নিয়ত উদ্ভটতর, নিত্য প্রচণ্ডতর চাকার ঘূর্ণণে; এবং মেশিনটিও হারিয়ে ফেলে তার নিজের সত্যিকার উদ্দেশ্য- মানবজীবনকে রক্ষা এবং ঐশ্বর্য্যশালী করাই যার মানে- এবং নিজেই হয়ে ওঠে একটা দেবতা ইস্পাতের সর্বগ্রাসী রাক্ষস। এই অতৃপ্ত দেবতার পুরুত প্রচারকেরা এ বিষয়ে সচেতন বলে মনে হয় না যে, আধুনিককালের কারিগরী উন্নতির দ্রুততা কেবল জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিশ্চিত বিকাশেরই ফল নয় আত্মিক হতাশারও ফল, এবং পশ্চিমের মানুষ যে চমকপ্রদ বৈষয়িক উন্নতির আলোকে প্রকৃতির উপর প্রভূত্ব স্থাপন করবে বলে আপন ইচ্ছার কথা ঘোষণা করে, সেগুলি কিন্তু তাদের অন্তরতম তাৎপর্যের দিক দিয়ে আত্মরক্ষামূলক ধরণের ঃ ওদের উজ্জ্বল মুখাবয়বের পেছনে ওঁৎ পেতে আছে অজানার আতঙ্ক। পাশ্চাত্য সভ্যতা মানুষ ও সমাজের প্রয়োজন ও তার আত্মার চাহিদার মধ্যে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে।

এ সভ্যতা তার কিছু কাল আগের ধর্মীয় নীতি শাস্ত্র বর্জন করেছে কিন্তু নিজের মধ্যে থেকে অন্য কোন নৈতিক পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারে নি যা, এত তত্ত্বমূলকই হোক, যুক্তিগ্রাহ্য হবে। শিক্ষায় এর অতো অগ্রগতি স্বত্বেও লোক-মাতানো চতুর বক্তারা যেসব শ্লোগান উদ্ভাবন করা প্রয়োজন মনে করে, উদ্ভট হলেও সে- সবের শিকার হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে যে নির্বোধ প্রস্তুতি রয়েছে, পাশ্চাত্য সভ্যতা তা জয় করতে পারে নি। এ সভ্যতা সংগঠনের কৌশলকে একটি চারুকলায় উন্নীত করেছে, কিন্তু তা স্বত্ত্বেও পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীরা যেসব শক্তির জন্ম দিয়েছে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পাশ্চাত্য জাতিগুলি রোজই তাদের চূড়ান্ত অক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে, এবং এই মুহূর্তে তা এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যখন বাহ্যত অপরিসীম বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা আর বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা পাশাপাশি আগাচ্ছে, হাত ধরাধরি করে। তার বিজ্ঞান জ্ঞানের যে আলো ছড়াচ্ছে- যে আলো নিঃসন্দেহেই মহৎ-তা থেকে সর্বপ্রকার ধর্মমুখিনতা বঞ্চিত পাশ্চাত্যবাসী আজ আর নৈতিক কোনো ফায়দাই লাভই করতে পারছে না। তার ক্ষেত্রে কুরআনের এ কথাগুলি প্রযোজ্য: ওদের উপমা হচ্ছে অমন জাতের উপমা যারা প্রজ্জ্বলিত করেছে আগুন, কিন্তু যখন তা তাদের চারদিকে আলো ছড়ালো তখন আল্লাহ তাদের আলো নিয়ে গেলেন এবং রেখে দিলেন অন্ধকারে যার মধ্যে ওরা দেখতে পায় না- বোবা, বধির এবং অন্ধ: এবং তবুও তারা ফিরে আসে না।

এবং, তবু ওদের অন্ধত্বের অহমিকায় পাশ্চাত্যের লোকেরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, অন্য কিছু নয়, ‘ওদের’ সভ্যতাই পৃথিবীতে আনবে আলো আর সুখ শান্তি ... আঠারো এবং ঊনিশ শতকে ওরা সারা পৃথিবীতে খৃস্টধর্মের সত্য বিস্তার করতে চেয়েছিলো; কিন্তু এখন যেহেতু ওদের ধর্মীয় উদ্দীপনা এতোটা ঠাণ্ডা হয়ে পড়েছে যে, ধর্মকে ওরা নেপথ্য সংগীতের বেশী কিছু মনে করে না- যাকে বাস্তব জীবনের সহচর হিসাবে থাকতে দেওয়া হয়, কিন্তু তার উপর প্রভাব খাটাতে দেওয়া হয় না- তখন তারা খৃস্টধর্মের পরিবর্তে পাশ্চাত্য জীবন পদ্ধতি’র জড়বাদী তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করেছে তত্ত্ব-কথাটি কী?- এ বিশ্বাস যে কারখানায়, গবেষণাগারে এবং পরিসংখ্যান- বিদদের টেবিলের উপরই মানুষের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এবং এভাবে দাজ্জাল আবির্ভূত হয়েছে স্বরূপে......। সূত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।