আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিঝুমদ্বীপে ৪০ হাজার হরিণ নিয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া নিঝুমদ্বীপের সীমিত বনাঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার হরিণের ভবিষ্যত নিয়ে সংশ্লি¬ষ্ট বিভাগ নির্বিকার। বিভিন্ন সূত্র ও স্থানীয় অধিবাসীদের তথ্য মতে নিঝুমদ্বীপে হরিণের সংখ্যা ৪০ সহস্রাধিক। খাদ্য ও অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে শত শত হরিণ। তেমনিভাবে ঝড় জলোচ্ছ্বাস ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে অগণিত হরিণ। অপরদিকে স্থানীয় এক শ্রেণীর অসাধু গোষ্ঠী হরিণ শিকার করছে।

এখানকার কতিপয় প্রভাবশালীর সহযোগিতায় নিঝুমদ্বীপ থেকে প্রতিনিয়ত হরিণ পাচার হবার অভিযোগও পাওয়া গেছে। চলি¬øশ সহস্রাধিক হরিণ ও বনাঞ্চল তত্ত্ব¡াবধানে বন বিভাগের হাতে গোণা যে কয়েকজন কর্মচারী রয়েছে-তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দেশের বনজ সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগ রয়েছে। কিন্তু নিঝুমদ্বীপের মূল্যবান হরিণ সম্পদ রক্ষা কল্পে উক্ত বিভাগটি এখনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। বিগত ২০১১ সালে নোয়াখালীর ডিএফও কর্তৃক সংশ্লি¬ষ্ট উর্ধ্বতন বিভাগে লিখিত এক চিঠিতে নিঝুমদ্বীপ থেকে কিছু হরিণ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে স্থানান্তর করার অনুরোধ জানান।

কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। তবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি নিঝুমদ্বীপে ব্যাপক বনায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে বলে নোয়াখালীর ডিএফও ছানা উল্যা পাটওয়ারী ইনকিলাবকে জানায়। নিঝুমদ্বীপের সীমিত বনাঞ্চলে নিয়ম অনুযায়ী মাত্র পাঁচ হাজার হরিণ বসবাসের উপযোগী হলেও এখন সেখানে কমপক্ষে ৪০ সহস্রাধিক হরিণ অবস্থান করছে। খাদ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত হরিনের দল বেঁধে লোকালয়ে প্রবেশ করে রবিশস্য সাবাড় করছে। আর এ সূযোগে ফাঁদ পেতে হরিন শিকার করছে কিছু অসাধু চক্র।

আবার প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের সময় শত শত হরিণে জোয়ারের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। উল্লে¬খ্য, ষাটের দশকে হাতিয়ার দ্বীপের জাহাজমারা ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিণ প্রান্তে মেঘনার বুক চিরে একটি চর জেগে ওঠে। সে সময় এর নাম ছিল ‘বালুয়ার চর’। এর চার বছর পর হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের কয়েকজন অধিবাসী চাষাবাদের জন্য বালুয়ার চর অর্থাৎ নিঝুমদ্বীপের গমন করেন। সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের সময় চরটিতে মাত্র একজন বেঁচে যান।

এরপর চরটির আয়তন বৃদ্ধি তৎসহ মাটির স্থায়িত্ব মজবুত হবার পাশাপাশি হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিঝুমদ্বীপের বসতি গড়ে তোলে। ১৯৭৩ সালের দিকে উক্ত চরে বনায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে দ্বীপটির আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি লোক সমাগমও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭৬ সালে বন বিভাগ থেকে দুই জোড়া হরিণ নিঝুমদ্বীপের বনাঞ্চলে ছাড়া হয়। এরপর হরিণের বংশ বৃদ্ধিতে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।

প্রতি বছর ৪/৫ হাজার হরিণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য, অপুষ্টির এবং শিকারীদের হাতে প্রতি বছর অন্তত ২/৩ হাজার হরিণ মারা যাচ্ছে। হাতিয়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে হরিণের মাংশ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে হরিণের গোশত পরিবেশন এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। রাজধানীর বিভিন্ন কর্মকর্তা কিংবা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে উপঢৌকন হিসেবে হরিণের মাংস প্রেরণ এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রলার এ পথ দিয়ে চলাচল করে থাকে। এদের মধ্যে বেশ কিছু ট্রলার মাছ ধরার নামে হরিণ পাচার করছে। বিশেষ করে ঢাকাও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে পাচার হচ্ছে হরিণ। একাজে একটি চোরাচালানী চক্র দীর্ঘদিন ধরে তৎপর রয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় হাতিয়া নিঝুমদ্বীপের বিপুল হরিণ সম্পদ রক্ষা করা এখন প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

শত শত কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ হরিণ অযতœ, অবহেলা ও শিকারীদের কবল থেকে রক্ষাকল্পে বন বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে হাতিয়ার অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।