আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''নড়াইলের রাজনীতি এবং কৃষান কন্যার ভাবনা''

আমার সব লেখা শেষ করে অবশেষে যখন আমার জন্মস্থান নড়াইলকে নিযে ভাবছি। ঠিক তখন স্মৃতির কোনে ভেসে উঠছে আমার সকল স্মৃতি বিজড়িত হাজার সপ্ন ও মায়ামমতায় ঘেরা ছোট শহর নড়াইল যেখান হতে একদিন আমি চলে এসেছিলাম তারপর আবার জীবনের অনেকটা পথ ঘুরে সেখা্নে গিয়েই আমি থেমে গেছি। তাইত আজ তাকে নিয়ে আমার অনেক সপ্ন। মনে পড়ে-১৯৭০ সনে সম্ভবত: দাদী ও মায়ের সাথে নলদী স্কুলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে গিয়েছিলাম। তা দিয়ে আমার রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতি শুরু, তারপর ১৯৭১ এ এলাকার একমাত্র আওয়ামীলীগ সংগঠনকারী পরিবার হিসেবে আমাদের যে ভয়াবহ দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হয়েছিল যা আমি আমার ১৯৭১ এর স্মৃতি বিজড়িত '' মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১, মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু কথা'' গল্পে লিখেছি।

তারপর ১৯৭২-১৯৭৫ ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলি যা আমি গ্রামের মাঠ, নদী, গাছপালা দেখে দেখে ও আপনজনদের সাথে খেলা করে কাটিয়েছিলাম। আর তখন দেখেছি বড় ভাইকে গ্রামের একমাত্র কলেজ পড়া ছাত্র যিনি ছিলেন সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত এক বীর সেনিক। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম সারির নেতা ও গ্রামের গরীব, দু:খী অসহায় মানুষের পরম বন্ধু। ১৯৭৫ সনে দেশের ভিতর আবার শুরু হল অস্থিরিরতা। প্রতিনিয়ত আমরা গ্রামে থেকে খবর পেতাম -আজ নড়াইল কলেজে ছাত্রদের ভিতর গন্ডগোল হয়েছে।

বড় ভাই হলে থাকতেন তাই মা বেশি দুশ্চিন্তা করতেন। তারপর বড় ভাই নুরুল ইসলাম ১৯৭৫ এর ১৪ মে এক দল সন্ত্রাসীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তখন মেজে ভাইযের উপরও আক্রমন আসতে থাকে। তারপর ১৯৭৬ সনে মেজে ভাই আমাকে নিয়ে নড়াইল চলে আসেন। বড় ভাইয়ের সহপাঠিরা সেদিন আমাদের বড় ভাই হিসেবে পাশে এসে দাড়ান।

সম্ভবত: ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবের মৃতুর পর সারা বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের অবস্থা ভাল ছিলনা। তারপরও তারা হৃদয়ে লালন করেছিলেন শেখ মুজিবকে। আর অপেক্ষা করেছেন সারভাইভের জন্য। আমি আমার হাজার স্মৃতি বিজড়িত নড়াইলকে ভালবেসেছিলাম কিন্ত আমার দুর্ভাগ্য আমি নড়াইলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। তাইত একসময় আমাকে গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকা চলে আসতে হযেছিল।

আর দুর থেকে জেনেছিলাম-এক সময় মি: সাইফুজ্জামান খোকন জাতীয় পার্টির এমপি। তারপর ক্রমান্বয়ে শরীফ খসরুজ্জামান, ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, চারদলের মুফতি---মনে করতে পারছিনা, মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নড়াইল হতে নির্বা্চন করেছেন যা আমি দুর থেকে জেনেছি। তারপর দীর্ঘ বছর পরে গত ২০০৯ সনে আমি প্রতিবন্ধীর সার্টিফিকেট আনতে নড়াইল গিযেছিলাম-তারপর গ্রামের বাড়ীতে। পরবর্তীতে নড়াইল-খুলনা-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া-কাশিয়ানী হয়ে কালনা ঘাট হয়ে পুনরায় নড়াইল ফিরে এলাম। তারপর সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলাম।

আমি বুঝতে পারলাম দীর্ঘ বছরে নড়াইলের যা হবার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। আজ লোহাগড়া কালনা ব্রিজ হয়নি্, চিত্রানদীর উপর ব্রিজ হয়নি, নলদী ব্রিজ হয়নি, এস সুলতানের মিউজিয়ামের মুল্যবান স্কেচগুলি ও শিল্পির সপ্নের সোনার তরীর অবহেলা যা আমাকে কষ্ট দিযেছিল। তাছাড়া নড়াইল হাসপাতালের করুন অবস্থাও আমাকে ভাবিযেছিল। তার উপর আমি সেদিন লিখেছিলাম। মনে পড়ছে-আমি যেদিন নড়া্ইল গরীব, দু:খীর জন্য ''রাহিলা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের'' সপ্ন দেখলাম।

আর তা সাবমিট করলাম স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যান উপদেষ্টা বরাবরে। তিনি তখন আমাকে বললেন-যাদের টাকা আছে তারাই কেবল ফাউন্ডেশন করতে পারে। আমি হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে এলাম। আর সেদিন থেকে লেখালেখি শুরু করলাম। আরও মনে পড়ছে-২০০৮ সনে মেজে ভাই ও সোহরাব ভাই ঢাকা এলেন নড়াইল এমপি নির্বাচনের নমিনেশনের ব্যাপারে।

যেমন করে দলীয় লোকজন নির্বাচন এলে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন ঠিক তেমনিভাবে। কিন্ত কাজ হয়নি। সেদিন নমিনেশন পেলেন মেজর বাকের যার নামটা পর্যন্ত আমি কোনদিন নড়াইলের রাজনীতিতে শুনিনি। যাই হোক তিনি তিন বছরে নড়াইলের জন্য কতটুকু করেছেন জানিনা্ তবে কালনা ব্রিজ, চিত্রা ব্রিজ হয়নি এটা আমার বিশ্বাস। আমি জেনেছি-এই নির্বাচনে ৩-৫ কোটি টাকা খরচ হয়।

দলের কেন্দ্র থেকে দেখা হয় কার বেশি টাকা ও ক্ষমতা/প্রভাব আছে , আর তাকেই নমিনেশন দেয়া হয়। এখানে সততার কোন মুল্যায়ন হয়না। যা আজ ব্যবসায়ে পরিনত হয়েছে। তাইত দক্ষ, বিচক্ষণ, শিক্ষিত মানুষেরা আজ রাজনীতি থেকে দুরে সরে থাকে। ফলে তাদের সমযটুকু কেবল ইনভেস্টকৃত টাকা উত্তোলনের কাজে ব্যয় হয়ে যায়।

তখন জনগনের জন্য ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্থা ও উন্নয়নমুলক কাজের প্রতি লক্ষ্য করার মত সময় হয়ে উঠেনা। সকল জনকল্যানমুলক কাজ কর্ম ব্যাহত হয়। ফলে জনগনের আর মুক্তি আসেনা। তাদের কষ্ট কষ্টহ রয়ে যায়। আবার সময় পরিবর্তনের সাথে সরকারও পরিবর্তন হয় তখন একই নিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাক।

ঠিক এইভাবেই ৪০ বছরেও নড়ইলবাসীর মুক্তি আসেনি যতটা আসার কথা ছিল। তাই আজ ভাবছি-টাকা হলেই জনগনের নেতা হওয়া যাবে এই চিন্তা চেতনার বিলুপ ঘটিয়ে স্বত:স্ফুতভাবে যদি জনগণ তাদের নেতা নির্বা্চন করতে পারে তবে তিনিই কেবল পারবেন মুনাফা ছাড়া জনগনের জন্য কাজ করতে । তাইত ভাবছি বাংলার সকল জেলাগুলিতে কেবল সৎ, দক্ষ , বিচক্ষণ, শিক্ষিত মানুষদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিতে হবে যাতে তারা কেবল মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন। যদিও আমাদের বাস্তবতা বড়ই কঠিন। তারপরও--'' You can not change human never. Never say never.  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।