সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............ পথে প্রান্তরে-৬
জুরাং বার্ড পার্কঃ
ব্যাবসায়ীক কাজে সিংগাপুর এসেছি ৪ দিন হয়ে গেলো। এখানে আসার কারন হলো-একটি ত্রিপক্ষীয়/ত্রিদেশীয় প্রাইভেট বানিজ্যিক আলোচনা এবং চুক্তি সম্পাদন। সিংগাপুর প্রতিনিধি Chan Leong এখানেই আছেন। চায়নার বেজিং থেকে আসবেন ডেনিয়েল শী। সমস্যা হয়েছে ডেনিয়েল’র আসা নিয়ে।
গত কয়েকদিন যাবত বেজিং এর আকাশ ধুলো এবং অস্বাভাবিক কুয়াশার কারনে সব ধরনের ফ্লাইট ক্যান্সেল। এমনিতেই বেজিং এর আকাশ ধোঁয়াশে-তার উপর ভয়ংকর কুয়াশায় পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর ধারন করেছে। ফলে গত দুইদিনে বেজিং এয়ারপোর্ট কর্তিপক্ষ পাঁচশটির বেশী ফ্লাইট ক্যান্সেল করতে বাধ্য হয়। ডেনিয়েল পরেছে সেই কূয়াশার ফাঁদে।
সিংগাপুর আমার কাছে ঢাকারমত নিজের করে চেনা জানা সিটি(সিংগাপুর সিটি মানেই সিংগাপুর দেশ)।
অসংখ্যবার এখানে এসেছি। এখানে দেখার, বেড়ানোর অবশিস্ট নেই কিছুই। আমি সারাদিন হোটেলে কাটাই। সিংগাপুরের মানুষ খুব ব্যাস্ত। ওদের কর্মচঞ্চলতা ঘড়ির কাটাকে হার মানায়।
Chan Leong আমাকে রাত ৮ টার আগে সময় দিতে পারেনা। যদিও ওর অফিসের দড়জা আমার জন্য সর্বক্ষণ খোলা। কিন্তু কতক্ষণ, কতবার, কতদিনইবা অন্যের অফিসেযেয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে! Chan Leong এর প্রটোকল অফিসার/সেক্রেটারী Ms Junmei Yao প্রতি দিনই লাঞ্চ/ডিনার টাইম ছাড়াও আমাকে বেড়াতে,রাতে ক্লাবে নিয়ে যেতে আসে-কিন্তু আমি এঞ্জয় করিনা। একাকীত্ব আমার ভাল লাগে।
এক ঘেয়েমী কাটাতে একদিন যাই সিংগাপুরের বিখ্যাত জু্রাং বার্ড পার্ক।
এখানেও আমি অসংখ্যবার বেড়িয়েছি। এখানকার অনেক স্টাফও আমার পরিচিত। একাকী ঘুড়ছি। মনোরেল থেকে নেমে একটা সাইন বোর্ডের দিকে চোখ আটকে গেল। ইংরেজী ভাষা ছারাও বাংলায় লেখা-“পাখিদের কোনো খাবার দেবেননা।
বিরক্ত করবেননা, আঘাত করবেননা-এদের প্রতি সদয় হোন"”। বাংলায় লেখা এই সাইনবোর্ডটা আগে দেখেছি মনে পরেনা। এক বাংলাদেশী স্টাফ জানালেন-স্যার, শুধু মাত্র বাংলাদেশীরাই নিষেধ সত্বেও পাখিদের খাবার দেয়, খোঁচায়-তাই বাংলায় এই সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে”!
আঁকাবাকা সিড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাড়ালাম। চারিদিকে নানান বর্নের নানান জাতের পাখিদের কোলাহল। এখানে আমার একটি পূর্ব স্মৃতি আছে।
২০০৩/২০০৪ সনে আমি আর আলী হোসেন ভাই(সিংগাপুর প্রবাসী)এখানে বসে গল্প করছিলাম। পাশেই ভিন্নতর পাখির কলরব শুনে এগিয়ে দেখি-ওরা পাখি নয়, দুই তরুনী নিজেদের ভাষায় কথা বলছে। ওদের সুন্দর কন্ঠস্বর/ভাষা বোঝার জন্যই বেহায়ারমত ওদের পিছন ফিরে একটা বেঞ্চীতে বসে কান পাতি। আমি বেশ কিছু চায়নীজ, হংকং, মালয়য়ান(মানে নাক বোঁচাদের ভাষা) ভাষা বুঝি কিন্তু এই দুই মেয়ের কোনো কথাই আমি বুঝতে পারছিনা। ওদের কথা একেবারেই পাখির ডাকের মত!
আমি কৌতুহলী হয়ে তরুনীদের বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করি-তোমরা কোন ভাষায় কথা বলছো?
কিছুটা বিরক্ত হয়েই পালটা প্রশ্ন করে-কেন জানতে চাও?
আমি বললাম-তোমরা দুজনেই খুব সুন্দর,তোমাদের কন্ঠস্বর মিস্টি, ভাষাটাও সুন্দর- তাই তোমাদের ভাষার নাম জানতে চাচ্ছি।
একটি মেয়ে হেসে জবাব দিল-আমরা 'ক্যান্টনিজ' ভাষায় কথা বলছি, এটা আমাদের মাতৃভাষা। আমি জানি ক্যান্টনীজ তাইওয়ানের রাস্ট্রীয় ভাষা। সিংগাপুরে চীনারা নিজেদের মধ্যে প্রধানত ম্যান্ডারিন, ২য়ত হুক্কিয়ান ভাষায় কথা বলে। জানলাম ওরা তাইওয়ান থেকে সিংগাপুর এসেছে বেড়াতে।
আমি বলি-তোমাদের ভাষা, কন্ঠস্বর খুব সুন্দর, পাখিদের মত।
জানাই-আমি বাংলাদেশী, আমার ভাষা বাংলা।
ইংরেজী কম বোঝে-ওরা হাসে!
সৃস্টিকর্তা বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ভাষা দিয়েছেন। পাখিদের ভাষাও কি ভিন্ন......
আমাদের পাশেই একজোড়া চড়ুই ধুমাইয়া প্রেম(?) করছে। তরুণী দুজন দেখে কিচির মিচির করে কিসব বলছে...আর হেসে লুটিয়ে পরছে! আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। আমার অস্বস্তি দেখে চড়ুই দম্পতি লজ্জা পেয়ে কিম্বা রাগ করে দূরে উড়েযায়।
পৃথিবীতে মানুষের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা,কৃস্টি ও সংস্কৃতি। পাখিদেরও নিজিস্ব ভাষা আছে। বিভিন্ন প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা কিনা জানিনা, তবে অবশ্যই ব্যাকরণ থাকার সম্ভাবনা যুক্তি সম্মত। মানুষের ভাষার বর্ণমালা আছে-পাখিদের কোনো বর্ণমালা আছে কিনা তা পাখিরাই জানে। পাখিরাও অন্যসব প্রানীদেরমত, মানুষেরমত প্রজণন কৃয়ায় বংশ বৃদ্ধি করে।
কিন্তু একজাতের পাখি সাধারনত অন্যজাতের পাখিদের সাথে সেক্স করেনা। আমার জানার খুব কৌতুহল-মানুষের মধ্যে যেমন লুচ্চা,বদমাইশ, পরিমল জয়ধর টাইপের ধর্ষক আছে? ওদের মধ্যেও কি রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির জন্য পাখিলীগ, পাখিদল, পাখি ইউনিয়ন কিম্বা পাখি শিবির আছে? আমার বিশ্বাস কোনো লীগ-দল-শিবির না থাকলেও অবশ্যই পাখি ইউনিয়ন আছে।
বিশ্ববিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ডঃ সালিমাত আলীর একটি বইতে পড়েছিলাম- পাখির মধ্যেও লুচ্চা স্বভাবের কিছু পাখি আছে। কিছু পাখিরা য়্যুরোপ আমেরিকান সেক্স কালচারে অভ্যস্থ। অর্থাৎ কিছু পাখির ফ্রী সেক্স স্বভাব আছে, আছে একাধিক গার্লস ফ্রেন্ড-এমনকি একাধিক ‘কেপ্ট’(রক্ষিতা) রাখে আফ্রিকান, এরাবিয়ান রাজা বাদশাদেরমত! আবার কিছু পাখিদের স্বভাব একেবারেই তালেবানী স্বভাবের-অর্থাত প্রচন্ড রক্ষণশীল।
বাবুই পাখিরা নাকি খুব স্বামী ভক্ত হয়। লুচ্চা/লুল স্বভাব আছে তেমনই একটি পাখির নাম- Barred Button Quail, বৈজ্ঞানিক নাম Turnix suscitator, বাংলা নাম নাগরবাইট। এদের মা-পাখি স্বভাবে বহুগামী, সামুর পরিভাষায় "লেডি লুল"”। কিন্তু মানুষের এই বিষয়ে বাছবিচার নেই বললেই চলে। এরা সব ধরনের মানব জাতিতো বটেই পশুদের সাথেও সেক্স করে।
জানিনা “আশরাফুল মখলুকাত”-সৃ্স্টির সেরা জীব বলেই আমাদের এই বজ্জাতী আধিপত্য/অধিকার কিনা!
ডঃ সালিম’র সেই বইতেই পড়েছিলাম-যখন শত শত পাখি কোনো স্থানে একসাথে নিরবে বসে থাকে তখন বুঝতে হবে-ওদের স্বজনের "স্বাভাবিক “মহাপ্রয়াণ"” হয়েছে। যদি পাখিদের কারো অপমৃত্যু হয়,মানে-লোভী শিকারির শিকার, ক্ষমতা লিপ্সু জান্তার ব্রাশ ফায়ার, মানুষরুপী আজ্রাইলের ক্রস ফায়ার, এনকাউন্টার কিম্বা ইলেক্ট্রিক শকে হয় তাহলে পাখিরা অনেকক্ষণ চেচামেচি করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ।
"যার যে স্বভাব, তার তা"-ফিরে যাই জুরাং বার্ড পার্কে।
প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এই পার্কটি খুব ভাল লাগবে।
চারিদিকে ছোট ছোট উচু নিচু পাহাড়-পাহাড়ে দাড়ালেই দেখবেন সমুদ্র। অজস্র গাছপালা আর পুরো এলাকাটা জুড়েই মাথার অনেক উপড়ে স্টিল নেট, যাতে পাখিরা উড়ে যেতে নাপারে। পাখিরা উড়ে বেড়ায় এই নির্দিস্ট কিন্তু বিশাল এলাকায়। প্রতিটি গাছেই আছে পাখির বাসা,পাখিদের খাবারের স্থান। সব পাখিদের পরিচর্যাকারী বাংলাদেশী শিক্ষিত মার্জিত তরুণেরা।
এখানে উত্তর মেরুর পেংগুইন পাখি থেকে শুরু করে মরুভূমির আবাবিল পাখিসহ ১১ হাজার প্রজাতির কয়েক লক্ষ পাখি আছে। পেংগুইন পাখিদের জন্য মাইনাস ১০ ডিগ্রি তাপমানের বিরাট কাঁচ ঘেরা একটি বাসস্থান করা হয়েছে। সেখানেই বরফের উপড় কিম্বা হীম শীতল পানিতে পেংগুইন খেলা করে। পেংগুইন পাখিগুলো যথারিতী মুজিব কোট পরা!
ছুটির দিনে প্রচন্ড ভীড় হয়। তখন পার্কের পাখিদের লাইভ শো হয়।
গ্যালারীতে একসংগে হাজার দেড়েক দর্শক বসে প্রতিটা শো দেখতে পারে। প্রশিক্ষিত পাখিরা নানান খেলা দেখায়, কথা বলে। প্রশিক্ষক যা করতে বলে-একান্ত অনূগত হয়ে পাখিরা তাই করে, তাই বলে! কিছু কিছু পাখি একেবারেই মানুষেরমত ম্যান্ডারিন, জাপানীজ, ইংলিশ, ফ্রেঞ্জ ভাষায় মাইক্রোফোনের সামনে গান গায়, প্রশ্নের উত্তর দেয়!
পাঠক, আপনারা অনেকেই সিংগাপুর গিয়ে জু্রাং বার্ড পার্ক দেখেছেন, যারা দেখেননি তাঁরা সময় করে দেখবেন-হয়ত আমারমত ইচ্ছে হবে অন্তত কিছু সময়ের জন্য নিজেকে পাখি ভাবতে।
গুভ কামনা
(একটু ফান করার জন্য কিছু শব্দ ব্যাবহার করেছি-আশা করি কেউ ভুল ব্যাখ্যা করবেননা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।