আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা?

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। View this link সমাধান কি? আপনারা কি লক্ষ্য করেন নি যে, এভাবে একজন মুসলমান তো নিজের সন্দেহতেই নিমজ্জিত থাকবে আর যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের মো’তামিদ আলাইহের সাথে রুজু করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক কর্ম থেকে অজ্ঞই থাকবে এবং জানতেই পারবে না যে, আল্লাহর সঠিক হুকুমটি কি আর কোনটি ভুল? এই উদাহরণটি আমি আপনাদের সম্মুখে কোরআনে মজিদ থেকে উপস্থাপন করব যাতে আপনাদের জানা হয়ে যায় যে, আহলে সুন্নাতের ওলামাগণের মাঝে ঐ সমস্ত বিষয়াবলীতে কি পরিমাণে মত-বিরোধ বিদ্যমান যেগুলিকে নবী (সা.) এক দিনে কয়েকবার আঞ্জাম দিতেন এবং তেইশটি বছর পর্যন্ত উহার উপর আমল করেছিলেন। পার্থক্য এতোটুকু যে, নবী (সা.)-এর সাহাবা কোরআনের বিশেষ ও সাধারণ বিষয়াবলী জানতেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের ওলামাগণ যখন আলোচ্য আয়াতটি তিলাওয়াত করেন তখন কেউ কেউ ‘জবর’ সহকারে পাঠ করেন আবার কেউ কেউ ‘মাজরুর’ পাঠ করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন আহ্কাম প্রস্তুত করেন।

আল্লাহর কিতাবের তাফসীর এবং কয়েকটি আয়াত অনুসারে আহ্কাম প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ওলামাদের মাঝে কঠিন মত-বিরোধ আছে, কথাটি সত্য সন্ধানীদের কাছে লুকায়িত নয়। আর যখন আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারেই তাদের মাঝে মত-বিরোধ বিদ্যমান তখন নবী (সা.)-এর সুন্নাতের ক্ষেত্রে আরো অধিক মত-বিরোধ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমাধান কি? আপনি যদি এই কথা বলেন যে, এমন ব্যক্তির দিকে রুজু করা ওয়াজিব, যে কোরআন ও সুন্নাত থেকে সহীহ্ আহ্কাম বয়ান করে, তাহলে আমি আপনার কাছে এমন ব্যক্তির জন্য দাবী জানাব যে হবে বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন বক্তা। কারণ কোরআন ও সুন্নাত গোমরাহী থেকে রক্ষা করতে পারে না। কেননা উভয়েই হল সামিত (নির্বাক) কিছুই বলতে পারে না, আবার উভয়ই কয়েকটি কারণের উপর নির্ভরশীল, যেমন আমি ওজুর আয়াতের ক্ষেত্রে বয়ান করেছি।

সুধী পাঠক মন্ডলী! নিশ্চয়ই এই কথার প্রতি আমরা ঐক্যমত আছি যে, কোরআন ও সুন্নাতের বাস্তবতা থেকে অবগত ওলামার তাকলীদ করা ওয়াজিব। থাকলো এমন ওলামার মারেফাতের (পরিচয়ের) মাসয়ালা যারা কোরআন ও সুন্নাতের বাস্তবতা থেকে অবগত আছেন। আপনি যদি এমন কথা বলেন যে, উম্মতের সকল ওলামা আর তাদের পূর্ববর্তী নেতৃবৃন্দ সাহাবাগণ কোরআন ও সুন্নাতের বাস্তবতা থেকে অবগত ছিলেন তাহলে তাদের মত-বিরোধকে তো আমরা ওজুর আয়াতের ক্ষেত্রে বয়ান করেছিই। তা’ছাড়া তারা একে অপরকে হত্যাও করেছেন, একে অপরকে কাফেরও বলেছেন। সুতরাং তাদের প্রতি আস্থা পোষণ করা যেতে পারে না।

তবে হ্যাঁ, তাদের মধ্যেকার হকপন্থীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা সঠিক হবে। বাতিলপন্থীদের উপর আস্থা স্থাপন করা সঠিক নয়। তারপরও সমস্যার সমাধান হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি চার ইমামের দিকে রুজু করতে চান তাহলে তাদের মধ্যেকার মত-বিরোধও আপনার কাছে গোপন নয়। তাদের মধ্যেকার একজন বলে যে, নামাজের মধ্যে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা মাকরুহ।

দ্বিতীয় জন ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া নামাজকে বাতিল ঘোষণা করে। আবার আপনারা তো জানেনই যে, এই মাযহাবগুলি জালিম শাসকদের কর্তৃক আবিস্কৃত এবং এই মাযহাবগুলি রিসালাতের যুগের অনেক পরে অস্তিত্ব লাভ করেছে। তাদেরকে তো সাহাবাগণও জানতেন না, তাহলে নবী (সা.) জানবেন কেমন করে? এখন আমাদের সম্মুখে একটিই সমাধান অবশিষ্ট থাকে আর তা হলো সেই পবিত্র ইমামগণের দিকে রুজু করা যাদের থেকে আল্লাহ পাক রিজস্ (তথা সবধরণের কলুশ-কালিমা) দূরে রেখেছেন এবং পবিত্রতার হক অনুযায়ী তাঁদেরকে পুতঃপবিত্র রেখেছেন। তাঁরাই হলেন আলিম ও আমলকারী। তাঁদের জ্ঞান ও সংযমশীলতা এবং সংরক্ষণ ও তাকওয়াহ্ পর্যন্ত কেউ পৌঁছাতে পারে না।

তাঁরা কোরআনের বক্তব্য (ইন্নামা ইউরিদুল্লাহু লিইউয্হিবা আন’্কুমুর রিজ্সা আহলাল বাইতি ওয়া ইউতাহ্হিরাকুম তাত্হীরা) এবং নবী (সা.)-এর হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে সকল ধরণের দোষ-ত্রুটি ও মিথ্যা হতে মাসুম। নবী (সা.)-এর কাওল হচ্ছে “কিতাবুল্লাহি ওয়া ইতরাতী ইন তামাসাক্তুম বিহিমা লান তাদিল্লু বা’দী আবাদা”- সুতরাং আল্লাহর কিতাব যেভাবে সকল ত্রুটি থেকে মাসুম, সেভাবেই পবিত্র ইতরাতও মাসুম। কেননা গায়ের মাসুম হিদায়েত করতে পারে না, তার দ্বারা ত্রুটি হতেই পারে সে নিজেই হিদায়েতের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে নির্বাচিত করে কিতাবের জ্ঞানের ওয়ারেশ বানিয়েছেন। রাসুল (সা.) তাঁদেরকে সেই সকল বিষয়াবলীর জ্ঞান দান করেছে যেগুলি মানুষের প্রয়োজন হতে পারে এবং রাসুল (সা.) তাঁদের দিকেই উম্মতকে এভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন: “আমার আহলে বাইতের উদাহারণ হল নূহের কিশ্তির মত যে উহার উপর আরোহন করল সে নাজাত পেল আর যে প্রত্যাখ্যান করল সে ধ্বংস হল”।

আহলে সুন্নাতের ওলামাগণের মধ্যে ইবনে হাজর উক্ত হাদীসের ব্যখ্যা লিখে সেটিকে সহীহ্ ঘোষণা দেয়ার পর লিখেছেন যে, “আহলে বাইতকে কিশ্তির সাথ তুলনা করার কারণ হল এই যে, যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসল এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করে নিল এবং তাদের মহত্বের শুকরিয়া আদায় করল এবং যে ব্যক্তি তাঁদের বলে দেয়া পন্থানুযায়ী আমল করল সে গোমরাহী থেকে রক্ষা পেল। আর যে ব্যক্তি তাঁদেরকে প্রত্যাখ্যান করল সে কুফুর ও গোমরাহীর সমুদ্রে নিমজ্জিত হল এবং জলোচ্ছাসে ভেসে গেল”। আরো একটি কথা আমি এখানে সংযুক্ত করতে চাই যে, সাহাবাদের যুগ থেকে আরম্ভ করে অদ্যাবধি ইসলামী মিল্লাতের পূর্ববর্তী ও বর্তমান আলিমদের মধ্যে আপনি এমন একজনও পাবেন না, যে নিজের ব্যাপারে এমন দাবী করেছে যে আমি নবী (সা.)-এর ইতরাতের মধ্যেকার ইমামগণের চেয়ে উত্তম ও মহা জ্ঞানী। অনুরূপভাবে, পুরো উম্মতের মাঝে আপনি এমন একজনও পাবেন না, যে এমন দাবী করেছে যে সে আহলে বাইতের মধ্যেকার কাউকে জ্ঞান দান করেছে অথবা কোন বিষয়ের প্রতি তাঁদেরকে পথ নির্দেশনা দিয়েছে। সুধী পাঠকমন্ডলী, আরো বিস্তারিত জানার জন্য “আল-মোরাজায়াত” এবং “আল-গাদীর” নামক বই দু’টি অধ্যয়ন করুন।

ন্যায়পন্থী মানুষের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যতটুকু আমি উপস্থাপন করেছি। অতএব “তারাকতু ফিকুম কিতাবুল্লাহি ওয়া ইতরাতী” হাদীসটিই সত্য। ইহাকে বিবেক-বুদ্ধিও কবুল করে এবং কোরআন ও সুন্নাত থেকেও ইহা প্রমানিত ও প্রতিষ্ঠিত। এই সমস্ত বিষয়াবলীর পাশাপাশি আবারো আমাদের জন্য স্পষ্ট দলিলাদি দ্বারা এই কথা প্রকাশিত হয়ে যায় যে, বাস্তবে আহলে বাইতের অনুসারীগণই হলেন ‘আহলে সুন্নাত’। যেহেতু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতগণ নিজেদের সরদারদের এবং গুরুচণ্টালদের আনুগত্য করেছেন আর তারা তাদেরকে গোমরাহ করে দিয়েছে এবং তাদেরকে অন্ধকারে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে এবং কুফুরের নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে এবং জলোচ্ছাসের মধ্যে ঠেলে দিয়ে হালাক করে দিয়েছে, যেমনটি ইবনে হাজর শাফেয়ী বলেছেন।

“ওয়াল হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন আ’লা হিদাইয়াতিহি লিইবাদিহিল মুখলেছীন” ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।