আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরল চাচার সরল বয়ান

হরবোলা এইতো সেদিন ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছিলাম। গোড়ান বনশ্রী। মতিঝিলে নামলাম বন্ধু পলাশের অফিসে যাব বলে। সিএনজি থামাতে দেখি করিম চাচা। বাবার বাল্য বন্ধু।

আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন। ৩ বছর আগে দেখা হয়েছিল। কানাডা যাওয়ার আগে। চাচার গায়ের কাপড় গুলো নোংরা। চেহারা মলিন।

দেখে মায়া হল। চাচা কেমন আছেন জিজ্ঞেস করাতে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বাবারে ভাল নেই। কি হয়েছে চাচা? মতিঝিলের কি যেন মার্কেটটা শেষ কইরা দিছে আমারে। আমিতো হতভম্ব।

গ্রামের সহজ সরল কৃষককে মতিঝিলের মার্কেট ক্যামনে শেষ করে!! করিম চাচা লেখা-পড়া জানেনা। মাঠে কাজ করেন। জীবনে ঢাকা এসেছেন দুইবার। একবার ছেলে নান্নুর মালয়েশিয়া যাওয়ার সময়। আর এবার।

প্রথম ঢাকা ফেরৎ গিয়ে তিনি গ্রামে খুব গল্প করেছিলেন। তিনি সবাইকে বলে বেড়াতেন “আমি যেদিন ঢাকা গেছি সেদিন ঢাকাতে হাট মিলেছে। ” খাঁটি গ্রামের লোক তিনি। মানুষ তার কথায় হাসতেন। আর তিনি রাগতেন।

ঢাকা এসেছেন কেন চাচা? ধরা গলায় বললেন, “বৌটা আমার সর্বনাশ করেছে”। আমি আঁৎকে উঠলাম। কি হয়েছে চাচা। নান্নুর সব টাকা তার শালা শেষ কইরা দিছে। আহহা চাচা! খোলাসা কইরা বলেন।

ছেলের বউটা রক্ত পানি করা সব টাকা তার ভাইয়ের হাতে তুলে দিছে। সে নাকী শেমার যেন কি মার্কেটে লাগাইছে। এহন টাকাও নাই ছেলেটার খোঁজও নাই। নান্নুতো সব হারাইল। বউটারও কপাল পুড়ল।

বাপরে আমি অহন কি করি। এমন আহাজারি শুধু করিম চাচার নয়। অনেকের। ভাইয়ের মালয়েশিয়ার টাকা, বোনের গয়না বিক্রির টাকা, বাবার জমি বিক্রির টাকা, মায়ের জমানো টাকা, শ্বশুর বাড়ীর যৌতুকের টাকা, মুদি দোকান বিক্রির টাকা, দাদার ও দিদার সঞ্চয়পত্রের টাকা, জাপানি স্কলারশিপের টাকা, ব্যাংক লোনের টাকা.........ইত্যাদি, ইত্যাদি নিয়ে কলেজের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ব্যাংকার, নতুন জামাই, মুদি দোকানদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সবাই মতিঝিলের যাদুর মার্কেটে এসেছিলেন। তাদেরকে কলা ও মূলা দেখিয়ে মার্কেটে এনেছিলেন দরবেশ বাবা ও ফালুদারা।

সবাই মিইল্লা ঠেইল্লা মার্কেটটারে ব্ল্যাক হোলে দিছে ফেইল্লা। শেখের বেটি অনেক চেষ্টা করছে, খড়কুঁটা ও তেনা দিয়ে ব্ল্যাক হোলটা বন্ধ করতে। পারলনা। মা-জননি আপনি পারবেননা। আপনার বাবাও সবাইকে বিশ্বাস করি ঠকছে।

আপনিও তাই। শুনুন, রসুন কোয়া কোয়া পাছা এক জায়গায়। দরবেশ বাবা ও ফালুদারাও তাই। মা-জননি, ব্ল্যাক হোলতো দেখা যায় না। আমাদের লস্কর হাট কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আধ্যাপক মূলকুত মিয়া কইল ব্ল্যাক হোলে আলো পড়লেও তা আর ফিরে আসেনা।

আর যে হোল দেখা যায় না, সেটা বন্ধ করবেন ক্যামনে। মাগো, পুরা জাতিটাকে ঝিমুনী ব্যারামে ধরছে। নান্নুর শালা এখন ঝিমায় ঢাকা কলেজের পিছনে, হাতে ফেন্সিডিলের বোতল। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক নাই। বোন ভাইকে ভুলে গেছে।

বাপ ছেলেকে ত্যাজ্য করেছে। নতুন বউয়ের তালাক হইছে। ব্যাংকার ঘুমায় কাউন্টারে। ক্লায়েন্ট দাঁড়িয়ে থাকে কিউতে। বুয়েটের মিজান তাবলীগে গেছে।

ঢাবির কামরুল ডেসটিনিতে নাম লিখিয়েছে। সহকারী আধ্যাপক কেরামত আলী ল্যাপটপে মাথা রেখে ঘুমাইতেছে। ঘুম ভাঙ্গিলে ছাত্রকে জিজ্ঞেস করে আজিজ পাইপের দাম কতরে হারুন? জননি, এদের সবার নিজ নিজ কাজ ছিল। প্রত্যেকে নিজ কাজ ফেলিয়া আঙ্গুল ফুলিয়া কলা গাছ হইবার বাসনায় যাদুর মার্কেটে জুয়া খেলিতে গিয়া লুঙ্গি হারাইয়াছে। এখন মতিঝিলের রাস্তায় রোযা রাখেন।

ইহার একদিন আপনার গদি ধরিয়া টান দিবেন। আর ফালুদা ও দরবেশ বাবারা ইহাদের কাতারে ভিড়িয়া যাইবেন। চলবে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।