আইইএলটিএস করতে গিয়ে মিতার সাথে পরিচয় হয় ফরহাদের। আরেকটু চেনা জানা হলে দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেল। ফরহাদ বিভিন্ন সময় মিতার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিলেও, মিতা কখনো তাকে অবিশ্বাস করে নি। যখন যত টাকা লেগেছে, দিয়েছে। এদিকে মিতার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হলে, সব কথা ফরহাদকে জানায় ও।
কিন্তু বেঁকে বসে ফরহাদ। তার পক্ষে নাকি পরিবারের অমতে মিতাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না মিতা। নিজের কৌতুহলে খোঁজখবর নিয়ে ও জানতে পারল, ফরহাদ অনেক আগে থেকেই মাদকাসক্ত ছিল। মিতা ছাড়াও আরো অনেক মেয়ের সাথে শুধু মাত্র টাকার জন্য সে প্রেমের ভান করে বেড়ায়।
এর পরে ফরহাদের সাথে সম্পর্ক চালানো সম্ভব হয় না ওর। কিন্তু তাই বলে, মিতা এতটা সংকীর্ণও না যে টাকাগুলো ফেরত চাইবে। সেই থেকে মিতা একাই চলছে। অনেক দিন একা থেকে থেকে অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় নিজের মুক্ত জীবনের সাথে আরেকজনকে আজকাল জড়াতেও ইচ্ছে করে না মিতার। এদিকে তথাকথিত বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় তাকে শুনতে হয় আইবুড়ো খোঁটা।
বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবার পরে নানা কারণে অবিবাহিত নারীদের প্রতি নিয়ত বিড়ম্বনার সম্মুখিন হতে হয়। বিয়ের বয়স বলতে আমরা সাধারণত নারীদের গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত সময়কেই বুঝিয়ে থাকি। যেন নারী কেবলই সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র!পুরুষদের বেলায় বিয়ের জন্য কোন বয়সকে আমরা আমলে নেই না। তাই পুরুষেরা নির্বিঘ্নে তাদের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। অথচ, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে বেশি বয়সী বাবাদের সন্তান কম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হয়ে থাকে।
তবু এই সমাজ নারীদের দিকেই আঙ্গুল তাক রাখে সব সময় কথা শোনাবার জন্য। নিজের ক্যারিয়ার বা উচ্চ শিক্ষায় সময় দিতে গেলে পেরিয়ে যায় বিয়ের বয়স। সংকীর্ণ মানসিকতার লোকেরা সব সময় নানা রকম প্রশ্নবাণে তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, তুমি এখনো অবিবাহিতা। মেয়েটির এত সফলতার কোন মূল্যই যেন নেই বিয়ে না হলে। পরিবার, আত্নীয় স্বজনেরা তার দিকে ছুঁড়ে দেয় রূঢ় মন্তব্য।
কখনো কখনো নিষ্ঠুর কৌতুক। এর ফলে নারীর মধ্যে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাবগুলো দেখা যায়। যেমনঃ বিষন্নতা, হীনমন্নতা,আত্নীয় স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রবনতা ইত্যাদি। নারীর নিজের পরিবারও তাকে একটি বাড়তি ঝামেলা হিসেবেই দেখে। তাই অনেককে দেখা যায়, পরিবারের সিদ্ধান্তের কারণে অপছন্দের পাত্রকে বিয়ে করে ফেলে চিরকাল একটি অসুখি জীবন যাপন করতে।
বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলে, পছন্দ নয় এমন কাউকে কখনোই বিয়ে করে ফেলবেন না। আর এই অবিবাহিত অবস্থার সময়টিকে নিয়ে হতাশায় না ভুগে বরং এটিকে সুন্দরভাবে কাজে লাগান। যেমনঃ
রান্না, নতুন কোন ভাষা, মেডিটেশন, ইকেবোনা, সাঁতার, ফটোগ্রাফি, আবৃত্তি বা আপনার পছন্দের যে কোন বিষয়ের উপর কোর্স করে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলুন।
বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
নতুন নতুন মানুষজনের সাথে মিশে আপনার বন্ধু বলয়ের পরিধি বাড়িয়ে তুলুন।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশী বিদেশী বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়ে সুন্দর সময় কাটাতে পারেন। ভিন্ন দেশের মানুষের সাথে মিশে যেমন তাদের বৈচিত্রময় জীবনের কথা জানতে পারবেন, তেমনি নিজের দেশ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথাও অন্যদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন।
পত্রপত্রিকা বা ব্লগে লেখালেখি করে নিজের ভাবনাগুলোর প্রকাশ ঘটাতে পারেন।
কোন প্রাণী পুষতে পারেন ঘরে। খুব সুন্দর সময় কাটবে।
অবসরে গান শুনুন, ভালো বই পড়ুন, মুভি দেখুন। যদি হস্তশিল্পের হবি থাকে সেটাও করতে পারেন।
ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ুন সময় পেলেই।
বাগান করার শখ থাকলে সেটাও করতে পারেন।
আপনার একাকিত্ব নিয়ে মন খারাপ করার কিছুই নেই।
বরং সময়গুলো এত আনন্দে, এত উচ্ছ্বলতার মাঝে কাটান যেন, অন্য সবাই আপনাকে রীতিমত ঈর্ষা করে।
২১ ডিসেম্বর, ২০১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।