ভাবতে ভাবতেই একসময় হারিয়ে যেতে চায় ভাবনার জগতে কয়েকদিন ধরেই মাথার ভিতর একটা জিনিস খুব ঘুরপাক খাচ্ছিল। লেখাটি আমি সকল নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই লিখছি। মাঝে মাঝে আমার কাছে মনে হয় নারীরা কি সত্যিকার অর্থেই পুরুষের চেয়ে অবহেলিত ? আমার কাছে এই জিনিসটা প্রথম খটকা লাগে দুটো বাক্যের মধ্য দিয়ে, যা মাঝে মাঝেই আমি শুনতে পাই। বাক্য দুটি হল নারীদের তাদের ন্যায্য অধিকার দিতে হবে, আরেকটি হল নারী-পুরুষ সমান অধিকার। কিন্তু আমার কাছে খটকা লাগে তখনই যখন দেখি তারা একই সাথে দুটো দাবি আদায় করতে গিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার পাচ্ছে।
যেমন আমরা যদি পাবলিক বাস গুলোর দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাই নারীদের জন্য ৯ টি আসন সংরক্ষিত যা তাদের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু এই প্রসঙ্গেই যদি বলি নারী-পুরুষ সমান অধিকার তাহলে পুরুষদের জন্যও তো ৯ টি সংরক্ষিত আসন থাকা ঊচিত। ঊচিত নয় কি ? অনেক সময় দেখা যায় মহিলা সিট খালি থাকা সত্বেও অন্যান্য সিটগুলো মহিলারা দখল করে থাকে অগত্যা পুরুষদেরকে বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। যেমন ঊদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি একটি মহিলা সিট খালি আছে কোন এক স্টপেজ থেকে মা-মেয়ে ঊঠলেন, দেখা যায় তাদের কেঊই ঐ একটি সিটে না বসে অন্য দুটি সিটে বসে পড়ে তখন একটি সিট খালি থাকা সত্বেও একজন পুরুষকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। এখন Sacrifice এর ব্যাপারে আসি।
এই ব্যাপারটিতেও তারাই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এই ঊদাহরণ থেকেই আসি। আমি বলছি না যে মহিলা সিটগুলোতে কখনও কোন পুরুষ বসে না। হ্যাঁ, বসে কিন্তু যখন কোন মহিলা আসে তখন তাকে সেই আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। বিশেষ কয়েকটি গোত্র এই কাজটি করে না, যারা মানুষের ভিতর পড়ে না।
অনেক সময় অনেক ভদ্রলোক আছেন যারা নিজেদের আসনটি ছেড়ে দিয়ে একজন মহিলাকে Sacrifice করেন। এটাও ভাল, কিন্তু উপরের ঊদাহরণ এর মা-মেয়ে কি কোন পুরুষকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখলে তাদের সংরক্ষিত আসনের ঐ সিটটিতে গিয়ে পুরুষটিকে আসন গ্রহণ করার সুযোগ দেন ? আমি কখনও এইরকম দৃশ্যের সম্মুখীন হয়নি। তো এখানে কি নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার এবং পুরুষের সমান অধিকার দুটোই ভোগ করছেন না ? যাক এবার আরেকটি ঊদাহরণ দেখি। এখন আসি বিভিন্ন টিকেট কাঊন্টারের টিকেটের লাইনে। দেখা যায় নারীদের জন্য আলাদা লাইন আর পুরুষদের জন্য আলাদা।
স্বাভাবিকভাবেই পুরুষদের লাইনগুলো অনেক বড় হয়ে থাকে অগত্যা নারীরা এর সুফল ভোগ করেন। দেখা যায় যেখানে পুরুষরা অনেক সময় হয়তো দাঁড়িয়ে থেকেও একটি টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারেন না সেখানে নারীরা অল্প সময় দাঁড়িয়ে থেকেই টিকেটের ব্যবস্থা করে ফেলেন। তো এখানে কেন তারা সম অধিকারের কথা বলেন না ? তারা কি পুরুষদের সাথে একই লাইনে দাঁড়াতে পারেন না ? এর চরম একটি ঊদাহরণ হিসেবে আমি দিতে পারি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১ এর টিকেট সংগ্রহের লাইন। এখন একটু নজর দিই বিভিন্ন ধরনের কোঠার দিকে। বাংলাদেশে অনেক পরীক্ষা, অনেক চাকুরীর ব্যাপার-স্যাপারে অনেক ধরনে কোঠা দেখা যায়।
মুক্তিযোদ্ধা কোঠা, প্রতিবন্ধি কোঠা, মহিলা কোঠা ইত্যাদি। কিন্তু পুরুষদের জন্য কখনো কোন কোঠা আমি দেখিনি যেটার নাম পুরুষ কোঠা। এখানেও তারা তাদের দুটোরই সুবিধা ভোগ করেন। তারা তাদের নিজস্ব কোঠা থেকেও সুযোগ পান আবার সবার জন্য উন্মুক্ত কোঠা থেকেও সুযোগ পান। যেখানে নারী-পুরুষ একই সাথে পাশাপাশি বসে ইট ভাঙ্গার কাজ বা মাটি কাটার কাজ করতে পারে সেখানে কেন নারী-পুরুষ একই সাথে তাদের মেধার সমান বিচার করতে পারেন না ? আমি বলতে চাচ্ছি কেন তাদের জন্য আলাদা কোঠা থাকতে হবে ? ঊদাহরণ হিসেবে আমি বলতে পারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য আলাদা কোঠা আছে।
আর আমার প্রশ্ন এটাও যে আমরা লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে অনেক কথা বলে থাকি তো এটাকি লিঙ্গ বৈষম্যের ভিতর পড়েনা ? আসলে আমার মনে হয় আমরা ইদানীংকার সময়ে লিঙ্গ বৈষম্যের চেয়ে মানুষ বৈষম্যটা বেশি করছি। তা না হলে কেন নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি Sacrifice পেয়ে থাকে। তারা কি অন্য এক জাতের মানুষ আর আমরা কি আলাদা ? আমার কথা হল নারীদের ন্যায্য অধিকার বা সমান অধিকার কোনটারই দরকার নেই। আসলে দরকার মানুষ হিসেবে মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা। আর সেটা যদি না হয় তা হলে এই লিঙ্গ বৈষম্য কখনই সমাজ থেকে যাবে না।
মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করলেই দেখা যাবে নারীদের জন্য আলাদা কোন সিটের প্রয়োজন হবে না, প্রয়োজন হবে না নারীদের জন্য আলাদা টিকেটের লাইন বা আলাদা কোন কোঠা। তুমিও মানুষ আমিও মানুষ তুমি তোমার শ্রম, মেধা দিয়ে যতটুকু পাবে আমিও ততটুকুই পাব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।