পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী"
অনেক সমালোচনার মুখেও নতুন আবাসন প্রকল্পের নামে বালুনদী ভরাট করে চলছে আশিয়ান সিটি। ফলে এক সময়ের প্রশস্ত প্রমত্ত বালুনদী এখন অনেকটাই মৃত ও ক্ষীণকায়। বালু পড়ে এই নদীর পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটছে, নানা বর্জ্যে জঞ্জালে দুষিত হচ্ছে পানি। এভাবে চলতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে নদীটি। ফলে হুমকির মুখে পড়বে সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং আশপাশের এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালুনদীর পূর্ব পাশে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে আশিয়ান সিটি। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া খাস জমি ও নদী দখল করে এই প্রকল্পটি গড়ে তুলছেন।
গত সোমবার বালুনদীতে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পূর্ব পাড় ঘেঁষে সারি সারি ট্রলার রাখা আছে। সেখানেই রয়েছে আশিয়ান সিটির প্রকল্প। সেখানে প্রতিদিন ৭০/৮০টি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।
তবে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে কয়েকদিন বালু ভরাট বন্ধ আছে।
নদী থেকে বালু তুলে নদীর পাড় ঘেঁষে জমি ভরাট করা হচ্ছে। গত কয়েক দিন আগে তোলা বালু আবারও নদীতে আসছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। তাই নদীর পানি প্রবাহ ঠিক নেই।
কালো রঙ ধারণ করেছে পানি। কচুরিপানায় ভরে গেছে অনেক জায়গা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক সময়ের প্রশস্ত-প্রমত্ত বালু নদী এখন অনেক চিকন হয়ে গেছে। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। নদীতে মাছ শিকার করে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তাদেরকেও কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে।
এমনই দৃশ্য চোখে পড়েছে। কয়েকজন জেলে নদীতে জাল ফেলেও মাছ পাচ্ছেন না।
আশিয়ান সিটি এভাবে রাজধানীর পূর্ব পাশে জলাধার ভরাট অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। রাজধানী পড়বে ঝুঁকির মুখে।
এদিকে অস্ত্রের জোরে অন্যের ভিটেমাটি দখলকারী আশিয়ান সিটির ক্যাডারদের হাত থেকে সংবাদকর্মীরাও রক্ষা পাচ্ছেন না।
সেখানে সব সময় ক্যাডার বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়। বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা তাদের হামলার শিকার হয়েছেন।
সোমবার বালু নদী ভরাটের সংবাদ সংগ্রহ ও চিত্র ধারণ করতে গেলে আশিয়ান সিটির সশস্ত্র ক্যাডাররা সাংবাদিকদের পিছু নেয়। ফলে সেখানে খুব বেশি সময় অবস্থান করা যায়নি।
চলতি মাসে রাতের আঁধারে দক্ষিণ খান এলাকায় ভবন ভেঙ্গে আশিয়ান সিটি জমি দখল করছে--এমন খবর পেয়ে বৈশাখী টিভির তিন সাংবাদিক সংবাদ কাভার করতে গেলে তাদের মারধর, ক্যামেরা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এক পর্যায়ে তাদের শরীরের ওপর দিয়ে বুলডোজার চালানোরও চেষ্টা করে তারা। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে তারা রক্ষা পান। পরে গুরুতর অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একই দিন জমি দখলের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রূপগঞ্জে আশিয়ান সিটির প্রকল্পের ক্যাডারদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। এর মধ্যে পায়ে ১৪টি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন আলাউদ্দিন।
আলাউদ্দিনের শেষ সম্বল পৈত্রিক ভিটে টুকু দখল করে নিয়েছে আশিয়ান সিটি।
এর আগে জোরপূর্বক জমি দখল ও জলাশয় ভরাট করার অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখানে আশকোনা এলাকায় আশিয়ান সিটির আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদফতর। সে সময় তাদের জরিমানাও করা হয়।
এদিকে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানি এবং অবৈধভাবে প্লট বিক্রির প্রমাণ পেয়ে আশিয়ান সিটিকে রিহ্যাব মেলা থেকে এবার বহিষ্কার করে রাজউক। তখন রাজউক সদস্য শেখ আবদুল মান্নান জানান, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রিহ্যাব সাধারণ সম্পাদক মুরাদ ইকবাল চৌধুরী জানান, আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে হাতেনাতে অবৈধ প্লট বিক্রির প্রমাণ পেয়ে আবাসন মেলা থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
মেলা চলাকালে আশিয়ান সিটির প্রতারণার শিকার তিন নারী প্রচারণাপত্র বিলি করছিল। ওই তিন নারীকে আশিয়ান সিটির কর্মকর্তারা জঙ্গি বানিয়ে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশে হস্তান্তর করে। সে সময় পুলিশ জানায়, ওই তিনজন নারী বিভিন্নভাবে আশিয়ান সিটির প্রতারণার শিকার। তাই তারা আশিয়ান সিটির নানা অপকর্ম নিয়ে মেলায় প্রচারপত্র বিলি করেন।
আশিয়ান সিটির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের থানায় পাঠায়।
অভিযোগ রয়েছে, আশিয়ান সিটি কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দীর্ঘ দিন ধরে আবাসন ব্যবসা করছে। এতে দিন দিন সাধারণ গ্রাহকরা নানা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তারা অন্যের জমি দখল করে বিক্রি করার তৎপরতাও দেখিয়েছে। এমনকি কবরস্থান দখল করার অভিযোগে তাদের নামে থানায় মামলা রয়েছে।
নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর পরামর্শ যে প্রতারণার কৌশলমাত্র--এমনটা আগে বুঝতে পারেননি সাধারণ গ্রাহকরা। তাঁরা আজ নাকে তেল দিয়েও ঘুমাতে পারছেন না। কারণ সারা জীবনের সঞ্চয় আর সহায়-সম্বলের বিনিময়ে এক চিলতে জমির মালিক হওয়ার যে স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন, তা ফিকে হয়ে গেছে। প্লট তো দূরের কথা, এখন জমার টাকাটা ফিরে পাওয়ার আশাও দুরাশায় পরিণত হতে চলেছে।
আশিয়ান সিটি তাদের নানা প্রলোভন বাক্য-বুলির ফুলঝুড়ির স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল, সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেই প্রতারক বলে অভিযুক্ত।
গ্রাহকরা প্লট না পেলেও হাওয়াই প্লট দেখিয়ে এরই মধ্যে আশিয়ান সিটি হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।