জীবনের জন্যই এই সব কথামালা ১.
একদিন পাখি হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো আমার
স্বপ্নের ফানুস উড়াবার কথা ছিল আকাশে,
একদিন দূর্গম ছেড়ে যাবার কথা ছিলো সহজে
কথা ছিলো কথা হবে সুরতালে দখিনা বাতাসে।
এখন স্বপ্নের কথা উঠলেই পিঠে ঠেকে শক্ত দেয়াল
বুকের ভেতর নাড়া দিয়ে উঠে এক সমুদ্র শংকা,
ক্যানভাসে স্থির আমি, দাড় করিয়ে গেছে কেউ
ছিড়তে পারো যত ইচ্ছে, রঙ প্রলেপের জায়গা নেই।
২.
শোনো, চোখের কিনারে স্বপ্নস্রোত দাঁড়িয়ে থাকে
মাঝরাতে ঢেউ তুলে পদ্ম জলে
কথা হয় শিরায় শিরায়, দুলতে থাকা বেলী ফুলে।
শোনো, রাত্রির দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে শব্দহীনতায়
সিড়ি বেয়ে পশ্চিম পাহাড়ে ঘুম দেয় অপরুপা চাঁদ।
তুমিও ঘুমাও,
চাঁদ যেমন ঘুমায় পাহাড়ের ভাজে, তেমনি স্বপ্নতল
ঘুম সমুদ্রে সাই সাই চলে আমাদের নৌকার পাল।
।
৩.
একটি দিনের সারাংশ আকো,
এক মুঠো হতাশা, আধ লিটার অনিশ্চয়তা।
কাগজের বাম পাশে দেখো একটা জ্যান্ত দুঃখ পাথর,
মেলে রাখো, সূর্যাস্তের মেঘ ক্রমেই খেয়ে যাবে।
৪.
পরিত্রাণের পথ তো দীর্ঘ না।
ক্রোশ ক্রোশ হেঁটে আসার গল্প ও না।
সবুজ ঘাসের কাছে হাত কড়জোড় করে এক মিনিট,
উঠতি পূর্ণিমা কে ব্যক্তিগত কাজ জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া,
তারপর শুধুই ঢলে পড়া...
ছুরি-কাচির জয়ধ্বনি, রক্ত রঙে খানিকটা ঝিকিমিকি।
তারপর শুধুই মুক্তির গান...
শ্মশানে দ্যাখো কারা ব্যস্ত হয়ে গেছে হঠাৎ,
তাদের হঠাৎ কাজ বাড়িয়ে দেয়ায় কিছু বলেছ কি?
৫.
এক একটা বিপর্যয় আমাকে ঘিরে ধরছে,
প্রত্যাখানের একশোটা চিঠি উপচে পড়ছে এখানে,
ভোরবেলা রোদ্দুর, বিকেলে দখিন হাওয়া মুখের উপর
না করে দিলো সঙ্গী হতে,
একবার, একশো বার, হাজার বার।
আমি তাদের বলেছি খানিকটা সময় আমি নির্জনতলায় রব,
ঠিক যখন তোমাদের উপচানো মুহুর্ত জন্মাবে
তখন না হয় গল্প জুড়বো খানিকটা।
কিন্তু না, কেউ সম্মত হতে পারলো না।
তারপরও জানো আমি দিব্যি বেঁচে আছি,
পৃথিবী জন্মে পেয়েছি এক জল থৈ থৈ পুকুর,
আর ডুব দিয়ে পালাবার একটা বিরাট জল সুড়ঙ্গ!
৬.
কেবল সন্ধ্যাটুকুই যান্ত্রিক না।
এখনো ঘরে ফিরে পাখি অতীতের মতো।
ঘামে ভেজা শার্টে বেরোয় আনন্দ পারফিউম।
দখিনা হাওয়া নিয়ম করে মিলায় পশ্চিমাকাশ।
কেবল সময়ের এই ভাগটুকুয় মানুষের মনে থাকে,
বিকল্প ভাবার কথা, বিদ্যুৎ চলে যাবে বলে কুপি আশ্রয়।
পুরো দিনের সমীকরণ ভুল প্রমাণিত হয়ে গেলেও থাকে
আপন ঘর; সন্ধ্যার অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে মানুষের মুখ।
মানুষের রোগ-শোক, ব্যথাতুর বুকে স্বপ্নাতুর আগামীর শ্রম
মাটিরপুতুলের শেষ আশ্রম এই সন্ধ্যাঘর, রাত্রির স্কেচবুক।
৭.
কফির পেয়ালার মতো পরম আরাধ্য অন্ধকার নামে বিদঘুটে শহর;
জীবন যাদের জিহবায় দিয়েছে বিতৃষ্ণার অভিশাপ, তারা ঠোট রাখে ঈশ্বরমুখো -
আহা, কফির পেয়ালার মতো নিরালা রাত, তুমি পালিয়ে যাবার পথ রাখো;
নিঃস্ব করো আরো উড়ন্ত হাওয়ায়, শেষ চুমুকের আক্ষেপে...।
৮.
ছাই রঙের অন্ধকার ক্রমঃশ বাড়ছে
জানলা দিয়ে হু হু করে ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকারের মতো ব্যথা
আশ্চর্্য, জানালার ওপারে টিনের চালের সেকি আনন্দ!
ফিরে আসছে বৃষ্টি সঙ্গমের অপার আনন্দক্ষণ।
মানুষের ব্যথায় আকাশের কিচ্ছু যায় আসে না,
আকাশের কাছে বৃষ্টি মানেই ছুঁয়ে আসা, জলকেলি খেলা...
মানুষের কাছে মেঘকালো অন্ধকারের অপর নাম শূন্যতা, স্মৃতির অদৃশ্য নৌকো।
৯.
অনন্তের পথ গেছে অস্তগামী স্টেশন, শৈশবপুর।
কাদায় পা আটকে গেলে দেখ জন্মের হদিস তোর।
আত্মারাম কখনো বলিনি তোকে বিন্দুতে ফেরার কথা,
মাটিবর্তী প্রেমে কবে হারিয়েছি মানবজন্মের আকুলতা।
কিসের শূন্যতা কিসের দৈন্যতা কিসের তোর অপ্রাপ্তি?
অনন্তের পথে পাবি সোদাগন্ধ গোলাপ,পথ দেবে দীপ্তি।
১০.
ছাই রঙের অন্ধকার ক্রমঃশ বাড়ছে
জানলা দিয়ে হু হু করে ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকারের মতো ব্যথা
আশ্চর্্য, জানালার ওপারে টিনের চালের সেকি আনন্দ!
ফিরে আসছে বৃষ্টি সঙ্গমের অপার আনন্দক্ষণ।
মানুষের ব্যথায় আকাশের কিচ্ছু যায় আসে না,
আকাশের কাছে বৃষ্টি মানেই ছুঁয়ে আসা, জলকেলি খেলা...
মানুষের কাছে মেঘকালো অন্ধকারের অপর নাম শূন্যতা, স্মৃতির অদৃশ্য নৌকো।
১১.
স্বপ্নের রঙ সাদাকালো?
তবে কেন আমার স্বপ্নে থৈ থৈ জল খেলা করে।
জলের উপর নীল আকাশের মুখ ভাসে। জলের পাড় সবুজ।
ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেঁটে যায় পাতাবাহার শাড়ি, আঁচলের ঝাপটা পড়ে জল-পাতার সম্মুখে। কেন তুমি আকাশে সূর্য্য দেখলে নাম দাও তার স্বর্ণ? দুপুরের সোনা রোদ হয়ে যায় তপ্ত আগুন।
আরেক বিকেলে রোদের নাম বলো মিষ্টি প্রেমিকা। তবে কি স্বপ্নেরা রোদের মতো, সংজ্ঞায়িত হয় ইচ্ছেমতো? তোমাকে বলি, আমার স্বপ্নে শেফালি ফুল ও ছিলো। তার রঙ তো কেউ সাদা বলবেনা আর! আমি কেন কেবলই স্বপ্নের রঙ নিয়ে রাতভর ঘোরের মধ্যে থাকি। ।
১২.
মানুষের স্মৃতিশক্তি কে ঈর্ষা করে সবুজ বৃক্ষের দল,
মানুষের মনে রাখার একটা করে শান্ত জলাধার থাকে,
ঘাট ক্রমে শূন্য হলেও জলের ভেতর জেগে থাকে -
প্রিয় সব মুখ, সহস্রটা সকাল দুপুর।
বৃক্ষের নিজস্ব কোন জলাধার নেই, স্মৃতিশক্তির জন্যে তাই
বৃক্ষ চেয়ে থাকে বৃষ্টির মুখ।
১৩.
জল তৃষ্ণায় একটি চাতক সারাজীবন বৃষ্টি প্রার্থনা করে গেল,
এক ফোঁটা বৃষ্টি এলো না তার মৃত্যুপুরীতে,
জল বিতৃষ্ণায় একটি পিপীলিকা শুষ্ক মাঠের খোঁজ করে গেল
একজনমে সবুজ ঘাস ছিলো না তার চোখেতে।
এক আমি স্বপ্নের খোঁজে উপুর হয়ে এক জীবন আকাশমুখো
জলের স্রোত ভাসিয়ে দিল আকাশ থেকে মাটি।
আঙুলের ডগায় বসে পড়লে শুষ্ক জীবন -
জলের স্রোত খোঁজেও পাবে না প্রিয় কোনো কাব্যের ভিতর।
১৪.
কত শত নদী আমার,
কত নদীর নাম দেয়া বাকি।
নদীগুলো ঠিকই আমার নাম জানে,
এই যেমন আবছা অন্ধকারে ডেকে গেলো একটি নদী।
রুগ্ন পৃথিবীকে যেমনতর ডাকে চিকিৎসক নীলাকাশ,
তেমনিভাবে ডেকে গেলো শান্ত জলের নদী আমার।
তবে কি পৃথিবীর মতো, হলদে পাতার মতো রোগগ্রস্ত আমি?
বুকের ভিতর মন খারাপের স্টেশন, সুবিশাল কান্না।
নামহীন নদী আমার ডেকে গেল জলের আহবানে,
মানুষেরা মিথ্যে বলে, নদীর ঠোঁটে মিথ্যা আসে না।
স্রোতস্বিনী জল আমার, এই শূন্য বিকেলের আহাজারি
স্বপ্নের অপমৃত্যু নয় কেবল এ রোগ সন্দেহের শুধু কারন
জল কে ছোব বলেই একশো বছর হার মেনে বসে আছি।
১৫.
জীবনের প্রথম নাম বিষন্ন সকাল, বিষন্ন দুপুর, মৃত্যুপ্রবণ সন্ধ্যা।
ক্রমঃশ প্রার্থনায় রাত্তির নামিয়ে পালিয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ অন্ধকার।
জীবনের ডাক নাম চেয়ে থাকা, প্রতীক্ষায় থেকে মেঘের ভাজ গোনা
এক বুক কষ্ট আড়াল করে মিথ্যে করে বলা, ভালো না থাকার কি!
জীবনের আরেক নাম স্বপ্নভঙ্গের চক্রভিত্তিক খেল, ভাঙ্গনে ওঠাও সুর
ভেসে গেলে সব অকাল প্রলয়ে, মিথ্যে আশায় আবার তাকাও বহুদূর।
(ইহা একখান স্ট্যাটাস সংরক্ষন পোস্ট। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।