আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমিতা রানীর মুক্তি যুদ্ধ।

i m lost দু:খ=প্রত্যাশা-প্রাপ্তি মানুষের অভাব সীমাহীন। এই সীমাহীন অভাবের অতৃপ্ত পরিনতিকে আমরা দু:খ বলে থাকি। মানুষের এই ছোট্ট জীবন পরিসরে হয়তো সকল চাহিদা পূরন সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আমাদের মধ্যে যে যত বেশি অল্পতে সন্তুষ্টি লাভ করে সে তত সুখী মানুষ। কিন্তু যার প্রত্যাশা দু’বেলা ভাত তাও কিংবা মাছ বা গোশত দিয়ে নয় তার কেন এত দু:খ?? আমি সমিতা রানীর কথা বলছি।

৭৫বছর বয়সেও যার চোখের পানিগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। আজ থেকে ৭৫বছর আগে সমিতা রানী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বরইতলী গ্রামের এক হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। দরিদ্র একটি পরিবারে জন্ম নেয়াই যার একমাত্র অপরাধ। দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত সমিতা রানী স্কুলের মুখ দেখেন নি কখনো। বাবা সমিতারানীকে এক হিন্দু পরিবারে বিয়ে দেন।

সেখানে জন্ম নেয় দু’টি কন্যা সন্তান। ২য় কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার ২য় বছরে সমিতা রানী টিভি রোগে আক্রান্ত হন। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন সমিতাকে চিকিৎসা না করিয়ে ধুকে ধুকে মারছিলো। পিতা আর কত ধৈর্য ধরবেন?মরলে অভাগিনী আমার সামনেই মরুক। বাবা সমিতাকে কাঁধে করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সমিতার ২য় পর্বের দু:খের শুরু মাত্র। কয়েকদিনের মধ্যে মারা গেলেন সমিতার বাবা। সমিতা রানীর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসলেন কিছু মুসলিম ও হিন্দু যুবক। তারা চাঁদা তুলে সমিতা রানীর ইনসুলিনের টাকা যোগাড় করলেন। সমিতা রানীকে বাছিয়ে তুললেন এই যুবকেরা।

এবার সমিতা রানীর ৩য় পর্বের দু:খের শুরু। আগে ছিল মুখ একটা এখন তিনটা মুখ। সারাদিন কাজ করে যে মজুরি পেতেন তাতে খাদ্য জুটত শুধু একটি মুখের। বাঁচাতেতো হবে আরও দু’টি প্রানকে তাই রাতরে অন্যর ধানী জমি পরিষ্কার করার জন্য বেরিয়ে পড়েন সমিতা রানী। ছোট মেয়েটিকে খড়ের উপর শুয়ে রেখে অবিরাম গতিতে কাজ করে চলেন সমিতা রানী।

এভাবে বড় হয় সমিতা রানীর মেয়ে দু’টি। মেয়ে দু’টির বিয়ে দিয়ে সমিতা রানী একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলবেন কিন্তু বিধি বাম। যৌতুকের জন্য ২য় মেয়েকে তার জামাই বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। নি:স্ব সমিতার য়ৌতুক দেয়ারমত আর কোন সম্বল নেই। সমিতা রানীর ২য় কন্যার জামাই এখন আরেকটি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত।

আজ সমিতা রানীর দু’চোখ যেন দু’টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। যেখান থেকে অবিরাম গতিতে পানি প্রবাহ চলছেই। আমার আব্বু সরকার থেকে বয়স্ক ভাতা পেতে (৯০০টাকা ৬মাস পরপর)সহযোগিতা করেছিলেন সে থেকে সে মনে করে পৃথিবীতে আমরাই তার সবচেয়ে আপন মানুষ। তাই সে তার ঝর্ণার পানিগুলো আমাদের আঙ্গিনায় এসে ফেলে। আমার আম্মু সমিতার দু:খগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন,তার হাতে তুলে দেন ২টি বিস্কুট আর এতেই সমিতা রানী পুরু এলেকায় বলে বেড়ান আম্মুর মত ভাল মানুষ ২য়টি নাকি পৃথিবীতে নেই।

সমিতা রানীর দিনটিই শুরু হয় সেই যুবকদের অভিশাপ দিয়ে যারা সেইদিন তাকে বাচিয়েছিল। সমিতা রানীর যুক্তি সেই যুবকরা তাকে সেইদিন না বাচালে এত দু:খ তার সইতে হত না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.